Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

৪ আসামিকে হাইকোর্টে হাজির করার নির্দেশ জামিন পাবেন প্রত্যাশা আইনজীবীদের

দেড় যুগ ধরে বিনা-বিচারে কারাবন্দি

মালেক মল্লিক | প্রকাশের সময় : ২০ নভেম্বর, ২০১৬, ১১:১০ পিএম

দেড় যুগের বেশি সময় ধরে কারাগারে বন্দি চাঁন মিয়া, মকবুল, সেন্টু এবং বিল্লাল। বিষয়টি উচ্চ আদালতের নজরে এলে তাদের জামিনে বিষয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন আদালত। একই সঙ্গে আগামী ৪ ডিসেম্বর কারাগার কর্তৃপক্ষকে ওই চার আসামিকে স্ব-শরীরে হাইকোর্টে হাজির করতে বলা হয়েছে। এছাড়াও তাদের মামলার নথিপত্রও তলব চেয়েছেন আদালত। গত কয়েক বছর যাবত রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা যথা সময়ে মামলার সাক্ষী হাজির না করায় যথা সময়ে নিষ্পত্তি করা যাচ্ছে না বিচারকার্য। ফলে বছরের পর বছর ধরে কারাবন্দি থাকতে হচ্ছে আসামিদের। তবে সম্প্রতি উচ্চ আদালতের দ্রুত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার প্রক্রিয়ায় ওইসব ধরা পড়ে। এমনই ২ জন রাজধানীর ঢাকার শ্যামপুরের ও মতিঝিলের বাসিন্দা। অপর দু’জন মাদারীপুরের ও কুমিল্লার বাসিন্দা। বিনা বিচারে ১৫-১৮ বছর যাবত কারাবন্দি থাকার বিষয়টি আদালতের নজরে এলে গতকাল রোববার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি জে. বি. এম. হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ তাদের মামলার নথি তলব ও তাদেরকে আদালতের হাজিরসহ এ রুল জারি করেন। আদালত তাদের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করবেন বলে প্রত্যাশা করছেন আইনজীবীরা। তাদের মতে, উচ্চ আদালতে এইসব বিচার কার্যের জন্যই দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি ও ন্যায়বিচারের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
এর আগে চলতি মাসে ৮ তারিখে বিনা বিচারে ১৬ বছর যাবত কারাগারে বন্দি শিপনকে জামিন দেন হাইকোর্টের একই বেঞ্চ। এর আগে তার বিষয়েও একটি প্রতিবেদন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এরপর আদালতের নজরে এলে মামলার নথিপত্র তলব করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে শিপনকে কেন জামিন দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। রুল শুনানি শেষে তার জামিন হয়।  
এর আগে গত ১৯  জুলাই প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার অনুকম্পায় কারামুক্তি লাভ করে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত চাঁদপুরের শত বছরের বৃদ্ধা অহিদুন্নেছা। তিনিও কাশিমপুর কারাগারে ২০ বছর কারাবন্দি ছিলেন। প্রধান বিচারপতির নজরে আসার পর এই বৃদ্ধার বয়স বিবেচনায় তার সাজা কমানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় যাবজ্জীবন সাজার রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন করেলে শুনানি শেষে যাবজ্জীবন সাজার রায় বাতিল করে তাকে মুক্তির নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। সম্প্রতি সুপ্রিমকোর্ট লিগ্যাল এইড বিনা বিচারে কারাবন্দির তালিকা চেয়ে সারা দেশের কারাগারে চিঠি পাঠিয়েছেন।
চার আসামির বিবরণ : চাঁন মিয়া-গত আঠারো বছর ধরে যার পরিচয় ২৮৩৪। ঢাকার শ্যামপুর থানার একটি হত্যা মামলায় ১৯৯৯ সালে গ্রেফতার হওয়ার পর তিনি আর জামিন পাননি। কাশিমপুর কারাগারে কারাবন্দি আছেন। গত ১৭ বছরেও চাঁন মিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া হত্যা মামলার কোনো অগ্রগতি নেই। মামলাটি বর্তমান ঢাকার পরিবেশ আদালতে বিচারাধীন।  
একইভাবে মতিঝিলের এজিবি কলোনির সেন্টু কামাল গ্রেফতার হন ২০০১ সালে। সর্বশেষ গত মাসেও তাকে হাজির করা হয়েছিল ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে। গত ১৫ বছরে ৫৯ কার্যদিবস তাকে আদালতে হাজির করা হলেও মামলার বিচার শেষ হয়নি।
মাদারীপুরের মকবুল হোসেন রাজধানীর উত্তরা থানার একটি হত্যা মামলায় গ্রেফতার হন ২০০০ সালে। কারাগারে ৬৬৬ পরিচয়ধারী মকবুল। এরপর ১৬ বছরে মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন হয়নি। ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে মকবুলের পক্ষে আইনি লড়াইয়ে কোনো আইনজীবীও ছিল না। মামলা শেষ হয়নি কুমিল্লার বিল্লাল হোসেনেরও। তেজগাঁও থানায় দায়ের হওয়া একটি হত্যা মামলায় তিনি কাশিমপুর কারাগারে ২০০২ সাল থেকে বন্দি রয়েছেন। তার মামলাটিও ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। এই ৪ জনকে নিয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশন গত ১৬ নভেম্বর প্রচারিত একটি প্রতিবেদন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী আইনুন্নাহার সিদ্দিকা ও কুমার দেবুল দে হাইকোর্টের নজরে আনলে আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত এ রুল জারি করেন। আগামী ৪ ডিসেম্বর বিষয়টি আবারও শুনানির জন্য আসবে। ওইদিন নি¤œ আদালতের নথি হাইকোর্টে উপস্থাপন করতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে এ আইনজীবী জানান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুমার দেবুল দে ইনকিলাবকে বলেন, আদালত তাদেরকে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করবেন। তিনি আরো বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর যথা সময়ে সাক্ষী হাজির না হওয়া মামলা বিচার দেরি হয়। সম্প্রতি উচ্চ আদালতের এসব বিষয় নজরে এলে দীর্ঘদিন ধরে কারাবন্দি আসামিরা জামিন পাচ্ছেন। যা তাদের মতে, ন্যায়বিচারের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে জানিয়েছেন তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ