Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মাদারীপুরে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চলছে দুই শতাধিক সমবায়

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২১ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:২৩ এএম

আবুল হাসান সোহেল ,মাদারীপুর থেকে : আইন অমান্য করে এবং সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে মাদারীপুরে চলছে দুই শতাধিক সমবায় সমিতির ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম। এ জেলার ৫৬ এনজিও‘র মধ্যে ২৮ এনজিও‘র কার্যক্রম নিয়ে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, সমবায়ের অনুমোদন নিয়ে বিধি লঙ্ঘণ করা, এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর নিবন্ধন না নেয়া, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) সনদ না নিয়ে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করা, নিয়মিত জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রতিবেদন দাখিল না করা এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মাসিক মিটিংয়ে উপস্থিত না থাকা। ফলে, একদিকে যেমন বড় বড় এনজিওগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অন্যদিকে অনিয়মের মাধ্যমে পরিচালিত এনজিও‘র মালিকরা কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে জনগণের টাকায় নিজেরা ফুলে-ফেপে উঠছেন।
অনুসন্ধানে ও সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে পরিচালিত ২৮ এনজিওর মধ্যে রাজৈর উপজেলার তেলিকান্দি গ্রামের ‘অমর পল্লী উন্নয়ন কেন্দ্র’ নামে একটি মাল্টিপারপাসের কর্মকাÐ বেশি প্রশ্নবিদ্ধ। স্থানীয় জমিরুজ্জামান নামের এক ব্যক্তি ‘অমর পল্ল্ ীউন্নয়ন কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানেও তিনি এ মাল্টিপারপাসের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ মাল্টিপারপাসে কর্মরত কর্মী মাত্র ৩ জন। এ ৩ জন কর্মী অন্যান্য সংস্থা হতে দূর্নীতির দায়ে বহিষ্কৃত। অমর মাল্টিপারপাসের প্রধান ২/৩ গুণ লাভের প্রলোভন দেখিয়ে গ্রামের সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সঞ্চয় সংগ্রহ করে ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করছেন।
জেলা, উপজেলা, পুলিশ প্রশাসন এবং গোয়েন্দা বিভাগকে ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে ”অমর পল্ল্ ীউন্নয়ন কেন্দ্র”। সরকারি নিয়মানুযায়ী মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) আইন-২০০৬-এ বিধি ১৫(১) অনুযায়ী “কর্তৃপক্ষের সনদ ব্যতীত কোনো প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে না। অথচ এমআরএ‘র বিধি লঙ্ঘন করে অমর পল্লী উন্নয়ন কেন্দ্র জনগণকে মিথ্যা আশ্বাস ও প্রলোভন দিয়ে সঞ্চয় গ্রহণ করছে যা এমআরএ বিধি বহির্ভূত।
সরেজমিনে অনুসন্ধান করে জানা গেছে, অমর পল্লী উন্নয়ন কেন্দ্র ২০টি সমিতি গঠন করেছে এবং প্রতি সমিতিতে ১৫-২০ জন করে সদস্য রয়েছে। প্রতি সদস্যের কাছ থেকে সপ্তাহে ২৫-৫০ টাকা করে সঞ্চয় সংগ্রহ করছে। এভাবে প্রতি বছর এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এ মাল্টিপারপাসের মালিক স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এমআরএ সনদপ্রাপ্ত সংস্থার কর্মীদের নানা রকম ভয়ভীতি দেখিয়ে সনদপ্রাপ্ত সংস্থার সংগঠিত সমিতির মধ্যে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে আসছে। ফলশ্রæতিতে এমআরএ সনদপ্রাপ্ত সংস্থার ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
বিগত কয়েক বছরে একাধিক জাতীয় পত্রিকায় এমন সব প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে যে, বিভিন্ন মাল্টিপারপাসের প্রতিষ্ঠাতা জনগণের কাছ থেকে সংগৃহীত সঞ্চয়ের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে গেছে। মাদারীপুর জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ইতোপূর্বে ৪/৫টি মাল্টিপারপাসের মালিক জনগণের কয়েক কোটি টাকা সঞ্চয় নিয়ে পালিয়ে গেছে। সর্বশেষ গত ২২ সেপ্টেম্বর জাতীয় একটি দৈনিকে “৫০ কোটি টাকা নিয়ে এনজিও মালিক উধাও” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এভাবে অমর পল্লী উন্নয়ন কেন্দ্র জনগণের সঞ্চিত লাখ লাখ টাকা গ্রাহকদের না দিয়ে নিজে আত্মসাৎ করে যে কোন মুহূর্তে পালিয়ে যেতে পারে।
রাজৈর উপজেলা গোল্ডেন লাইফ বহুমুখী সমবায় সমিতি কর্তৃপক্ষ গ্রাহকদের লাখ লাখ টাকা সঞ্চয় নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পায়তারা করছেন। গ্রামের সহজ সরল সাধারণ মানুষদের উচ্চ মুনাফা দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা আমানত সংগ্রহ করেছে। বর্তমানে গ্রাহকদের আমানত ফেরত দিতে টালবাহান শুরু করেছে। সমবায় সমিতির নিয়মিত অডিট, ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে হিসাব পরিচালনা, নির্বাচনের মাধ্যমে নিয়মিত কমিটি গঠনের নিয়ম থাকলেও কোনটিই নেই আমগ্রাম বাজারের গোল্ডেন লাইফ বহুমুখি সমবায় সমিতির।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সমিতির পরিচালক নিজেকে পরিচয় দেন একটি রাজনৈতিক দলের সাধারণ সম্পাদক। এলাকাবাসী ও গ্রাহকরা আশঙ্কা করছেন, যেকোনো মুহূর্তে পালিয়ে যেতে পারেন গোল্ডেন লাইফ বহুমুখী সমবায় সমিতির কর্মকর্তারা। সমিতির পরিচালক মো. আজিজুল বলেন, “সমিতির অবস্থা ভালো নয়। আমরা বেশিদিন এটা চালাবো না। সমিতি সম্পর্কে বিস্তারিত আমি জানিনা। উপজেলা সমবায় কার্যালয়ে যোগাযোগ করেন।” এ ব্যাপারে রাজৈর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. গোলাম কুদ্দুস বলেন, ‘এই সমিতিটিতে বর্তমানে কোনো কমিটি নেই এবং ব্যাংক হিসেবও নেই।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ