পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
প্লাস্টিক খাতকে রপ্তানির চালিকা শক্তিতে সমৃদ্ধ করতে সরকার থেকে সব ধরণের সহায়তা প্রদান করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ। তিনি বলেন, প্লাস্টিক খেলনা শিল্প দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে এবং একই সাথে দেশে তার বিনিয়োগ বৃদ্ধি করছে। ক্রমবর্ধমান নতুন শিল্পের জন্য কর্মসংস্থানও বাড়ছে। এখন বিশ্বমানের খেলনা পণ্য উৎপাদন এবং ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি যে এই সেমিনারটি নতুন প্রযুক্তির সাথে খেলনা শিল্পের অপার সম্ভাবনার সূচনা করবে এবং মানসম্পন্ন পণ্য আপডেট করবে।
আজ (মঙ্গলবার) রাজধানীর সিডরাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও বর্তানীকারক এসোসিয়েশন (বিপিজিএমইএ) এবং বিশ্বব্যাংকের প্রজেক্ট ECAJ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এর যৌথ উদ্যোগে "Plastic Toy Industries of Bangladesh A Potential Sector for Export Diversification" শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাণিজ্য সচিব বলেন, কমপ্ল্যায়েন্স ইস্যু এখন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কমপ্ল্যায়েন্স ইস্যু না মানলে বাণিজ্যে সমস্যা হয়। তাই শিল্পগুলোকে আধুনিকায়ন করে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের উপযোগী করে তোলা দরকার। অন্যদিকে খেলনা রপ্তানি করতে হলে পণ্যের মান অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানের হতে হবে।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন, খেলনা প্লাস্টিক সেক্টরের একটি সাব-সেক্টর। এ উপখাতের উন্নয়ন দ্রুত হচ্ছে। দেশে খেলনার ব্যবহার বেড়েছে। উন্নত মানের খেলনা তৈরি করে বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত খেলনা রপ্তানির উচ্চ বৃদ্ধির হার ছিল। খেলনা রপ্তানির প্রবৃদ্ধি হল ২৪%। এই প্রবৃদ্ধি নিয়ে ২০০০ সালের জন্য অনুমান করা হচ্ছে খেলনা রপ্তানি প্রায় ৪৬৬.৩১ মিলিয়ন ইউএস ডলার হবে। এই বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে ২৮তম বৃহত্তম খেলনা রপ্তানিকারক দেশে দাঁড়াতে পারে। বিশ্বমানের মানসম্পন্ন পণ্য ত্বরান্বিত করতে আমাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে এবং নতুন বাজারে রপ্তানির চেষ্টা করতে হবে। জসিম উদ্দিন আরও বলেন, আমরা সবসময় সেক্টরের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। কাটামালের উপর ডিউটি কমানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। অন্যদিকে দেশীয় শিল্প রক্ষায় আমদানিকৃত ফিনিশড পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানোর দাবি করছি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও EC4J এর প্রকল্প পরিচালক মোঃ মনছুরুল আলম বলেন, খেলনার বাজার এক শতাব্দীরও বেশি হয়ে গেলেও বাংলাদেশে এখনো কোনো উল্লেখযোগ্য ব্র্যান্ডের খেলনা উৎপাদন শুরু হয়নি। সন্তুষ্টি এখনও নন-ব্র্যান্ড খেলনা রপ্তানিতে সীমাবদ্ধ। বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডের খেলনার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে চাইলে বিশ্বমানের মানসম্পন্ন পণ্য তৈরি করতে হবে। এ লক্ষ্যে সরকারকে অবকাঠামোগত সহযোগিতা, আনুষঙ্গিক আমদানিতে শুল্ক কমানোর মতো বেশ কিছু নীতিগত উদ্যোগ নিতে হবে।
বিপিজিএমইএ সভাপতি সামিম আহমেদ বলেন, খেলনা একটি ইনোভেটিভ পণ্য। উদ্যোক্তাগণ যখন খেলনা তৈরি করেন তখন প্রতিটি খেলনায় ভিন্নতা ও নতুনত্ব থাকে। বিপিজিএমইএ Department of Patent Design & Registration অফিস থেকে নতুন খেলনা আইটেমের পেটেন্ট রেজিস্ট্রেশন নিয়ে থাকে। আজ থেকে প্রায় ২৪ বছর পূর্বে ১৯৯৮ সাল থেকে এই কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৯৮ সালে মাত্র ৭টি খেলনা পণ্য পেটেন্ট রেজিস্ট্রেশন করা হয়। হিসাব মতে ১৯৯৯ সালে ১৫৫টি, ২০০০ সালে ৫৯টি, ২০০১ সালে ১২২টি পেটেন্ট রেজিস্ট্রেশন হয়। তেমনি ২০১৮ সালে ২৯৭টি, ২০১৯ সালে ২৩৪টি, ২০২০ সালে ১০৯টি, ২০২১ সালে ১৫৫টি এবং ২০২২ সালে অদ্যাবধি ৭১টি অর্থ্যাৎ সর্বমোট ২৫৫৮টি পেটেন্ট রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। খেলনা ও ক্রোকারিজ আইটেম এর রেজিস্ট্রেশন বাবদ অদ্যাবিধি সরকারি কোষাগারে ২,২৭,০৪,৩২৮ টাকা রাজস্ব হিসেবে প্রদান করা হয়েছে। খেলনা শিল্প উন্নয়নের জন্য সরকারের একান্ত সহযোগিতা কামনা করে বলেন, এ খাতের বিকাশের জন্য সরকারের সব রকমের নীতিগত সহায়তা দিতে হবে। যেহেতু খাতটি শ্রম নির্ভর এবং প্রচুর পরিমাণে মহিলা শ্রমিকের কাজের সুযোগ আছে তাই এই কাতে একদিন গার্মেন্টের মতো রফতানীতে বড় ভূমিকা রাখার সম্ভাবনা আছে। আজ থেকে ১ দশক আগেও ৯০% খেলনা আমদানি নির্ভর ছিল। বর্তমানে ১০% আমদানি হয়, ৯০% দেশে তৈরি হয়। তিনি বলেন, তৈরি খেলনা আমদানির ক্ষেত্রে ট্যরিফ মূল্য ৭.৫ ডলার অনেক কম, অন্তত পক্ষে ২০ ডলার কেজিতে নির্ধারণ করার আহ্বান জানাই।
মূল প্রবন্ধে বিল্ড (BUILD) এর সিইও ফেরদৌস আরা বেগম উল্লেখ করেন যে, বর্তমানে দেশে ৫,০৩০ প্লাস্টিক শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার মধ্যে ৯৮ শতাংশ এসএমই প্রতিষ্ঠান। প্রায় ১.৫ মিলিয়ন লোকবল এখাতের সাথে যুক্ত। ২০২০-২১ সালে প্লাস্টিক খাতের রপ্তানি ১৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে অস্ত্র সেক্টরে রপ্তানির পরিমাণ ১.০ বিলিয়ন ইউএস ডলার। তিনি বলেন, প্লাস্টিক খেলনা সেক্টর নন-ট্র্যাডিশনাল রপ্তানি খাত হিসাবে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। বিভিন্ন বয়সের শিশুদের বিনোদনের জন্য খেলনা ব্যবহার করা হয়। দিন দিন বাড়ছে চাহিদা। বাংলাদেশের খেলনা ইতিমধ্যে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় পা রেখেছে। খেলনা রপ্তানির Cumulitive Average Growth Rate 28%। তিনি বলেন, ২০২১-২২ সালে (জুলাই এপ্রিল) মোট প্লাস্টিক রপ্তানি ইউএস ডলার ১২৮.৭৭ মিলিয়ন এবং খেলনা রপ্তানি ইউএস ডলার ৩৭.১০ মিলিয়ন বা মোট প্লাস্টিক রপ্তানির প্রায় ২৯%। ১২ মাসের গড় রপ্তানি হবে যথাক্রমে ইউএস ডলার ১৫৫ মিলিয়ন এবং ইউএস ডলার ৪৪ মিলিয়ন প্লাস্টিক এবং খেলনা। ২০২১-২২ সালে গড় বৃদ্ধির হার ২২%।
সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের অপারেশন ম্যানেজার ডানডান চ্যান, প্যানেলিস্ট হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব শুভাশিষ বোস, এসএমই ফাউন্ডেশনের উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালাহউদ্দিন মাহমুদ, বিটাক পরিচালক ডঃ সৈয়দ মোঃ ইহসানুল করিম, বিপিজিএমইএ'র সাবেক সভাপতি মোঃ ইউসুফ আশরাফ, গোল্ডেন সন লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বেলাল আহমেদ। এছাড়াও এফবিসিসিআই বিভিন্ন চেম্বার এসোসিয়েশন, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাগণ, বিপিজিএমইএ'র শীর্ষ নেতৃবৃন্দ, টয়েজ সেক্টরের সদস্যগণ সেমিনারে অংশগ্রহন করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।