Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিলক্ষারচরে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ব্যাপক বোমাবাজি

শান্তি সমঝোতা তিরোহিত

সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে | প্রকাশের সময় : ২০ নভেম্বর, ২০১৬, ১১:২০ পিএম

নতুন করে উত্তেজনা : সংঘর্ষের আশঙ্কা

৫ দিন বন্ধ থাকার পর দাঙ্গা বিধ্বস্ত রায়পুরার নিলক্ষারচরে আবার নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে লাঠিয়াল সরদার সুমেদ আলীর বাহিনী সেখানে ব্যাপকভাবে বোমা ফাটাফাটি করেছে। পরে পাল্টা বোমা ফাটিয়েছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী গ্রুপের লাঠিয়ালরাও। গতকাল রোববার এমপি রাজু গ্রুপ সমর্থিত চেয়ারম্যান তাজুলের লাঠিয়াল সর্দার সুমেদ আলী পার্শ্ববর্তী শুটকিকান্দা গ্রামে হামলার প্রস্তুতি নিলে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী গ্রুপের লাঠিয়ালরাও সজাগ হয়ে উঠে। এতেই বোমা ফাটাফাটির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উভয় গ্রুপের লাঠিয়ালদের মধ্যে সাজ সাজ রব পড়ে যায়। সারা এলাকায় নতুন করে আতংক দেখা দেয়। পরে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সুমেদ আলীর বাহিনী কিছুটা পিছু হটলেও উত্তেজনা কমেনি। উভয় পক্ষই রণসাজে সজ্জিত হয়ে যার যার অবস্থানে ওঁৎপেতে বসে রয়েছে। যে কোনো সময়ই বড় ধরনের সংঘর্ষের আশংকা করছে সাধারণ মানুষ।
এদিকে রায়পুরার নিলক্ষারচরে শান্তি ও সমঝোতা সুদূর পরাহত হয়ে পড়েছে। বিবদমান আওয়ামী লীগের দু’দলের মধ্যে বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধানে কেউ এগিয়ে আসছে না। দাঙ্গাবস্থা সৃষ্টি হবার পর এলাকায় কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান আলোচনার মাধ্যমে ঘটনা মীমাংসার জন্য একজন রাজনৈতিক নেতার কাছে গিয়েছিলেন। তিনি নাকি চেয়ারম্যানদেরকে বলে দিয়েছেন নিলক্ষার ব্যাপারে তোমরা কেউ নাক গলাবে না।  আমি দেখবো নিলক্ষার ঘটনা। এই ঘটনার পর ইউপি চেয়ারম্যানরা চুপ হয়ে যায়। এব্যাপারে গ্রামের লোকজন জানিয়েছে, শক্তি প্রয়োগ করে রায়পুরার এমপি ও থানা পুলিশ দাঙ্গা দমনের চেষ্টা চালাচ্ছে। গত সপ্তাহের শনি, রবি ও সোমবারের রক্তক্ষয়ী দাঙ্গায় ৪ জন নিহত ও শতাধিক গ্রামবাসী আহত হবার পরও দ্বিপাক্ষিক সমাধানে কেউ উদ্যোগ গ্রহণ করছে না। ঘটনার ৩ দিনের মথায় এমপি রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু হঠাৎ পুলিশ প্রহরায় হামলাকারী রাজীবসহ তার সমর্থকদের নিয়ে এলাকায় যায়। সেখানে স্থানীয় একটি হাই স্কুলে তার দলীয় সমর্থকদেরকে ডেকে এক পাক্ষিক সভার আয়োজন করেন। সেই সভায় দাঁড়িয়ে বিদ্রোহী গ্রুপের নেতাদেরকে হুমকি ধমকি প্রদান করেন। শুধু তাই নয়, তিনি দড়িগাঁও ও সোনাকান্দী গ্রামের ১৪ থেকে ৬৫ বছর বয়সী সকল শিশু, যুবা ও বৃদ্ধদেরকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। এমপি রাজুর এই হুমকি ধমকি ও এক পক্ষকে গ্রেফতারের নির্দেশে এলাকার লোকজনের মধ্যে চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। প্রায় সপ্তাহকাল ধরে সারা রায়পুরা তথা নরসিংদীর রাজনৈতিক মহলে এমপি রাজুর এই কা- ও বক্তব্য নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় বইতে থাকে। রক্তক্ষয়ী দাঙ্গার ৪/৫ দিনেও পুলিশ লাঠিয়াল সর্দার সুমেদ আলী, অভিযুক্ত রাজিবসহ কোন পক্ষের দাঙ্গাবাজ লাঠিয়াল সর্দারদেরকে গ্রেফতার করতে পারেনি। লুকিয়ে থাকা লাঠিয়াল সর্দার সুমেদ আলী ও তার বাহিনী এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করতে শুরু করেছে। এলাকার লোকজন জানিয়েছে সুমেদ আলী চরমধুয়া সংলগ্ন নদীর পাড়ের ডেরারচর নামে একটি স্বল্প বসতিতে লুকিয়ে থাকে এবং সুযোগ বুঝেই সে হামলা করে। গত রোববার এই বসতিতে বসেই বোমা ককটেল বানিয়ে শুটকিকান্দী নামে পরিচিত দড়িকান্দী পূর্বপাড়া গ্রামে হামলার পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নেয়। যা পুলিশের হস্তক্ষেপে তাৎক্ষণিক বন্ধ হয়ে যায়।
এলাকার শান্তিপ্রিয় জনগণ জানিয়েছে, শুধু শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে রায়পুরার নিলক্ষারচরের দাঙ্গা দমন করা সম্ভব নয়। ঘটনাটি যেহেতু রাজনৈতিক, সেহেতু রাজনৈতিকভাবেই এর সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। কোন পক্ষ একচেটিয়া গোয়ার্তুমি করলে শুধু রক্তপাতই ঘটবে। সমাধান আসবে না। নিলক্ষারচরের ৮টি গ্রামেই রয়েছে এমপি ও সাবেক মন্ত্রী রাজুর সমর্থিত আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী আওয়ামী লীগের সমর্থক। সংখ্যায় কে কম কে বেশী সেটা নিরূপণ করা সম্ভব নয়। টেঁটা যুদ্ধ শুরু হলে উভয় পক্ষেই হাজার হাজার লাঠিয়াল, হাজার হাজার টেঁটা বল্লম নিয়ে বেরিয়ে আসে। সারা নিলক্ষা ইউনিয়নে তখন দাঙ্গাবিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। গ্রামের নারী, পুরুষ ও শিশুসহ সকল শ্রেণী-পেশার মানুষই দুই পক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়ে। যা পুলিশের পক্ষেও দমন করা সম্ভব নয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ