Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফেনী নদী থেকে অবৈধভাবে পানি তুলে নিচ্ছে ভারত

মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন, ছাগলনাইয়া থেকে | প্রকাশের সময় : ২০ নভেম্বর, ২০১৬, ১১:১২ পিএম

বাংলাদেশের ফেনী নদী থেকে অবৈধভাবে পানি তুলে নিচ্ছে ভারত। বছরের পর বছর ধরে দেশটির দক্ষিণ ত্রিপুরার সাব্রুমের ১৭টি পয়েন্টে ২৬টি পাম্প বসিয়ে এই পানি উত্তোলন চলছে। শুল্ক মৌসুমে ফেনী নদীতে সর্বোচ্চ ২৫০ কিউসেক পানি থাকে।
তা থেকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ গোপনে নোম্যান্সল্যান্ড মাটির নিচে নদী তীরের কাছে শতাধিক কিউসেক পানি গোপনে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এই নদীর তীরে গোপনে পাকা স্থাপনা ও টিনের বেড়া দিয়ে তারা ২৬টি পাম্প বসিয়েছে এবং এসব পাম্প মেশিনে ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি সিআই পাইপ লাগানো হয়েছে। এসব মেশিন দিয়ে গোপনে নদী থেকে পানি সরিয়ে  নেয়া হচ্ছিল যা আন্তর্জাতিক নদীর পানি বণ্টন নীতির চরম লঙ্ঘন। এর আগে ২০১২ সালের দিকে বাংলাদেশের তরফ থেকে পানি উত্তোলনের বিষয়ে বিরোধিতা করা হলে তা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়। পরে গোপনে আবার পানি উত্তোলন চালিয়ে যাচ্ছে তারা।
দু’মাস আগে রামগড় সীমান্তের ওপারে সাব্রুমে অনুষ্ঠিত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) যৌথ বৈঠকে নতুন করে ইস্যুটি সামনে আসে। ওই বৈঠকে নোম্যান্সল্যান্ড ভারতের অবৈধভাবে বসানো উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ চালিত পাম্প মেশিন তুলে নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে বিএসএফকে চিঠি দিয়েছে বিজিবি। তবে সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত ভারতের কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। দু’মাস আগে অনুষ্ঠিত এ সংক্রান্তে দু’দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বৈঠকে বিজিবির গুইমারা সেক্টরের ভারপ্রাপ্ত সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল এম. জাহিদুল রশীদ পিএসসি’র নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন রামগড়স্থ ৪৩ বিজিবি ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর হুমায়ুন কবির, গুইমারা সেক্টরের জি টু মেজর রেজাউল হান্নান শাহীন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী খ. ম. জুলফিকার তারেক। অপরপক্ষে বিএসএফের উদয়পুর সেক্টরের ডিআইজি ইয়াদ ভান্দ্রার নেতৃত্বে অন্যান্যের মধ্যে সাব্রুমের ৩১ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার টি সিং নেগী ও সাব্রুম মহকুমার পানি উন্নয়ন বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে দেশে ফিরে লে.  কর্নেল এম. জাহিদুর রশীদ সাংবাদিকদের জানান, ভারত ফেনী নদী থেকে ২৬টি পাম্প মেশিনের মাধ্যমে দৈনিক এক শতাধিক কিউসেক পানি নিতে চায়। এখন বাংলাদেশের সাথে চুক্তির মাধ্যমে আরও ১৮২ কিউসেক পানি নিতে চায়। সাব্রুম মহকুমার বাসিন্দাদের পানীয় জলের চাহিদা মেটাতে তারা পানির এ দাবি করছে। ভরা বর্ষা ছাড়া বছরের বাকি ১০ মাস পানি উত্তোলন হয়। একতরফাভাবে পানি তুলে নেওয়ার ফলে শুল্ক মওসুমে ফেনী নদী শুকিয়ে ধুধু বালুচরে পরিণত হয়। এদিকে মৃতপ্রায় এ নদী থেকে ভারত চুক্তির মাধ্যমে আরো ১৮২ কিউসেক পানি তুলে নেওয়ার জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পাম্প মেশিনের মাধ্যমে অবৈধভাবে ভারতের পানি উত্তোলন বন্ধ করার পর ন্যায্য হিস্যা অনুযায়ী দুদেশের মধ্যে পানিবন্টন চুক্তি করতে কোনো আপত্তি নেই। ফেনী নদীর তিরবর্তী জগন্নাথ সোনাপুরের বাসিন্দা আবুল হোসেন জানান, ফেনী নদীর উৎপত্তিস্থল বাংলাদেশে। ১৯৭৪ সালে সম্পাদিত মুজিব-ইন্দিরা চুক্তিতে দুই দেশের ৫৪টি অভিন্ন নদীর মধ্যে ফেনী নদীর নাম নেই। ভারত সুযোগটি কাজে লাগিয়ে এ নদীর পানি একতরফাভাবে প্রত্যাহার করছে। এর ফলে ফেনী ও মিরসরাইয়ের বিস্তীর্ণ এলাকা মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে। সেচ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শত শত কৃষক। পাউবোর চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী খ ম জুলফিকার তারেক বলেন, কোনো প্রকার চুক্তি ছাড়া ভারত অন্যায়ভাবে এত বছর ফেনী নদী থেকে পাম্প বসিয়ে পানি নিয়ে গেছে। বিষয়টি সমাধান হতে ঢাকা-দিল্লি বৈঠক ছাড়া কোনো উপায় নেই। আমরা বার বার নিষেধ করছি। এবারও চিঠি দিয়েছি। তারা পানি নিতে পারে, তবে তিস্তার বিষয়ে আমাদের ছাড় দিতে হবে। তিনি জানান, ডিসেম্বর মন্ত্রণালয় পর্যায় দুই দেশের বৈঠক হবে। ওই বৈঠকে সংকট উত্তরণের সম্ভাবনা রয়েছে। বৈঠক পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ইতিমধ্যে ওরা পানি চুরি করলে তা সেই বৈঠকে উত্থাপিত হবে। উল্লেখ্য, ফেনী নদীর উৎপত্তিস্থল বাংলাদেশ। অথচ দীর্ঘদিন ধরে ভারত এ নদীর উৎপত্তিস্থল তাদের দেশে বলে দাবি করছে। ভারতের তরফ থেকে দাবি করা হয়, এই নদীর উৎপত্তি ত্রিপুরা রাজ্যে। প্রবীণ রাজনীতিবিদ, নবাব শমসের গাজীর সপ্তম বংশধর এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী জানান, ফেনী নদী বাংলাদেশের নিজস্ব নদী। এটি অভিন্ন নদী না। বাংলাদেশের অভিন্ন ৫৪ নদীর মধ্যে এটি পড়েনা। বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করে নেয়া এটি একটি আগ্রাসী নীতি। আমরা মনে করি ভারত আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র যদি তাদের কোন দাবী থেকেও থাকে তাহলে সেটা আলোচনার ভিত্তিতে একটা সুষ্ঠু সমাধানে পৌঁছানো যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি। তবে কোন অযৌক্তিক দাবীর কাছে বাংলাদেশের জনগণ মাথা নিচু করবেনা। তিনি আরো জানান, আমার প্রচেষ্টায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ২০১২ সালের ৫ মার্চ ফেনী নদী অভিমুখে লংমার্চও করেছিল। অথচ অনুসন্ধানে দেখা যায়, এর উৎপত্তি মাটিরাঙ্গার ভগবানটিলায়। নদীর ১০৮ কিলোমিটার কোনো অংশই ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেনি। ফেনী নদীর মোহনায় বাঁধ দিয়ে মুহুরী প্রকল্পের মাধ্যমে সেচের জন্য ফেনী নদীতে পানি সঞ্চয় করে রাখে বাংলাদেশ সেখান থেকেই ভারত অবৈধভাবে পানি উত্তোলন করছে।



 

Show all comments
  • জুয়েল ২১ নভেম্বর, ২০১৬, ১:৩০ এএম says : 0
    বন্ধু রাষ্ট্র নিলে সমস্যা নাই।
    Total Reply(0) Reply
  • Touhidul Islam Shawon ২১ নভেম্বর, ২০১৬, ১০:৩৮ এএম says : 0
    ভারত সব বিষয়ে খুব বাড়াবাড়ি করছে
    Total Reply(0) Reply
  • eftikher ২১ নভেম্বর, ২০১৬, ১১:০২ এএম says : 0
    কে বলছে অবৈধ, আমরা না দিলে কি নিতে পারে।
    Total Reply(0) Reply
  • আবদুল্লাহ আমজাদ হোসেন ২১ নভেম্বর, ২০১৬, ১১:০৪ এএম says : 0
    তাদের সব কিছু বৈধো!
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ