Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সশস্ত্র বাহিনীকে কখনো ক্ষমতা দখলের হাতিয়ার বানায়নি আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২২ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:২১ এএম, ২২ নভেম্বর, ২০১৬

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, তার দল আওয়ামী লীগ কখনো সশস্ত্র বাহিনীকে ক্ষমতা দখলের হাতিয়ার বানায়নি। গতকাল সোমবার ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস’ উপলক্ষে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে তিনি এ কথা জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে সশস্ত্র বাহিনীর কল্যাণে কাজ করেছে। আমরা কখনোই সশস্ত্র বাহিনীকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে ক্ষমতায় যাইনি। সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে কাজ করছি। সুসজ্জিত আধুনিক সশস্ত্র বাহিনী গঠনে কাজ করেছে আওয়ামী লীগ। বক্তৃতার শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করেন একই সঙ্গে স্মরণ করেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যসহ মহান মুক্তিযোদ্ধাদের, যাদের ত্যাগ ও বীরত্বগাঁথায় বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য ছিল একটি দক্ষ ও চৌকস সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলা। সে কারণেই স্বাধীনতা-উত্তর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের আর্থিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও তিনি গভীর প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টি নিয়ে একটি আধুনিক সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন।
এসময় তিনি সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু সরকারের নানা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু সশস্ত্র বাহিনীর যে সুদৃঢ় ভিত্তি রচনা করে গেছেন তারই ওপর দাঁড়িয়ে আজ আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর পেশাদারিত্ব এবং কর্মদক্ষতার পরিচিতি দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিম-লে স্বীকৃত ও প্রশংসিত। আন্তর্জাতিক শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা বিশ্ব দরবারে ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেছে।
সশস্ত্র বাহিনী আজ তাদের নানাবিধ জনসেবামূলক কর্মকা-ের জন্য জনগণের নির্ভরতা অর্জন করছে। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলাসহ উদ্ধার তৎপরতা ও অন্যান্য অভ্যন্তরীণ সংকট নিরসনকল্পে সশস্ত্র বাহিনী দেশপ্রেমের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী দেশের বিভিন্ন স্থানে রাস্তাঘাট ও অবকাঠামো নির্মাণ, আশ্রয়ন প্রকল্পসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা এবং জাটকা নিধন রোধসহ বিভিন্ন জাতি গঠনমূলক ও আর্থসামাজিক উন্নয়ন কর্মকা-ে অসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করে চলেছে। এছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে সশস্ত্র বাহিনী উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে। এসব কল্যাণমুখী ও জনহিতকর কর্মকা-ের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সশস্ত্র বাহিনীকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী।
সশস্ত্র বাহিনীকে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষম করে তোলার জন্য সরকার কার্যকরী পরিকল্পনা নিয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিরক্ষা বাহিনীকে শক্তিশালী করার লক্ষ্য নিয়ে সেনা, নৌ এবং বিমান বাহিনীকে দেশে ও বিদেশে উন্নততর প্রশিক্ষণ প্রদানসহ আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন যুদ্ধসরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত করার প্রয়াস অব্যাহত আছে। বর্তমান সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সুদৃঢ়করণ এবং সেনাবাহিনীর উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে নতুন পদাতিক ডিভিশন ও বেশকিছু ব্রিগেড প্রতিষ্ঠা করেছে। এ সরকারের চলতি মেয়াদে সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ, অস্ত্র, সরঞ্জামাদি ও জনবলের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধন করা হয়েছে।” প্রধানমন্ত্রী এসময় সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর আধুনিকায়ন ও উন্নয়নে নানা প্রকল্প ও কর্মসূচির কথা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। পদ্মা সেতুর আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ এবং নিরাপত্তার জন্য একটি কম্পোজিট ব্রিগেড গঠন করা হয়েছে। এছাড়া মিঠামইনে একটি রিভারাইন ব্রিগেড প্রতিষ্ঠার কাজও শুরু হয়েছে। অতি শীঘ্রই দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে লেবুখালিতে একটি পদাতিক ডিভিশন প্রতিষ্ঠা লাভ করবে দেশের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ব্রিগেড পর্যায়ে স্পেশাল ফোর্স গঠনের বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে।
আমাদের নৌবাহিনীর সদস্যরা প্রতিনিয়ত অনেক প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে আমাদের এই সমুদ্র এলাকার নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধান করছে। এরই স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ নৌবাহিনী এ বছর স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে নৌবাহিনীতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক যুদ্ধজাহাজ, মেরিটাইম হেলিকপ্টার এবং মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফট সংযুক্ত হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ নৌবাহিনী একটি কার্যকরী ত্রি-মাত্রিক নৌবাহিনীতে পরিণত হয়েছে। খুব শিগগির নৌবাহিনীতে কমিশনিং হতে যাচ্ছে বহু আকাক্সিক্ষত দু’টি সাবমেরিন। এই অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে নৌবাহিনী একটি দক্ষ ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে রূপান্তরিত হবে, যা আমাদের সামগ্রিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় বিশেষ অবদান রাখবে।
আমাদের সরকার বিমান বাহিনীকে একটি যুগোপযোগী ও দক্ষ বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য চতুর্থ প্রজন্মের অত্যাধুনিক মিগ-২৯ যুদ্ধবিমানসহ পরিবহন বিমান এবং উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন আকাশ প্রতিরক্ষা র‌্যাডার সংযোজন করে। সাম্প্রতিককালে আমাদের সরকার বিমান বাহিনীতে যুক্ত করেছে এফ-৭ বিজি যুদ্ধবিমানসহ হেলিকপ্টার ও অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র। ফোর্সেস গোল-২০৩০ এর আওতায় ইতোমধ্যেই বিমান বাহিনীতে সংযোজিত হয়েছে নতুন নতুন ইউনিট, বৃদ্ধি পেয়েছে জনবল। অনুমোদিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু এ্যারোনটিক্যাল সেন্টার এবং পূর্ণাঙ্গ ঘাঁটি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে বঙ্গবন্ধু ও কক্সবাজার বিমান ঘাঁটি। এছাড়া বিমান বাহিনীর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উন্নততর এবং যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ সুনিশ্চিত করার জন্য সংযোজিত হয়েছে অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ বিমান ও হেলিকপ্টার। এর পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়নও চলমান রয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের জীবনমানের উন্নয়নে সবই করা হবে
 এদিকে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনমানের উন্নয়নে যা যা করা প্রয়োজন, তা সবই করা হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ বাংলাদেশকে যে গড়ে তুলতে পারছি, বাঙালি জাতি হিসেবে বিশ্বে যে সম্মান আমরা পাচ্ছি; এখানে আপনাদের বিরাট অবদান রয়েছে। আপনাদের মহান আত্মত্যাগের মাধ্যমে আজ দেশ স্বাধীন হয়েছে। কাজেই আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের কল্যাণার্থে যা যা করণীয় আমি তা করে যাব।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি জানি আপনজন হারানোর বেদনা কত কষ্টের। সেই বেদনা বুকে নিয়েও দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা আপনজন হারিয়েছেন বা পঙ্গু হয়ে আছেন বা যারা অবদান রেখেছেন, তাদেরকে সবসময় সন্মানিত হিসেবে গণ্য করি এবং তাদের কল্যাণে কাজ করে যাওয়া কর্তব্য হিসেবে মনে করি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অভূতপূর্ব অবদান কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করা আমাদের জাতীয় দায়িত্ব। এ জন্য মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের ব্যাপারে আমাদের সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাহফুজুর রহমান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা দেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী এ কে এম মোজাম্মেল হক, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মুহাম্মাদ শফিউল হক, নৌবাহিনী প্রধান এ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আবু এসরার এবং উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনা বলেন, তিনি স্বজনহারাদের দুঃখ, বেদনা বোঝেন। স্বজনহারাদের বেদনা বুকে ধারণ করেই এদেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির বীর সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক মর্যাদায় পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে এবং তাঁদের অবদানের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি দিতে আমাদের সরকার নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের উত্তরাধিকারীদের জন্য বর্তমান সরকার উল্লেখযোগ্য অনেক সুযোগ-সুবিধার বাস্তবায়ন করেছে। অনেক প্রস্তাব ও প্রকল্প আমাদের সক্রিয় বিবেচনাধীন আছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানী ভাতার পরিমাণ নয়শ’ টাকা থেকে পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি করে দশ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভাতা ভোগীর সংখ্যা এক লাখ থেকে দুই লাখে উন্নীত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ৬৭৬ জন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা জানুয়ারি ২০১৬ সাল থেকে যথাক্রমে বীরশ্রেষ্ঠদের জন্য ত্রিশ হাজার টাকা, বীর উত্তমদের জন্য পঁচিশ হাজার টাকা, বীর বিক্রমদের জন্য বিশ হাজার টাকা এবং বীর প্রতীকদের জন্য পনের হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। বিভিন্ন শ্রেণির যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারবর্গের মাসিক রাষ্ট্রীয় সম্মানী ভাতা সর্বনি¤œ আঠার হাজার টাকা হতে সর্বোচ্চ ত্রিশ হাজার টাকা পর্যন্ত হারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে শহীদ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ভাতা, চিকিৎসা এবং রেশন সামগ্রী বাবদ দুই হাজার চার শত সাতাশি কোটি পনের লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রবাহ মুক্তিযোদ্ধাদের পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে জাগ্রত করার লক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের মেধাবী সন্তান ও তাঁদের পরবর্তী প্রজন্মের লেখাপড়ায় সহায়তা এবং উৎসাহ প্রদানের জন্য বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট ‘বঙ্গবন্ধু ছাত্র বৃত্তি’ চালু করেছে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের উপর দেশের অভ্যন্তরে ‘পিএইচডি’ করার জন্য পূর্ণ বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের কৃতী সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসনের জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘ভূমিহীন ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বাসস্থান নির্মাণ’ প্রকল্পে ২২৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পটিতে ২,৯৭১টি বাসস্থান নির্মাণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে ২,৪৯৩টি ইউনিট নির্মাণের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১,৭২২টি ইউনিটের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। ৬৯৪টি ইউনিটের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।
‘জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি জেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ভবন নির্মাণ করা হবে। ইতোমধ্যে ৪৩টি জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন এবং হস্তান্তর হয়েছে।
তিনি বলেন, জুলাই ২০১৩ হতে মোট ১০৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪২২টি উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটির আওতায় ইতোমধ্যে ১৬১টি মুক্তিযোদ্ধা কমপেক্স ভবনের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। ৬৯টি উপজেলায় নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। অবশিষ্ট ভবনসমূহের নির্মাণ শুরু করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অভূতপূর্ব অবদান কৃতজ্ঞতার সাথে স¥রণ করা আমাদের জাতীয় দায়িত্ব। এ জন্য মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের ব্যাপারে আমাদের সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আধুনিক পদ্ধতিতে মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশের জন্য ডাটাবেইজ কর্মসূচি গ্রহণ করব। এ ডাটাবেইজ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হলে একটি নির্ভুল মুক্তিযোদ্ধা তালিকা তৈরি করে জাতিকে উপহার দেওয়া সম্ভব হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সরকার বহির্বিশ্বের যে সকল বরেণ্য রাষ্ট্রনায়ক, রাজনীতিবিদ, দার্শনিক, শিল্পী-সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, বিশিষ্ট নাগরিক বাংলার মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছেন পর্যায়ক্রমে তাঁদের ‘বাংলাদেশ স্বাধীনতা সম্মাননা’, ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ এবং ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ প্রদান করার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ গত ১৬ সেপ্টে¤¦র ২০১৬ তারিখে কানাডার প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে ট্রুডোকে উক্ত সম্মাননা প্রদান করা হয়। তাঁর পক্ষে কানাডার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর সন্তান জাস্টিন ট্রুডো এ সম্মাননা গ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সময়ের আবর্তে অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা আজ বয়সের ভারে ভারাক্রান্ত। সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদযাপনকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মান জানানোর ক্ষেত্রে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী যে উদ্যোগ প্রতিবছর নিচ্ছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এ জন্য সশস্ত্র বাহিনীকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। দুস্থ ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা এবং তাঁদের পরিবারের জন্য আর্থিক সহায়তা, পুনর্বাসন, চিকিৎসা সহায়তা প্রদান ও আবাসস্থলের সংস্কারসহ বিভিন্ন কল্যাণমুখী কাজ আমাদের সশস্ত্র বাহিনী ভবিষ্যতেও করে যাবে বলে আমার দৃঢ়বিশ্বাস।
সশস্ত্র বাহিনীর খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে পরিচয়পত্র বিতরণ
 প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বীরত্ব খেতাবপ্রাপ্ত জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে এই প্রথমবারের মতো পরিচয়পত্র বিতরণ করেছেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর বীরত্ব খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে পরিচয়পত্র বিতরণ করে তিনি আনন্দিত। এই পরিচয়পত্র ব্যবহার করে তারা রেল, বিআরটিসি বাস ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের ফেরিতে বিনা ভাড়ায় ভ্রমণের সুযোগ পাবেন।
এর মাধ্যমে তারা বাংলাদেশ বিমানের আন্তর্জাতিক রুটে একবার বিদেশ ভ্রমণ এবং একই এয়ারলাইন্সে জীবনে একবার হজ ও ওমরাহ করার সুযোগ পাবেন। তারা বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ও ফেরিতে ভিআইপি কক্ষ ও কেবিন সুবিধা পাবেন। এছাড়া এই পরিচয়পত্রের মাধ্যমে তারা স্বাস্থ্যসেবার সুযোগও পাবেন। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ৭ বীরশ্রেষ্ঠ’র উত্তরাধিকার ও অন্যান্য খেতাবপ্রাপ্তগণের মাঝে সম্মানীর চেক এবং শাল ও মোবাইল ট্যাবসহ উপহার বিতরণ করেন। তিনি যুদ্ধ ও শান্তির সময় বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য সেনাবাহিনীর ৫ কর্মকর্তাকে বাহিনী পদক ও অসামান্য সেবা পদক প্রদান করেন।
সশস্ত্র বাহিনীর শহীদ সদস্যদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন
 প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০১৬ উপলক্ষে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর শহীদ সদস্যদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী সোমবার সকালে ঢাকা সেনানিবাসের শিখা অনির্বাণে (শিখা চিরন্তন) পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে এই শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের আত্মদানকারী শহীদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। সেনা, নৌ এবং বিমান বাহিনীর একটি চৌকষ দল এসময় প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন এবং বিউগলে করুণ সুর বেজে উঠে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্ব পালনরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরপর শিখা অনির্বাণ প্রাঙ্গণে রাখা দর্শনার্থী বইয়ে স্বাক্ষর করেন। এর আগে, প্রধানমন্ত্রী শিখা অনির্বাণে পৌঁছলে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নিজামউদ্দিন আহমদ, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আবু এসরার এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের (এএফডি) প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাহফুজুর রহমান তাকে অভ্যর্থনা জানান।
পুষ্পস্তবক অর্পণের অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে (এএফডি) যান। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানগণ সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তিনি এএফডি পৌঁছলে এএফডি’র ডাইরেক্টরস জেনারেলগণ এবং পিএসও প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান।



 

Show all comments
  • আবির ২২ নভেম্বর, ২০১৬, ১:০০ এএম says : 0
    বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অভূতপূর্ব অবদান কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করা আমাদের জাতীয় দায়িত্ব।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ