Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস মোকাবেলায় জনমত গড়ে তুলুন

চট্টগ্রাম লালদীঘি মাঠে ডিজিটাল জনসভায় প্রধানমন্ত্রী

আইয়ুব আলী, চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৯ নভেম্বর, ২০১৬, ১১:৪৮ পিএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০২১ সালে বাংলাদেশ মধ্যআয়ের এবং ২০৪১ সালে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে। আমাদের অর্থনীতির লক্ষ্য হলো গ্রামের উন্নয়ন। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস মোকাবেলায় সারাদেশে ব্যাপক জনমত গড়ে তোলার উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলার মাটিতে সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ চিরতরে নির্মূল করতে হবে। তিনি বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে সমর্থন করে না। গতকাল (শনিবার) দুপুরে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদকবিরোধী অবস্থান এবং সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা- নিয়ে চট্টগ্রাম বিভাগের তৃণমূল নাগরিকদের সাথে চট্টগ্রাম লালদীঘি মাঠে সরাসরি ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন। একই সঙ্গে চট্টগ্রামের ১১ জেলায় ৭ হাজার ৫০৯টি স্থানে ডিজিটাল পর্দার মধ্য দিয়ে ২৩ লাখ ২৭ হাজার মানুষ প্রধানমন্ত্রীকে দেখেন। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এটিই দেশে প্রথম সর্ববৃহৎ ডিজিটাল জনসভা।
ডিজিটাল জনসভায় দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, একুশ বছর বাংলাদেশের মানুষ তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়। দেশ থেকে নিরক্ষরতামুক্তসহ ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করা হয়। গ্রামের অর্থনীতি দেশের প্রাণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, গ্রামীণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে সরকার কাজ করছে। বিএনপির সময়ে বন্ধ করে দেয়া ১৬ হাজার ক্লিনিকের মাধ্যমে গ্রামীণ মানুষের চিকিৎসা সেবাসহ তাদের বিনামূল্যে ত্রিশ প্রকার ওষুধ দেয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে দারিদ্র্যের হার কমেছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশ সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। দেশে রিজার্ভের পরিমাণ ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। দেশের বিশেষ জায়গায় একশটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। আমরা ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করেছি। আগামীতে কোনো ঘর অন্ধকারে থাকবে না, প্রতি ঘরে আলো জ্বালাবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি বাংলাদেশকে সন্ত্রাসের চারণভূমিতে পরিণত করেছিল। ২০১৪ সালে ১৩৫ জনকে হত্যা করেছে। মন্দির, গির্জায় অগ্নি সংযোগ করেছে। চলন্ত বাসে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করেছে। রিকশা ও সিএনজি ড্রাইভারকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। তাদের তা-বে ৫০৮ জন অগ্নিদগ্ধসহ ৫৬৯ জন আহত হয়েছে। আমরা ক্ষমতায় আসার পর জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অবস্থান নিই। তিনি বলেন, আমরা বিজয়ী জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই। বাংলাদেশে সন্ত্রাস জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। আগামীতে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে পরিণত হবে। তিনি বলেন, পবিত্র কোরআন ও হাদিস শরিফে শান্তির বাণী তুলে ধরা হয়েছে। দেশের মসজিদের ইমামদের মাধ্যমে তা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। সন্তান কোথায় যাচ্ছে কি করছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হাজির থাকছে কিনা তা পিতা-মাতা এবং শিক্ষকদের লক্ষ্য রাখতে হবে।
চট্টগ্রাম লালদীঘি ময়দানে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে মহানগরের ২৭৮টি, উপজেলা পর্যায়ে ১৪টি, পৌরসভা পর্যায়ে ১২টি, ইউনিয়ন পর্যায়ে ১৮০টি, ১৯২টি গ্রোথ সেন্টারে (হাট-বাজার), ৩৪৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, ২৮৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে, ৫৯টি কলেজে, ১১৪টি মাদ্রাসাসহ এক হাজার ৪৮৪টি স্থানে সরাসরি দেখেন। চট্টগ্রাম জেলার প্রায় ১০ লাখ জনসাধারণ সরাসরি ভিডিও কনফারেন্সে সম্পৃক্ত হন।
চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলার রাঙ্গামাটি, কুমিল্লা, চাঁদপুর, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামসহ ৫ জেলার মৎস্যজীবী, লবণ চাষী, হেডম্যান, কলেজের শিক্ষার্থী, রিকশাচালক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, শ্রমিক এবং আইটি উদ্যোক্তার সাথে সরাসরি কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। লালদীঘি ময়দানে প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহে রিকশাচালক আব্দুস শুক্কুরকে কথা বলার সুযোগ দেন জেলা প্রশাসক মো. সামসুল আরেফিন। এ সময় রিকশাচালক বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমি ডিজিটাল বাংলাদেশের নাম শুনেছি কিন্তু কখনও দেখিনি। আজ লালদীঘি মাঠে এসে কথা বলে বুঝতে পারলাম, ডিজিটাল বাংলাদেশ কি জিনিস। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময় করতে নগরীর লালদীঘি ময়দানে জড়ো হয়েছিল কয়েক হাজার মানুষ।  
সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরি ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন। প্রথমে প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। এরপর বঙ্গোপসাগরে মৎস্য সম্পদের জরিপ জাহাজ ‘আরভি মীনসন্ধানী’ উদ্বোধন করেন। শুরুতেই বিএনপি-জামায়াতের সহিংস আন্দোলনের প্রামাণ্যচিত্র রক্তাক্ত বাংলাদেশ মাল্টিমিডিয়ায় প্রচার করা হয়। এরপর চট্টগ্রামের উন্নয়ন নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র প্রচারিত হয়। নগরীর লালদীঘি মাঠে এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এই ডিজিটাল জনসভার সঞ্চালক চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. সামসুল আরেফিন।
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের আগে এতে বক্তব্য রাখেন পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ চট্টগ্রামের সভাপতি ডা. এ কিউ এম সিরাজুল ইসলাম, সরকারি কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ আইয়ূব ভূঁইয়া, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. সাহাবুদ্দিন ও মহানগর ইউনিটের কমান্ডার মোজাফফর আহমেদ। উপস্থিত ছিলেন ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, সাবেক মন্ত্রী ডা. আফছারুল আমিন এমপি, সামশুল হক চৌধুরী এমপি, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরুল আলম চৌধুরী, বিভাগীয় কমিশনার রহুল আমিন, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম, নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য, চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নূর ই আলম মিনা প্রমুখ।
কক্সবাজারের কথা শুনতে চাইলেন প্রধানমন্ত্রী
কক্সবাজার অফিস : কক্সবাজারের তৃণমূলের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হলেও স্বাধীনতা বিরোধীরা দেশের উন্নয়ন কখনো চায়নি। স্বাধীনতা নস্যাৎ করতে পরাজিত শক্তি বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে বর্তমান সরকার সমুদ্রসীমানা জয় করে সমুদ্র সম্পদকে কাজে লাগাতে চায়। এ জন্য কক্সবাজারে গড়ে তোলা হচ্ছে সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট। পরবর্তীতে করা হবে সি এ্যাকোরিয়াম।
কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের পর কক্সবাজারের সাথে সংযোগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রথমে শুনতে চাইলেন একজন শুটকি উৎপাদনকারীর কথা। আগে থেকেই নির্ধারিত করা শুটকি চাষি হিসেবে আতিক উল্লাহ দেশের অন্যতম শুটকি মহাল নাজিরার টেক নিয়ে কথা বলেন। তার বক্তব্যে এখানকার শুটকি উৎপাদনকারী ও ব্যবসায়ীদের যাতায়াত দুরাবস্থা ও ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার কথা উঠে আসে।
বিমানবন্দর সম্প্রসারণের কারণে সমিতিপাড়া ও কুতুবদিয়া পাড়া নাজিরারটেক এলাকার মানুষকে সরকার খুরুশকুলে পুনর্বাসিত করছেন এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে সাধুবাদ জানানোর পাশাপাশি পুনর্বাসিত এলাকায় একটি শুটকি মহাল তৈরি করার উদ্যোগ নিতে তিনি দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘায়ু কামনা করে বক্তব্য শেষ করেন।
লবণ চাষী হিসেবে কথা বলতে গিয়ে হাবিব উল্লাহ মাঠ পর্যায়ে লবণের কেজি ১০ টাকা দাম নির্ধারণ ও চৌফলদন্ডীতে একটি ‘বঙ্গবন্ধু লবণ গবেষণাগার’ স্থাপন এবং কক্সবাজার-চট্টগ্রামের উপকূল ঘিরে ৭০ হাজার একর মাঠে লবণ উৎপাদন হয় বিধায় আলাদা লবণ বোর্ড গঠনের দাবি জানান তিনি।
লবণ বোর্ড ও কক্সবাজারের অন্যান্য সমস্যার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী নির্দিষ্ট করে কোনো ঘোষণা দেননি। গতানুগতিকভাবে  সকল সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে ভিডিও কনফারেন্স সমাপ্ত করেন তিনি।
কক্সবাজার বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়ামে আয়োজিত কনফারেন্সে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাড. সিরাজুল মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, স্থানীয় সাংসদ সায়মুম সরোয়ার কমল, আশেক উল্লাহ রফিক, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’র চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহম্মদ, জেলা পরিষদ প্রশাসক মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এ্যাড. আহমদ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমেদ, জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন, পুলিশ সুপার শ্যামল কান্তি নাথসহ জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা রাজনৈতিক, সামাজিক নেতৃবৃন্দ, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ৫ সহস্রাধিক লোক অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আলোচনা উপভোগ করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ