Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সুগন্ধার ভাঙনে বীর শ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু ও সংযোগ সড়ক ভয়াবহ ঝুঁকিতে

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২২ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বরিশাল-ফরিদপুর-ঢাকা জাতীয় মহাসড়কের দোয়ারিকাতে ‘বীর শ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেত’ু ও এর সংযোগ সড়কটি সুগন্ধা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষায় সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় ওবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালরে দীর্ঘসূত্রিতার অবসান হচ্ছে না। তবে দীর্ঘ কালক্ষেপণের পরে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় সেতুটি রক্ষায় নিজস্ব তহবিল থেকে আপতকালীন ব্যবস্থা হিসেবে ভাঙন কবলিত অতি ঝুঁকিপূর্ণ প্রায় ৬০ মিটার এলাকায় জিও ব্যাগ ডাম্পিং শুরুর লক্ষে ইতোমধ্যে দরপত্র আহ্বান করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড গতবছর যাবত সেতু ও অ্যাপ্রোচ রোড রক্ষায় কয়েক দফায় প্রাক্কলন জমা দিলেও আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্তের পরও স্থায়ীভাবে ভাঙন রক্ষায় এখনো কোনো সুরাহা হয়নি। এমনকি গতবছর পানি সম্পদমন্ত্রী সরেজমিনে ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে প্রতিরোধ কার্যক্রম শুরুর নির্দেশ প্রদানের পরেও তহবিলের কোনো সংস্থান হয়নি ।
ফলে পানি উন্নয়ন বোর্ড দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সাথে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ রক্ষাকারী এ সেতুটি রক্ষায় কোনো কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি। যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ইতোপূর্বে ‘জলবায়ু পরিবর্তন ঝুকি তহবিল-সিসিটিএফ’ থেকে অর্থ বরাদ্দের লক্ষে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করলেও মন্ত্রী ঐ খাত থেকে সেতুটি রক্ষায় কোনো তহবিল বরাদ্বের বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন ।
কুয়েত উন্নয়ন তহবিলের ১৪০কোটি টাকায় ২০০৩সালে বরিশালÑফরিদপুরÑঢাকা মহাসড়কের শিকারপুর ও দোয়ারিকাতে ‘মেজর জলিল সেতু’ ও ‘বীর শ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু’ দুটি নির্মিত হয়। কিন্তু নির্মাণ কাজ শেষ হবার  কয়েক বছরের মধ্যেই সুগন্ধা নদী গতিপথ পরিবর্তন করে দোয়ারিকাতে ‘বীর শ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতুটির বরিশাল প্রান্তের সংযোগ সড়কের অদূরে আঘাত হানতে শুরু করে। প্রমত্তা সুগন্ধা নদীর ভাঙনে ইতোমধ্যে সেতুটির উত্তর পাশের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মসজিদ নদী কিনারায় হেলে পড়েছে।  জনগুরুত্বপূর্ণ এ সেতুটির ডান পাশের ‘ওয়েভ প্রটেকশন ড্যাম’ এবং সেতুটির বরিশাল প্রান্তের এবাটমেন্ট প্রটেকশন-এর প্রায় পুরোটাই নদী গর্ভে চলে গেছে। এমনকি সুগন্ধা ইতোমধ্যে সেতুটির বরিশাল প্রান্তের সংযোগ সড়কের ১৫ মিটারের মধ্যে আঘাত হানতেও শুরু করেছে।
কিন্তু এর পরেও সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সেতুটি ও এর সংযোগ সড়ক রক্ষায় বাস্তব পদক্ষেপ খুব জোড়াল নয়। অথচ ২০১৪-এর ফেব্রুয়ারিতে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে সুগন্ধা নদীর ভাঙন থেকে মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু রক্ষায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল। বৈঠকে এ লক্ষ্যে প্রণীত প্রকল্পটি ‘ডিপোজিট ওয়ার্ক’ হিসেবে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক বাস্তবায়নের পাশাপাশি আসন্ন বর্ষার আগে সেতুটির উত্তর পাশের বিধ্বস্ত ওয়েভ প্রটেকশন এলাকার প্রায় ৩শ মিটার ভাঙন প্রতিরোধে জিও ব্যাগ ফেলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ড ঐ অংশের প্রায় ৭৬০ মিটার এলাকায় জিও টেক্সটাইলসহ সিসি ব্লক ফেলে ভাঙন প্রতিরোধে কারিগরি প্রস্তাব দাখিল করে। তবে বর্ষা আসন্ন হওয়ায় সিসি ব্লক তৈরি করে তার আগে ভাঙন কবলিত এলাকায় ফেলা সম্ভব হবে না বিধায় জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধের সিদ্ধান্ত হয় আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায়। এজন্য জরুরি ভিত্তিতে  ২ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হলে সভায় তা অনুমোদনও করা হয়।  
সে অনুযায়ী ২০১৫-এর জুনে সড়ক অধিদফতর থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ১ কোটি টাকা প্রদান করে ভাঙন প্রতিরোধ কাজ শুরু অনুরোধ করা হলেও বর্ষা মওসুম শুরুর কারণে বোর্ড কোনো ঝুঁকি নিতে রাজি হয়নি। ফলে সে অর্থ ফেরত যায়। গত বছরও পুনরায় পূর্বের সভার সিদ্ধান্তসমূহ সড়ক অধিদফতরকে জানিয়ে ২ কোটি টাকা বরাদ্বের অনুরোধ জানানো হলেও তহবিল বরাদ্দ নিয়ে সড়ক অধিদফতর খুব একটা না এগালেও আপতকালীন পদক্ষেপ হিসেবে সড়ক অধিদফতর নিজেরাই অস্থায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে ভাঙন কবলিত এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে নতুন করে ভাঙন রোধের কাজটি শুরু করতে যাচ্ছে। প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যায়ে সেতুটির পাশের ভাঙন কবলিত ৬০ মিটার এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলার কাজ করবে সড়ক অধিদফতর। আগামী জানুয়ারিতে এ কাজ শুরুর ব্যাপারে আশাবাদী বরিশাল সড়ক বিভাগ।
অপরদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড দোয়ারিকার ভাঙন কবলিত সেতু এলাকায় স্থায়ীভাবে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে পানি গবেষণা প্রতিষ্ঠান-‘আইডব্লিউএমএর মাধ্যমে একটি সম্ভাব্যতা সমিক্ষা পরিচালনা সম্পন্ন করেছে। প্রতিষ্ঠানটি সেতু ও সংযোগ সড়ক  সুগন্ধা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষায় কয়েকটি সুপারিশমালা পেশ করার পরে পানি উন্নয়ন বোর্ড বিষয়টি নিয়ে সড়ক অধিদফতরের সাথে সভা আহ্বানের কথা জানিয়েছে। উভয় দফতরের বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীদের সমন্বয়ে সভায় আইডব্লিউএম-এর সুপরিশগুলোর মধ্যে এক বা একাধিক প্রস্তাব গ্রহণ করে সে লক্ষে বিস্তারিত নকশা ও প্রাক্কলন প্রস্তুত করবে বলে জানিয়েছে বোর্ডে বরিশাল অঞ্চলের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
সবকিছু ঠিকভাবে এগোলে, আগামী অর্থ বছরের শুরুতে বীর শ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতুর ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের বরিশাল ও অ্যান্ড এম বিভাগ-এর নির্র্বাহী প্রকৌশলী। তবে সেতুটির ভাঙন প্রতিরোধে ঠিক কত টাকা ব্যায় হবে তা বলতে পারেন নি তিনি।
তবে সব কিছুই নির্ভর করছে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণসহ অর্থ বরাদ্দের ওপর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ