পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক দিয়াজ ইরফান চৌধুরী (২৭) মৃত্যু নিয়ে রহস্যের জাল সৃষ্টি হয়েছে। গত রোববার রাত ১০ টার দিকে ক্যাম্পাসের ২ নাম্বার গেইট এলাকায় ভাড়া বাসায় সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝোলানো অবস্থায় তার লাশ পাওয়া যায়। পরিবারের দাবি, পরিকল্পিতভাবে খুন করে দিয়াজের লাশ সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। এদিকে চিবির সূবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী জমকালো অনুষ্ঠানের আমেজ শেষ না হতেই এই ঘটনায় ক্যাম্পাসে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
সূত্রে জানা যায়, পাঁচতলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন দিয়াজ।
তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও মার্কেটিং বিভাগের ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। বাবা মৃত মুক্তিযোদ্ধা সারওয়ার কামাল শাহ আমানত হলের কর্মকর্তা ছিলেন। তার মামা রাশেদ বিন আমীন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। মা বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হলের স্টাফ হিসেবে এখনো কর্মরত আছেন। তিন বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে দিয়াজ মেঝো। দিয়াজের বাড়ি ফটিকছড়ি হলেও বাবা-মায়ের চাকরি সূত্রে চবি ক্যাম্পাসেই বেড়ে উঠা। তিন বর্তমানে চবিতে এমফিল করছিলেন। তবে ২৯ অক্টোবর চবি ছাত্রলীগের আন্তঃকোন্দল ও টেন্ডারবাজির জের ধরে দিয়াজের বাসা ভাঙচুর হয়। এর পর থেকে দিয়াজ সেখানে একাই থাকতো। মা ও ছোট বোন থাকতো ক্যাম্পাসে নানার বাসায়।
এদিকে দিয়াজের মৃত্যুর খবর পেয়ে রোববার রাতেই ঘটনাস্থলে যান পুলিশসুপার নুরে আলম মিনা ও অতিরিক্ত পুলিশসুপার (উত্তর) মশিউদ্দৌলা রেজাসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সবার উপস্থিতিতে রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে সিলিং ফ্যান থেকে তার ঝুলন্ত লাশ নামিয়ে ময়না তদন্তের জন্য লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে (চমেক) নেয়ার সময় উপস্থিত নেতাকর্মীদের তোপের মুখে রাত ১টার দিকে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আফসানা বিলকিস বলেন, ‘দিয়াজের শরীরের তিন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। গলার উভয় পাশে আঁচড়ের চিহ্ন আছে। তবে বাম পাশে আঁচড়ের পরিমাণ বেশি। হাতের কব্জিতে ও পায়েও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তবে ময়নাত দন্তের আগে নিশ্চিতভাবে এগুলো আঘাতের চিহ্ন কি না তা বলা যাচ্ছে না।’
এদিকে গতকাল সকালে চমেক হাসপাতাল মর্গে দিয়াজের লাশ নিতে এসে সাংবাদিকদের কাছে দিয়াজের মামা রাশেদ আমিন চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, তাকে পরিকল্পিতভাবে খুন করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যেসব শিবির নেতাকর্মী জড়িত এবং যারা এর আগে দিয়াজের বাসায় হামলা চালিয়েছে, তারাই পরিকল্পিতভাবে তাকে খুন করে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে দিয়েছে।
রাশেদ আমিন চৌধুরী বলেন, ছাত্রলীগের একাংশের রাজনীতিতে শিবির ঢুকে পড়ায় ন্যক্কারজনক ও নজিরবিহীন এ ঘটনা ঘটেছে।
দিয়াজের মা জোবায়দা খানম চৌধুরী ছেলে হারিয়ে শোকে বলতে থাকেন, ‘আমার ঘরে যখন হামলা করে, প্রশাসনের মদদে ভাঙচুর-লুটপাট করে, তখন হাটহাজারী থানা পুলিশের ওসি বেলাল মামলা নেননি। তারা পরিকল্পিতভাবে আমার সন্তানকে মেরেছে।
এ ঘটনায় দিয়াজ এর দুলাভাই সরোয়ার আলম বলেন, সাধারণত ফাঁসদিয়ে আত্মহত্যাকারীর চোখ খোলা থাকে এবং মুখ দিয়ে ফেনা বের হয়। কিন্তু দিয়াজের ক্ষেত্রে চেহারা ছিল স্বাভাবিক। মুখে ফেনা নেই, চোখ ছিল বন্ধ। জিহ্বা বের করা ছিল না। পা দাঁড় করানো ছিল বালিশে। ঠেঁস দিয়ে দাঁড় করানো ছিল শরীর। গলায় ছিল মোটা চাদর। এমন চাদর পেঁচিয়ে কেউ আত্মহত্যা করতে পারে কি না- সেই প্রশ্ন করেন। তিনি বলেন, এছাড়া যেটা দিয়ে ফাঁস লাগানো হয়, সেটা মাথার ঠিক পেছনে থাকার কথা। কিন্তু দিয়াজের গলায় থাকা ছাদর তার কান বরাবর অনেকটা মুখের সামনেই ছিল। এ থেকে কি বুঝা যায় না দিয়াজকে হত্যা করা হয়েছে।
হাটহাজারী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মুজিবুর রহমান জানান, ‘এটি আত্মহত্যা না হত্যা এখনই বলা যাচ্ছে না। পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট আসার পর বলা যাবে। আমরা পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশী নিয়ে বন্ধ দরজাটি ভেঙে ভেতরে ঝুলন্ত লাশটি উদ্ধার করি। তদন্ত চলছে, এর চেয়ে বেশি কিছু এখনই বলতে পারছি না।
এদিকে দিয়াজের মৃত্যুর বিচার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়গামী সকল ট্রেন আটকে বিক্ষোভ করেছে তার অনুসারীরা। সোমবার সকাল আটটায় ক্যাম্পাসগামী প্রথম ট্রেনটি হাটহাজারীর ফতেয়াবাদ এলাকায় পৌঁছালে তারা আটকে দেয়। এরপর পরবর্তী ট্রেনও একই স্থানে পৌঁছালে তারা আটকে দেন। ফলে কোনো ট্রেনই ক্যাম্পাসে পৌঁছাতে পারেনি। একই ঘটনায় হাটহাজারী সড়কের বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক এলাকায়ও অবরোধ করে তারা। এর আগে নগরী প্রবর্তক মোড়ে সড়ক অবরোধ করে তারা। এসময় তারা দিয়াজের হত্যা করা হয়েছে দাবি করে বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকে।
নিহত দিয়াজ ইরফান চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিতে সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী ছিলেন। ময়না তদন্তের আগে চমেক হাসপাতালে দিয়াজের মরদেহ দেখতে না যাওয়ায় মেয়রের প্রতিও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা।
অন্য দিকে প্রায় সাত ঘণ্টা লাশ চমেক হাসপাতালের মর্গে রাখা হলেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপুও সেখানে যাননি। দিয়াজবিরোধী টিপু গ্রুপের কোনো নেতাকর্মীও সেখানে যাননি। এমনকি লাশ উদ্ধারের সময় ঘটনাস্থলেও কেউ যাননি।
লাশ চমেক হাসপাতালের মর্গ থেকে বের করার আগে দিয়াজের মামা রাশেদ আমিন চৌধুরী চিৎকার করে বলেন, কোনো আওয়ামী লীগ নেতার দরকার নাই। কাউকে আমরা দিয়াজের লাশ ধরতে দেব না। দিয়াজকে কারও ধরার দরকার নাই।
এদিকে গতকাল বাদ আসর দিয়াজের জানাযা নামাজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হওয়ার পর ক্যাম্পাসের কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।
উল্লেখ্য, প্রায় শত কোটি টাকার টেন্ডার নিয়ে এর আগে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে ছাত্রলীগ নেতা মাহবুব শাহারিয়ার শাহীন, কুঁপিয়ে বেধড়ক জখম করা হয় সহ-সভাপতি তায়েফুল হক তপুকে। সর্বশেষ টেন্ডারবাজির শিকার হলেন দিয়াজ ইরফান চৌধুরী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।