Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিদেশি সহায়তায় নির্মাণাধীন ৩টি সেতু দক্ষিণাঞ্চলে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ১৯ নভেম্বর, ২০১৬, ১১:১৫ পিএম


ব্যয় হবে আড়াই হাজার কোটি টাকা

পদ্মা বহুমুখী সেতুর পাশাপাশি দক্ষিণাঞ্চলের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সেতু নির্মাণ কাজ শুরুর ফলে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে যাচ্ছে। এসব সেতু নির্মিত হলে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা  ছাড়াও ৩টি সমুদ্র বন্দর এবং দুটি স্থল বন্দরের সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে। ঢাকা-গোপালগঞ্জ-নড়াইল-যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের কালনা’র মধুমতি, ঢাকা-বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা-বরগুনা মহাসড়কের লেবুখালীর পায়রা এবং চট্টগ্রাম-বরিশাল-পিরোজপুর-মংলা-খুলনা মহাসড়কের বেকুঠিয়া’র বলেশ্বর নদীর ওপর এসব সেতু নির্মাণের ফলে সারা দেশের সাথে দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক পরিবহন খাতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটবে। এমনকি এর ফলে দক্ষিণাঞ্চলের মহাসড়কে ফেরি চলাচল যুগেরও অবসান ঘটবে। চট্টগ্রাম, পায়রা ও মোংলা সমুদ্র বন্দরের মধ্যে সড়ক পরিবহন পরিকাঠামোরও ব্যাপক উন্নতি ঘটাবে এসব সেতু। কুয়েত, জাপান ও চীনা অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহায়তায় এসব সেতুর নির্মাণ প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
লেবুখালী সেতু
লেবুখালীর পায়রা নদীর ওপর চার লেনের একটি সেতু নির্মাণে সম্মত হয় কুয়েত উন্নয়ন তহবিল (কেএফআইডি)। সেতুটি নির্মাণে কুয়েত উন্নয়ন তহবিলের সাথে খসড়া ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ২০১১ সালের প্রথমদিকে। আর ‘চূড়ান্ত চুক্তি’ হয়েছে ২০১২-এর ১৩ মার্চ। সর্বনিম্ন দরদাতা চীনা নির্মাণ প্রতিষ্ঠানÑ ‘ঝিয়াং জি’র ১ হাজার ২৭ কোটি টাকার প্রস্তাবটি অনুমোদন শেষে গত ২৪ জুলাই কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে। আগামী ৩৩ মাসের মধ্যে লেবুখালী সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে আশা করছেন প্রকল্প পরিচালক। প্রকল্প ব্যয়ের বর্ধিত অর্থের বেশিরভাগই কেএফআইডি প্রদান করবে।
সেতুটির দু’প্রান্তে ৮৯০ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণের লক্ষে প্রায় ১২ হেক্টর জমি হুকুম দখলসহ-এর নির্মাণ কাজও শুরু হয়েছে ইতোমধ্যে। প্রকল্পটির অওতায় পায়রা নদীর ওপর ১ হাজার ৪৭০ মিটার দীর্ঘ চার লেন যে সেতু নির্মিত হচ্ছে, তার মধ্যে মূল নদীর ওপর সেতুর দৈর্ঘ ৬৩০ মিটার। নদীর দু’পাড়ে ‘সংযোগ সেতু বা ভায়াডাক্ট’ থাকছে ৮৪০ মিটার। যা ‘এক্সট্রা ডোজ  প্রী-স্ট্রেসড কংক্রিট গার্ডার’ পদ্ধতিতে নির্মিত হবে। আর মূল নদীর অংশটি ‘বক্স গার্ডার ক্যাবল স্ট্রেসড’ পদ্ধতিতে নির্মাণ করা হবে বলে নির্মাণ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। সর্বোচ্চ জোয়ার থেকে ৬০ ফুট উচ্চতার লেবুখালী সেতুটি নির্মিত হলে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে কুয়াকাটার দূরত্ব নেমে আসবে মাত্র আড়াইশ’ কিলোমিটারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বছর তিনেক আগে এ সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন।
বেকুঠিয়া সেতু
চীনা আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় চট্টগ্রাম-বরিশাল-পিরোজপুর-মোংলা-খুলনা মহাসড়কের বেকুঠিয়াতে ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু নির্মাণের লক্ষে চীনের সাথে চুক্তিপত্র স্বাক্ষরের পরে ইতোমধ্যে চূড়ান্ত নকশা প্রণয়নও সম্পন্ন হয়েছে। সড়ক অধিদফতর তা অনুমোদনও করেছে। ১ হাজার ৪৯৩ মিটার দীর্ঘ এ সেতুটির মূল নদীর অংশ ৮৯২ মিটার। সংযোগ সড়ক থাকছে প্রায় ২ কিলোমিটার। ইতোমধ্যে এজন্য জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। বলেশ্বর নদীর ওপর ৬০ ফুট উচ্চতার বেকুঠিয়া সেতুটির নির্মাণের লক্ষ্যে নির্মাণ প্রতিষ্ঠান বাছাইসহ পুরো কাজের তদারকি করবে চীনা প্রতিষ্ঠানই। সেতুটি নির্মাণের সমূদয় অর্থই চীন সরকার অনুদান হিসেবে প্রদান করবে বলে জানা গেছে। তবে এখনো নির্মাণ ব্যয় চূড়ান্ত না হওয়ায় ১ হাজার কোটি টাকা ব্যয় ধরে চীন সরকার এখন এর সাড়ে ৬শ’ কোটি টাকা প্রদানের চুক্তি করেছে ইতোমধ্যে। যার মধ্যে মূল সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৪শ’ কোটি টাকা।
সেতুটির সংযোগ সড়কসহ অনুষাঙ্গিক কাজে আরো প্রায় আড়াইশ’ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। যা বাংলাদেশ সরকারকে যোগান দিতে হবে। চলতি অর্থ বছরের মধ্যেই সেতুর নির্মাণ কাজ শুরুর ব্যাপারে আশাবাদী সড়ক অধিদপ্তরের ব্রিজ ডিজাইন জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী। সেতুটির সাথে প্রায় দুই কিলোমিটার সংযোগ সড়ক থাকছে। এজন্য জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে ইতোমধ্যে।
কালনা সেতু
ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ভাটিয়াপাড়া থেকে কালনা হয়ে নড়াইল-যশোর হয়ে বেনাপোলমুখি জাতীয় মহাসড়কের মধুমতি নদীর ওপর প্রয় ৭শ’ মিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে ইতোমধ্যে। এ সেতুটির সাহায্যে গোপালগঞ্জ ছাড়াও বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলাকেও যশোর ও বেনাপোলের সাথে সংক্ষিপ্ত সড়ক পথে সংযুক্ত করবে। জাপান উন্নয়ন তহবিল-জাইকার অর্থায়নে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে যে ১৭টি সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে, কালনা সেতুও তার অন্তর্ভুক্ত।
ইতোমধ্যে এ সেতুটির নকশা প্রণয়নসহ নির্মাণ কাজ তদারকির জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হয়েছে। আগামী ৬ মাসের মধ্যে সেতুটির পরিপূর্ণ নকশা ও দরপত্র দলিলসমূহ পাবার পারে চলতি অর্থবছরের মধ্যে এর দরপত্র আহ্বানের আশা করছেন প্রকল্প পরিচালক। ফলে আগামী বছরের অক্টোবরের মধ্যেই কালনা সেতুর নির্মাণ কাজও শুরু করার লক্ষে এগুচ্ছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর ২৫ জানুয়ারী কালনা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এ সেতুটি নির্মিত হলে পদ্মা সেতু পাড় হয়ে ঢাকার সাথে যশোর ও বেনাপোলের দূরত্ব হ্রাস পাবে প্রায় দেড়শ’ কিলোমিটার। বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের সাথে যশোর ও বেনাপোলের দূরত্বও প্রায় ১শ’ কিলোমিটার কমে আসবে বলে জানা গেছে। ২০১৯ সালের জুনের মধ্যেই কালনা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করার ব্যাপারে আশাবাদী জাইকা সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পটির প্রকল্প পরিচালক।
লেবুখালী, বেকুঠিয়া ও কালনা সেতু নির্মিত হলে তা পদ্মা সেতুকে দক্ষিণাঞ্চলসহ সারা দেশের কাছে আরো অর্থবহ করে তুলবে বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল। পাশাপাশি নদ-নদী ও ফেরি নির্ভর দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায়ও যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন মহলটি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ