Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আরাকানের অতীত ও বর্তমান

মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান, টেকনাফ | প্রকাশের সময় : ২০ নভেম্বর, ২০১৬, ১১:৩০ পিএম | আপডেট : ১২:০৮ এএম, ২১ নভেম্বর, ২০১৬

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া মহাদেশে অবস্থিত মিয়ানমার। আয়তন ২ লক্ষ ৬১ হাজার ৯৭০ বর্গমাইল। লোকসংখ্যা ৬ কোটির চেয়ে বেশী। মিয়ানমার ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারী বৃটেন হতে স্বাধীনতা লাভ করে। ১৪০টি জাতি গোষ্ঠীর মধ্যে মুসলমানরা হচ্ছে দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় জনগোষ্ঠী। এদের সংখ্যা ৮০ লাখের চেয়ে বেশি। মিয়ানমারের ছোট বড় শহরেই মুসলমানদের বসবাস। মিয়ানমারের পশ্চিমে এবং বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বে নাফ-নদী ও সাগর উপকূলে এবং বিস্তীর্ণ পাহাড়ের পাদদেশে আরাকানের অবস্থান। ২০ হাজার বর্গমাইল এলাকা জুড়ে আরাকান অবস্থিত। ঐতিহাসিকদের মতে, আরাকানের মাটি খুবই উর্বর। ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য আরাকান প্রসিদ্ধ। বাংলাদেশ ও ভারতের সাথে রয়েছে সীমান্ত। বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসনে আরাকান কখনো সাংস্কৃতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবে মিয়ানমারের অংশ ছিল না। ১৮২৪ সালে বৃটিশ-বার্মা যুদ্ধে আরাকান বৃটিশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। বার্মিরাজা বুদা পাওয়া কর্তৃক ১৭৮৪ সালে মিয়ানমারের সাথে সম্পৃক্ত করার আগ পর্যন্ত আরাকান স্বাধীন ছিল। কিন্তু ১৯৪০ সালে মিয়ানমার  স্বাধীনতা লাভের সময় বৃটেন আরাকানের সার্বভৌমত্ব রেঙ্গুনের কাছে ন্যস্ত করে। জাতিসংঘের ১৫১৪ ৬ষ্ঠ প্রস্তাব মোতাবেক আরাকানের সার্বভৌমত্ব বার্মা ইউনিয়নের কাছে ন্যস্ত করা ছিল অবৈধ। ১৯৪৮ সালে মিয়ানমার আরাকানকে স্বায়ত্তশাসন প্রদান করেছিল। কিন্তু ১৯৬২ সালে ১ ডিক্রি বলে জেনারেল নে-উইনের নেতৃত্বাধীন সামরিক জান্তা সরকার আরাকানের স্বায়ত্ত শাসন প্রত্যাহার করে। এক সময় স্বাধীন-সার্বভৌম আরাকান প্রদেশে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বসবাস বেশি ছিল। আর আরাকান মিয়ানমারের অংশ নয়। স্বাধীনতা প্রদানকালে বৃটিশ সরকার আরাকানকে স্বায়ত্তশাসনসহ মিয়ানমারের সাথে সংযুক্ত করে দিয়ে যায়। কিন্তু জেনারেল নে-উইনের সামরিক সরকার ১৯৬২ সালে আরাকানের স্বায়ত্তশাসন রহিত করে এবং পরে মুসলমানদের বহিরাগত হিসেবে গণ্য করে এবং তাদেরকে শুধু দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণতই করেনি, মুসলমানদের উপর অত্যচার-নির্যাতন বৃদ্ধি করে, যাতে মুসলমানরা সেদেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়, যা আজো অব্যাহত আছে। আরাকানে রাখাইনদের পরেই মুসলমানদের অবস্থান। বিগত দিনে জাতিগত দাঙ্গা সংঘটিত হওয়ার ফলে আরাকান ক্রমবর্ধমান হারে মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে থাকে। দুর্ভাগ্যজনক এই যে, আরাকান প্রদেশে বিগত শতাব্দীর শেষ দিকে মুসলিম ও অমুসলিমদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। আরাকানের ৮০ শতাংশ মুসলমানের বসবাস থাকার পরও বাইরের জগত তেমন অবগত নয়। ঐতিহাসিকদের মতে, রোহিঙ্গাদের পূর্ব পুরুষ হচ্ছে, আরব, তুর্কি, ইরানী, পাঠান, মোগল, বাঙ্গালী এবং ইন্দো-মঙ্গোলীয় বংশোদ্ভূত কিছু জনগোষ্ঠী। রোহিঙ্গারা ধর্মে মুসলমান, তাদের রয়েছে পৃথক সংস্কৃতি ও সভ্যতা। আরাকানের মুসলমান অধিবাসীরা নিজেদের মিয়ানমারের নাগরিকত্বের স্বীকৃতি সমস্যায় ভুগছে। ১৯৭৭ সালে তাদের দেশ ত্যাগের চাপের মুখ সম্মুখীন হয়। তখন থেকে রোহিঙ্গাদের উপর আক্রমণ শুরু হয়। মিয়ানমার সামরিক জান্তা গোটা আরাকানের মুসলমানদের মুরগীর বাচ্চার ন্যায় খাঁঁচার মধ্যে আবদ্ধ করেছে। তাদের নেই নাগরিক মৌলিক অধিকার। ২০০১ সাল থেকে মুসলিম বৌদ্ধ জাতিগত দাঙ্গা শুরু হয় এবং নির্বিচারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের হত্যার কারণে গোটা আরাকান রাজ্যে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের আর্তনাদ আকাশ বাতাশ ভারী হয়ে উঠেছে। বৌদ্ধ ধর্মে জীব হত্যা মহাপাপ হলেও তারা বৌদ্ধ ধর্মের এ মর্মের বাণী কাজের মাধ্যমে অস্বীকার করছে। আরাকান থেকে রোহিঙ্গা মুসলিম নিধন করে সেখানে রাখাইন সম্প্রদায়ের অধিপাত্য বিস্তারে পাঁয়তারা চালিয়ে যাচ্ছে। আরাকান রাজ্যে কাউয়ার বিলের সীমান্ত রক্ষী (বিজিপি) ক্যাম্পে আক্রমণে সৃষ্ট ঘটনাকে কেন্দ্র করে সে দেশের সামরিক জান্তা এবং বিজিপি যৌথভাবে আরাকানের রোহিঙ্গা মুসলমানদের দমন, নিপীড়ন অব্যাহত রেখেছে। গত ৯ অক্টোবর এ ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনার সাথে কারা জড়িত এ তথ্য উদঘাটন না করে নির্বিচারে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাকে সীমান্ত রক্ষী বিজিপি সেনাবাহিনী রেডএলার্ট জারি করে রেখেছে। আরাকান রাজ্য থেকে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, সৃষ্ট ঘটনার পর থেকে এ পর্যন্ত মিয়ানমারের সামরিক জান্তার বর্বরোচিত দমন, নিপীড়ন ও নির্যাতনে আরাকানের ৩৩ গ্রাম এখন পুরুষ শূন্য। আরাকানের স্বাধিকার আন্দোলনের সংগঠন রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) দমনের নামে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। প্রায় ৮শ’ ঘরবাড়ী পুড়িয়ে দিয়েছে। ১১ হাজার মানুষ ঘরছাড়া হয়ে পাহাড়ে, ধানক্ষেতে বাঁশবনে ও ঝোঁপ-জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছে। সামরিক জান্তা ও বর্ডার পুলিশ (বিজিপি)র হাতে ২৩৩ জন নারী-পুরুষ ও শিশু হত্যার শিকার হয়েছে। আটক হয়েছে প্রায় ৩ শতাধিক। আহত হয়েছে শতাধিক। সামরিক জান্তা এবং বিজিপি নির্বিচারে হত্যার আতংকে ১৩৩ গ্রামের পুরুষ শূন্যতার সুযোগে বাড়ীতে তল্লাশীর নামে লুটপাট এবং সুন্দরী রমণীদের উপর শ্লীলতাহানিরও অভিযোগ উঠেছে। রোহিঙ্গা সালিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) সন্ধান এবং আটকের নামে ১৩৩ গ্রামের ঘরের বেড়া, শৌচাগারের বেড়া ও গোসলখানার বেড়া পর্যন্ত তুলে নিয়েছে সীমান্ত রক্ষীরা। উচ্ছেদকৃত গ্রামগুলো হচ্ছে, কাউয়ার বিল, নাইনসং, ওয়াফেরপাড়া, কিয়ারীপাড়া, হাতগজ্যা পাড়া, নাচ্ছ্যাগুরো পাড়া, বাদল্ল্যাপাড়া, বুড়া সিকদার পাড়া, নাপপুরা পাড়া, লোটাইং, হাতিপাড়া, সিং ডিবি বিলপাড়া, হাছার বিল পাড়া, মোম্বাইপাড়া, দেচ্ছেরপাড়া, তিনগজ্যা পাড়া, খাঁইরপাড়া, কোয়াইংছড়ি বিল পাড়া, খসরের বিলপাড়া, নাপিতত বিল পাড়া, ৫নং ভেকুয়াপাড়, বাঁকঘোনাপাড়া, শীলখালীপাড়া, বুচিদং শরের, নাইক্ষ্যংচংপাড়া, মরিচ্যা বিল পাড়া, কোয়াইসং, আলিদং, রাসিদং শহরের মোজাইপাড়া, আলাপ্রাংপাড়া ও জেটিং পাড়া। এসব এলাকায় সীমান্ত রক্ষী (বিজিপি) বর্ডার গার্ড পুলিশ এবং সামরিক জান্তার ঘাঁটি ছিল মোট ৯০টি। এ ঘটনার পর আরো ২৬টি ঘাঁটি বৃদ্ধি করেছে।  গত নভেম্বর মাসের ১১ তারিখ থেকে নির্যাতন ও হত্যাসহ টর্সারসেল-এর মাধ্যমে নির্বিচারে হত্যাকা- অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন নেট ও গণমাধ্যম এই বিষয়ের উপর ব্যাপক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।



 

Show all comments
  • Hasib ২১ নভেম্বর, ২০১৬, ১:২৭ এএম says : 1
    very informative writing.
    Total Reply(0) Reply
  • Md Torab Ali ২১ নভেম্বর, ২০১৬, ৯:৩১ এএম says : 0
    every muslims pray to Allah for Mayanamr and All muslims. I hate A.S. Shuchi.
    Total Reply(0) Reply
  • Imam Hossain ২১ নভেম্বর, ২০১৬, ১১:৫৬ এএম says : 0
    মুসলিম দেশ গুলো মিলে আর একটা জাতীয় সংঘ বানানো উচিৎ । জে জাতীয় সংঘ আছে সেইটা মোসলমান দের সার্থ রক্ষার জন্য নয় ।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ নিজাম উদ্দিন ইরান ২১ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ পিএম says : 1
    Stop killing lnnocent Rohingya Muslim in Burma
    Total Reply(0) Reply
  • Atikur Rahman Sajol ২১ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ পিএম says : 0
    He Allah Muslim der sahajjo korun
    Total Reply(0) Reply
  • Mithu Rahaman ২১ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০১ পিএম says : 0
    Manobota kothay aj
    Total Reply(0) Reply
  • md. shazzadul hoque ২১ নভেম্বর, ২০১৬, ৭:১১ পিএম says : 0
    why mouslem world silent?
    Total Reply(0) Reply
  • ২২ নভেম্বর, ২০১৬, ১:৩১ পিএম says : 0
    এখানে আপনি আপনার মন্তব্য করতে পারেন
    Total Reply(0) Reply
  • YOUSUF ২৩ নভেম্বর, ২০১৬, ১১:০৫ এএম says : 0
    রোহিঙ্গাদের পূর্ব পুরুষ হচ্ছে, আরব, তুর্কি, ইরানী, পাঠান, মোগল, বাঙ্গালী এবং ইন্দো-মঙ্গোলীয় বংশোদ্ভূত কিছু জনগোষ্ঠী। রোহিঙ্গারা ধর্মে মুসলমান। ইয়া-আল্লাহ ..আরাকানের মুসলমানদের.....সাহায্য করো...আমীন।
    Total Reply(0) Reply
  • a ২৪ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০৪ পিএম says : 0
    মুসলিম দেশ গুলো মিলে আর একটা জাতীয় সংঘ বানানো উচিৎ । জে জাতীয় সংঘ আছে সেইটা মোসলমান দের সার্থ রক্ষার জন্য নয় ।
    Total Reply(0) Reply
  • hasem ৩ অক্টোবর, ২০২০, ৩:৩১ এএম says : 0
    Where my village, Debbinare.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ