Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাঙ্গ হলো চবির সুবর্ণ জয়ন্তীর মিলনমেলা

শাকিরুল হক, চবি থেকে | প্রকাশের সময় : ১৯ নভেম্বর, ২০১৬, ১১:২২ পিএম

চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে দু’দিন ব্যাপী অনুষ্ঠানের শেষ দিন গতকাল শনিবার উৎসবে মেতে ওঠেছিল পুরো ক্যাম্পাস। এসময় প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের পদভারে মুখরিত হয়ে ওঠে চবি। পুরো ক্যাম্পাস যেন এক মিলনমেলায় পরিণত হয়। ১৯৬৬ থেকে ২০১৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগের প্রাক্তন ও বর্তমান ব্যাচের শিক্ষার্থীরা তাদের স্ব-স্ব ব্যাচের নিজস্ব গেঞ্জি, টি-শার্ট, টুপি, ব্যানারসহ নানান সাজে সজ্জিত হয়ে সুবর্ণজয়ন্তীতে অংশগ্রহণ নেয়।
ভিডিও কনফারেন্স এর মাধ্যমে বিশ^বিদ্যালয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় তিনি বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্ত্রের ঝনঝনানি আমরা কখনো চাই না। শিক্ষা পরিবেশ হবে অত্যন্ত সুন্দর ও মনোরম। আমরা স্কুল-কলেজ পেরিয়ে বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হই উচ্চ শিক্ষা লাভের আশায় আর উচ্চ শিক্ষিত একটি জাতি পারে দেশ থেকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূর করতে।
সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও সুবর্ণ জয়ন্তীর বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, প্রফেসর ড. আনিসুজ্জামান। সকাল ১১টার দিকে প্রধানমন্ত্রী সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এসময় তিনি সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে একটি স্মারক ডাকটিকেট উন্মোচন করেন তিনি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ক্যা¤পাসে আসার সময় আমি দেখেছিলাম প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা দলে দলে ফেস্টুন, ব্যানার নিয়ে নেচে গেয়ে আনন্দে মেতে ওঠেছেন। এসব দেখে আমি বার বার আমার সেই ছাত্রজীবনে ফিরে যাচ্ছিলাম। ¯িপকার আরও বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা আজ দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিষ্ঠিত। এর ফলে এই বিশ্ববিদ্যালয় যোগাযোগের গ্লোবাল পার্টের অংশীদার হয়ে গেছে।
সুবর্ণজয়ন্তী বক্তব্য দিতে গিয়ে ড. আনিসুজ্জামান বলেন, যেখানে শত শত বৎসরের অভিজ্ঞতাস¤পন্ন বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, সেখানে পঞ্চাশ বছর অতিক্রম করা কিছু নয়। তবুও এদেশের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় যখন এখনো শতবর্ষ অতিক্রম করেনি, সেখানে আমাদের ৫০ বর্ষপূর্তি একটা উল্লেখযোগ্য ঘটনা বটে। তবে এটা যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্বের দিকেই আমাদের তাকাতে হবে। আমাদের লক্ষ্য হবে জগতের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো হয়ে ওঠা। তার জন্য সাধনা ও শৃঙ্খলা চাই, স্বপ্ন ও অধ্যবসায় চাই। আমার বিশ্বাস, সেখানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পেছনে পড়ে থাকবে না।
এদিকে সকালের সূর্য ওঠার সাথে সাথে পুরো ক্যাম্পাস নবীন-প্রবীণদের কুলাহলে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। কোন কোন প্রাক্তন শিক্ষার্থী কালের সাক্ষী হিসেবে ও নিজের ক্যাম্পাস দেখানোর জন্য নিয়ে এসেছে ছেলে-মেয়েকে আবার কেউ নিয়ে এসেছে  নাতিদের। সেই চিরচেনা প্রিয় ক্যা¤পাসে এসে সহপাঠীদের দেখে একে অপরকে জড়িয়ে ধরছেন। এসময় অনেকের চোখে দেখা গেছে আনন্দের জল গড়িয়ে পরতে। আবার ঢোলের তালে ৬০-৭০ বয়সকেও অপেক্ষা করে কোমড় দুলিয়ে নাচতে থাকে।
এর আগে সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে চবির সবুজ ক্যাম্পাসকে সাজিয়ে ছিল নানান সাজে। রং বেরঙ্গের লাইটিং বাহারি কালারের পতাকা, ফেস্টুনে সেজে ছিল চবি ক্যাম্পাস। দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছিল চবি যেন বিয়েবাড়ি। যারা আগের দিন রাতেই ক্যাম্পাসে চলে এসেছিল তারা দলবেঁধে গভীর রাত পর্যন্ত ক্যাম্পাসে আনন্দ করেছেন। যেন অনেকটাই প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের মতো।
প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা ছুটে আসে নিজ হলের পাঁচ বছর কাটানোর চিরচেনা সেই কক্ষটি দেখার জন্য। এ এফ রহমান হলের ২১০ নাম্বার কক্ষে দেখতে আসেন এমদাদ চৌধুরী নামের এক প্রাক্তন শিক্ষার্থী। তিনি চবির ১৩তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। তিনি বলেন, বিশ^াস করুন আমি এই রুমটাতে বসে একটু সময় কাটানোর জন্যই নীলফামারী থেকে এসেছি। এখানে বসতে পেরে আমার কি যে তৃপ্তি লাগছে তা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। ১৭তম ব্যাচের রুপক কর্মকার বলেন, আমি নিজে আমার বন্ধুদের চিনতে পারছি না। একেক জন যেন নানা-নানি হয়ে গেছেন।
এদিকে সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে বর্তমান শিক্ষার্থীদের মাঝে ছিল নানা উৎসাহ ও আয়োজন। তারা প্রাক্তনদের বরণ করে নিতে সকাল থেকে ব্যান্ডপার্টি নিয়ে নিজ নিজ বিভাগে অবস্থান করতে থাকে। প্রাক্তনরা নিজ বিভাগে আসা মাত্রই তাদেরকে ব্যান্ডপার্টি বাজিয়ে বরণ করে নিতে থাকে। এ যেন কোন এক রাজার আগমন।
যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী রিমা সিদ্দিকা বলেন, আজকের দিনটা আমাদের কাছে অনেকটাই ঈদের মত। সাবেকদের সাথে পরিচয় হতে পারছি যা চরম সৌভাগ্যের বিষয়।
এদিকে দুপুর একটার পর থেকে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন ওয়ারফেজ, লালন, আর্টসেল। এর আগে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা মঞ্চে এসে বিশ^বিদ্যালয়ের স্মৃতি রোমন্থন করেন। এছাড়াও উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, পানি সম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর ইমেরিটাস ড. আনিসুজ্জামান, সাবেক মেয়র এ.বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী সহ বিশেষ অতিথিবৃন্দ ও সম্মানিত অতিথিবৃন্দ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ