Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

মুষ্টিমেয় ধনিক শ্রেণি ও সরকারের আশীর্বাদপুষ্টদের জন্য বাজেট: ড. আব্দুল মঈন খান

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ জুন, ২০২২, ৯:২৫ পিএম

২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। প্রস্তাবিত এই বাজটে দেশের মুষ্টিমেয় ধনিক শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষায় তৎপর হয়েছে বলে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, বর্তমান কঠিন সময়ের প্রেক্ষিতে বাস্তবতা বিবর্জিত একটি বাজেট। বাজেট সম্বন্ধে বৃহস্পতিবার মতামত জানতে চাইলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি একথা বলেন।

ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, জন প্রতিনিধিত্ববিহীন এই সরকার দেশের কোটি কোটি দরিদ্র মানুষের কোভিড পরবর্তী চরম মুল্যস্ফীতিজনিত দুঃসহ জীবনযাপন ও দৈনন্দিন সংগ্রামের বিষয়টি সম্পূর্ণ বিস্মৃত হয়ে এমন একটি বাজেট উপস্থাপন করেছে যা দেশের মুষ্টিমেয় ধনিক শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষায় তৎপর হয়েছে। অবাক হবার কিছু নেই, এতে করে লাভবান হবে সরকার সংশ্লিষ্ট একটি বিশেষ গোষ্ঠী। অন্যদিকে নতুন বাজেটের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে আরও চরম অবস্থায় পতিত হবে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী।

বাজেটের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, বাজেটের আকার বেড়েছে সন্দেহ নেই, কিন্ত এই ঢাউস বাজেটের যে দিকটি সরাসরি দেখা যায় না সেটা হচ্ছে, অবাধ মুদ্রা সরবরাহের বিষয়টি। কেউ জানে না, বাংলাদেশ ব্যাংক কত নতুন নতুন নোট ছাপিয়ে বাজার ছয়লাব করে দিচ্ছে, যার ফলশ্রুতিতে সম্পূর্ণ আমদানি নির্ভর অর্থনীতিতে জনগণের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। ইনফ্লেশন সরকারি হিসেবে ৬ শতাংশ এর কিছু ওপরে কিন্তু বাস্তবে সেটা ১২ শতাংশ, অর্থাৎ সরকারী হিসেবের দ্বিগুণ। বর্তমান বছরের বাজেটের ফলে এই পরিস্থিতি আরও নাজুক আকার ধারণ করবে। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে হয়, ডলারের বিপরীতে স্বল্পতম সময়ে টাকার মারাত্মক অবমূল্যায়ন ও দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক উর্দ্ধগতি জনজীবন দুর্বিষহ করে তুলছে। এই বাজেটে তার কোন সমাধান নেই।

তিনি বলেন, বাজেট ঘাটতি বিষয়টি লক্ষ্য করুন। ৩৬%, অর্থাৎ এক তৃতীয়াংশেরও বেশী। ফলে সরকারের দেশী বিদেশী ঋণ গ্রহণ ও পরিশোধের বিষয়টি নাইবা ব্যখ্যা করলাম। এর চাপও কিন্তু দরিদ্র জনগণের ওপরেই পড়বে। নতুন ট্যাক্স আরোপের বিষয়টি লক্ষ্য করুন। কর্পোরেট ট্যাক্স কমেছে, কিন্ত ট্যাক্স ফ্রী তিন লাখ টাকার সীমা এক টাকাও বাড়ে নি।

মঈন খান বলেন, দরিদ্র দেশের একটি বাজেটের মৌলিক দিক হল উন্নয়ন বাজেট বনাম রাজস্ব বাজেটের অনূপাত। আমরা দেখছি, একদিকে উন্নয়ন বাজেটের সিংহভাগ নিয়েছে ভৌত অবকাঠামোর মেগা প্রজেক্টগুলো। সাথে সাথে আশংকা হচ্ছে মেগা দুর্নীতির। কাজেই অধিকতর ব্যাখ্যায় না যাওয়াই হয়তো উত্তম। পাশাপাশি অনুন্নয়ন ব্যয় অথবা এখন যাকে অন্য নামে বলা হয় পরিচালনা ব্যয়, তার পরিমাণ ৪ লাখ কোটির ওপর। রাজনৈতিক সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রশাসন ও সাপোর্ট সিস্টেমকে খুশি রাখতে হবে তো !

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, বাজেটে বিরাট অংকের ভর্তুকি। লাখো কোটি টাকা। প্রশ্ন হচ্ছে, এগুলো কার পকেটে যায়? আমরা অতীতে দেখেছি, কিভাবে একই টেলিফোন নাম্বারে কতবার প্রণোদনা যায়, কার কাছে যায় ! এগুলো এখন মানুষের কাছে দিবালোকের মত স্পষ্ট।

এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন আসবে, বিগত দুই বছরে যে লাখো হাজার কোটি টাকার ওপরে প্রণোদনা দেয়া হয়েছিল সে টাকা গেল কই? তার মধ্যে একটি টাকাও কি পরিশোধ করা হয়েছে ? জনগণ জানতে চায়। শুনি, রফতানি না কি হু হু করে বাড়ছে। তাহলে প্রণোদনার টাকা পরিশোধ হচ্ছে না কেন? কারা কারা এই প্রণোদনা পেয়েছে ও কি পরিমাণ পরিশোধ করেছে, তার ওপরে সরকারের শ্বেতপত্র চায় জনগণ। এক কথায় বলেতে হয়, এ বাজেট জনগণের জন্য নয়, এবারের বাজেট বর্তমান কঠিন সময়ের প্রেক্ষিতে সম্পূর্ণ একটি বাস্তবতা বর্জিত বাজেট, কেবলমাত্র সরকারের আশীর্বাদপুষ্টদের জন্যই করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ