পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশের সমাজ এখন ভয়াবহ অসুস্থ : ঢাবি শিক্ষক ড. এএসএম আমানউল্লাহ
রাজধানীসহ সারাদেশেই বখাটেদের উৎপাত আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। স্কুল-কলেজের সামনে বখাটেদের আড্ডায় ভীত-সন্ত্রস্ত অভিভাবকরা। বখাটেদের বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলেই বিপদ আসে। সংঘবদ্ধ বখাটেরা কাউকেই পরোয়া করে না। হামলার ও মারপিটের ঘটনা ঘটায়। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্যমতে, গত আট মাসে সারা দেশে বখাটেদের উৎপাতে যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটেছে ১৬৯টি। যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করায় খুন হয়েছেন তিনজন ছাত্রী। আত্মহত্যা করেছে আরও তিনজন। শুধু তাই নয়, যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করায় ৫ জন পুরুষকেও খুন করেছে বখাটেরা। প্রতিবাদ করে লাঞ্ছিত হয়েছেন ৮২ জন নারী ও ১৬ জন পুরুষ। এসব ঘটনায় আঘাতের শিকার হয়েছেন ৫৭ জন পুরুষ। বখাটেদের উৎপাতে স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়েছে চার ছাত্রীর। সমাজ বিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. এএসএম আমানউল্লাহ বলেন, বাংলাদেশের সমাজ এখন ভয়াবহ অসুস্থ। এই অসুস্থতার কারণে তরুণ ও যুব সমাজের ভিতরে হতাশা তৈরী হয়েছে। সেই হতাশা থেকেই তারা সামাজিক অপরাধ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এজন্য তরুণ বা যুবসমাজকে একা দায়ী করা যাবে না। এ জন্য দায়ী আমাদের রাষ্ট্র, আমাদের সমাজ ব্যবস্থা, আমাদের অভিভাবক, শিক্ষক, সুশীল সমাজসহ সবাই। মিরপুর এলাকার বাসিন্দা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী শহিদুল ইসলামের মেয়ে মিরপুর-১০ নং সেকশনে এক স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ে। অস্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় মেয়ের সাথে তার মাও যেতেন। এখন স্কুল শেষ করে কোচিং এ যায় মেয়েটি। বিকালে তার মা কোচিং থেকে নিয়ে আসেন। মাঝে মধ্যে মা যেতে না পারলে মেয়ে একই বাসায় ফেরে। শহিদুল ইসলাম জানান, স্থানীয় বখাটেরা স্কুলের গলিতে আড্ডা দেয়। মেয়েরা স্কুলে যাওয়ার সময় তারা পেছন থেকে কটূক্তি করে, শীস দেয়। অভিভাবক সাথে থাকলেও তারা কোনো পরোয়া করে না। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকদের সাথে একাধিকবার কথা বলেছেন অভিভাবকরা। কিন্তু বখাটেদের নিবৃত্ত করা যায়নি। বরং দিন যতো যাচ্ছে বখাটেদের উৎপাত ততো বাড়ছে।
জুরাইন বউবাজার এলাকার এক অভিভাবক জানান, তার মেয়ে আলমবাগের এক স্কুলের দশম শ্রেণিতে পড়ে। স্কুল যাওয়া আসার পথে বখাটেরা প্রায়ই তার মেয়েকে কটূক্তি করে। কিছুদিন আগে এক বখাটে তার মেয়ের কাছে ফেসবুকের আইডি চায়। মেয়েটি বলে তার কোনো ফেসবুক নাই। এরপর ছেলেটি তার মোবাইল নম্বর চাইলে মেয়েটি তাতেও আপারগতা জানায়। এরপর থেকে বখাটে ওই যুবক মেয়েটিকে রাস্তায় দেখলেই ভয়ভীতি দেখায়, হুমকি দেয়। এই ঘটনার পর মেয়েটি কয়েকদিন স্কুলে যায়নি। স্কুলে না যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে মেয়েটি তার মায়ের কাছে সবকিছু খুলে বলে। এরপর স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তির কাছে নালিশ করার পর ছেলেটি কিছুদিন উৎপাত করা থেকে বিরত ছিল। এখন আবার শুরু করেছে।
এরকম ঘটনা রাজধানীর বাইরেও অহরহ ঘটছে। বখাটেদের ভয়ে অনেকেই মুখ খোলার সাহস করে না। কারণ এদেরকে পেছনে উঠতি বয়সি মাস্তান ও প্রভাবশালীরা। প্রতিবাদ করতে গেলে বখাটেরা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। মারপিট বা হামলা করতেও দ্বিধা করে না। বখাটেদের উৎপাতে প্রতিবাদ করতে গিয়ে স্কুল-কলেজের আশপাশে প্রায়ই মারপিটের ঘটনা ঘটছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রায় প্রতিদিনই এরকম হামলার ঘটনায় আহত দুই চারজন ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে আসে। বেশিরভাগ ঘটনাই শেষ পর্যন্ত চাপা পড়ে যায়। কারণ মেয়ের অভিভাবকরা নিজের মান বাঁচাতে বা ভবিষ্যতের ঝামেলা এড়াতে ঘটনা আড়াল করে রাখতে বাধ্য হন।
গত মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে রাজধানীর মিরপুরে বিসিআইসি কলেজের দুই ছাত্রীকে (জমজ বোন) পিটিয়ে আহত করে বখাটেরা। বখাটেদের হামলায় এক বোনের পা ভেঙ্গে যায়। কলেজ ছুটির পর ওই দুই বোন বাড়ি ফিরছিল। এ সময় কলেজের কাছেই বখাটেরা তাদের ফার্মের মুরগি বলে উত্ত্যক্ত করে। এর প্রতিবাদ করায় বখাটেরা দুই বোনকে বাঁশ দিয়ে বেধড়ক পেটায়। ঘটনার পর অবশ্য পুলিশ দুই বখাটেকে গ্রেফতার করেছে।
গত ৩ অক্টোবর সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিসকে কুপিয়ে আহত করে ছাত্রলীগ নেতা বদরুল আলম। বদরুল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক। দীর্ঘদিন ধরে সে খাদিজাকে উত্ত্যক্ত করছিল। ঘটনাস্থলে উপস্থিত কেউ কেউ খাদিজাকে কোপানোর দৃশ্য মুঠোফোনে ধারণ করেন। সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। খাদিজা রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে এখনও চিকিৎসাধীন। জনতার গণপিটুনিতে আহত বদরুল আছে কারাগারে। তার বিরুদ্ধে চার্জশিটও দিয়েছে পুলিশ। গত ১৮ সেপ্টেম্বর মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার নবগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী নিতু মন্ডলকে (১৪) বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নিতুকে হত্যা করে পালিয়ে যাওয়ার সময় মিলন মন্ডলকে গ্রামবাসী আটক করে পুলিশে দেয়। পুলিশ জানায়, নিতু স্কুল যাওয়ার পথে মিলন প্রায়ই তাকে উত্ত্যক্ত করতো। গত ২৪ আগস্ট রাজধানীর উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের অস্টম শ্রেণির ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিসাকে প্রকাশ্য দিবালোকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে বখাটে ওবায়দুল। ইস্টার্ন মল্লিকা শপিং কমপ্লেক্সের বৈশাখী টেইলার্সে ড্রেস তৈরির অর্ডার দিতে গেলে রিসার নম্বর পায় ওবায়দুল। রিসাকে ফোনে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করতো সে। ফোন নম্বরটি অভিভাবকরা বন্ধ করে দিলে, ওই বখাটে স্কুলে যাওয়ার পথে রিসাকে উত্ত্যক্ত করতো। এক পর্যায়ে ছুরিকাঘাত করলে দু’দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে রিসা মারা যায়।
সারাদেশে এরকম ঘটনা ঘটেই চলেছে। কিন্তু বখাটেদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। ভুক্তভোগিদের মতে, এরকম ঘটনা বহু ঘটছে। কিন্তু সব ঘটনার খবর মিডিয়াতে আসছে না। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, সমাজে অসঙ্গতি বাড়লে এ ধরনের ঘটনার প্রবণতা বেড়ে যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. এএসএম আমানউল্লাহ বলেন, চারটি কারণে বখাটেদের সংখ্যা ও এদের উৎপাত বেড়ে গেছে। প্রথমত, দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। এতে করে তরুণ ও যুবসমাজ কোনো সৃষ্টিশীল কাজে নিজেদেরকে যুক্ত করছে পারছে না। দ্বিতীয়ত, দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাংস্কৃতিক কর্মকা- নেই, সংসদও বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। এতে করে তরুণ ও যুবসমাজ এক ধরনের হতাশার মধ্যে পড়েছে। তৃতীয়ত, পাড়া-মহল্লায় আগে যেভাবে ক্লাব, পাঠাগার, খেলাঘর, সংসদ দেখা যেতো এখন সেগুলো নেই। এগুলো এখন বন্ধ অথবা রাজনৈতিক দলের অফিস হয়ে গেছে। চতুর্থত, আমাদের দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে এখন যতোটা গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে সামাজিক উন্নয়নকে ততোটাই অবহেলা করা হচ্ছে। সমাজ হলো একটি জীবন্ত বিষয়। এটাকে জীবন্ত চালু রাখতে হবে। যে সমস্ত কর্মকা- সমাজকে জীবন্ত রাখে সেগুলো বন্ধ করে দেয়ায় গোটা সমাজই এখন অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
বখাটেদের উৎপাতের বিষয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, বখাটেদের উৎপাত বন্ধ করতে সমাজের মানুষকেই আগে এগিয়ে আসতে হবে। এলাকাভিত্তিক মানুষজন একটু সচেতন হলে বখাটেদের নিবৃত্ত করা কোনো কঠিন কাজ নয়। এরপরেও যে কোনো এলাকার বখাটেদের বিষয়ে থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিবে। অপরদিকে, বখাটেদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলো তদারকির দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা থেকে মানবাধিকার সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, বখাটেপনার অভিযোগে যাদের আটক করা হয়, তাদের বিচারে বিলম্ব হওয়ার সুযোগ নিয়ে নানা সামাজিক সমঝোতা করা হয়। এতে করে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা যায় না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।