Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খতিয়ানে জমির মালিক সাঁওতালদের বাপ-দাদারা সচেতন নাগরিক

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৯ নভেম্বর, ২০১৬, ১১:০৯ পিএম

খতিয়ান অনুযায়ী গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের রংপুর চিনিকলের জমির মালিক সাঁওতাল এবং স্থানীয় দরিদ্র মানুষের বাপ-দাদারা। গাইবান্ধায় সাঁওতালদের উপর অমানবিক নির্যাতনে দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের দুর্ভোগ পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা ও নাগরিকদের করণীয় শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সচেতন নাগরিকরা এ তথ্য জানান। গতকাল শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এ সংবাদ সম্মেলন  এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সচেতন নাগরিকদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ আদিবাসী  ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত, বিশিষ্ট গবেষক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পংকজ ভট্টাচার্য, নিজেরা করি’র সমন্বয়কারী খুশী কবির উপস্থিত ছিলেন।
গত ৬ নভেম্বর গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের রংপুর চিনিকলের জমিতে আখ কাটাকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষ হয়। এ সংঘর্ষের ঘটনায় তিনজন সাঁওতাল নিহত হন। পুলিশ ও সাঁওতালদের অনেকে আহত হন। সাঁওতালদের গ্রেফতারও করে পুলিশ। শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ জমির মালিক সরকার দাবি করা হলেও সাঁওতালদের দাবি এ জমি তাদের পূর্বপুরষদের।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সরকারের মন্ত্রী, সচিব থেকে শুরু করে অনেকে মিডিয়ার সামনে বলেছেন এই জমি কখনও সাঁওতালদের ছিল না। এটি সম্পূর্ণ অসত্য ও জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপকৌশল। আমরা যে কথাটি বলতে চাই, তা হল এটা সাঁওতাল এবং স্থানীয় দরিদ্র মানুষের বাপ-দাদার জমি। আমরা এই জমির খতিয়ান কপি পেয়েছি। তাতে দুদু মাঝি, দুর্গা মাঝি, জলপা মাঝি,  জেঠা কিস্কু, মঙ্গলা মাঝি, মুংলি, চারো মাঝি, সুকু মাঝি- এই সব অনেক নাম পেয়েছি, যাদের জমি ছিল বাগদা ফার্মের মধ্যে। সাঁওতালরা বলেছেন, সাঁওতাল বাগদা সরেনের নাম অনুসারে এই ফার্ম পরিচিত পায়। সঞ্জীব দ্রং বলেন, ১৯৬২ সালের ৭ জুলাই তৎকালীন প্রাদেশিক সরকারের সঙ্গে সুগারমিল কর্তৃপক্ষের চুক্তি হয়েছিল। সেই চুক্তির কপি পেয়েছি। সেই চুক্তিতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, আখ চাষের জন্য এই জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। যদি ভবিষ্যতে কখনও আখ চাষ না হয় বা আখ ছাড়া অন্য কিছু চাষ হয় তবে এ জমি উদ্ধার করে প্রকৃত মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। ফিরিয়ে দিতে খরচ হলে তাও সরকার দেবে বলে চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, পুলিশ ও মিল কর্তৃপক্ষ দলবেধে একত্রে মানুষের বাড়িঘর জ্বালিয়ে ছারখার করতে পারে না। উচ্ছেদ কার্যক্রমেরও আইনী প্রক্রিয়া করা হয়নি। এখানে শুধু বেআইনী শুধু নয়, অসভ্য কাজও হয়েছে।
আদিবাসীরা আমাদের বলেছেন, তারা বাপ-দাদার জমিতেই পুনর্বাসন চান, নতুন কোন জমিতে নয়। আমাদের তারা এও বলেছেন, জীবন রেখে কী হবে যদি বাপ-দাদার জমি বেদখল হয়ে যায়’ বলেন, আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক
সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ৬ নভেম্বরের ঘটনা রাষ্ট্রীয় অবিচারের শ্রেষ্ঠ দৃষ্টান্ত। পুলিশ গুলি করে ৩ জনকে হত্যা করেছে। আরও মৃতের খবর আপনারা কয়েকদিন পরে পাবেন। কারণ লাশ কোথায়  রেখেছে না রেখেছে তা হয়তো আমরা এ মুহূর্তে জানি না। এ ঘটনা মানবাধিকারের লঙ্ঘণ, ভূমি অধিকার লঙ্ঘণ এবং এটা সংবিধানের লঙ্ঘণ।
গাইবান্ধায় সাঁওতালদের উপর হামলার ঘটনায় সরকারের কাছ থেকে পূর্ণব্যাখ্যা দাবি করে আবুল মকসুদ বলেন, ‘আমরা ব্যাখ্যা দিয়েছি। আপনারা কেন এমন করলেন তার ব্যাখ্যা দিন। পূর্ণব্যাখ্যা মানে তদন্ত রিপোর্ট। নিহত প্রত্যকের পরিবারকে ২০ লাখ টাকা করে ও আহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ৫ লাখ টাকা করে দেওয়ারও দাবি জানান।
আবুল বারাকাত বলেন, জমি অধিগ্রহণের সময় মৌজা ও খতিয়ানের নামের সঙ্গে মানুষের নামও  লেখা হয়েছে। মানুষের নামের ৭৫ ভাগ আদিবাসী। সাড়ে ৫ হাজার বিঘা জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ৪ হাজার বিঘাই সাঁওতালদের।
তিনি বলেন, লিজ থেকে লাভের একটা হিসাবও করেছি আমরা, তাতে আসে বাইশশ’ কোটি টাকা। ক্ষতিপূরণের প্রসঙ্গটিও যে এসেছে তারও ৭৫ শতাংশ সাঁওতালসহ অন্যান্য আদিবাসীরা পাবেন।
প্রয়োজনীয় শর্তগুলো পূরণ না হওয়া সত্ত্বেও জেলা প্রশাসন চিনিকলের জমিতে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেছে জানিয়ে অর্থনীতিবিদ বারাকাত ওইস্থানে কোন অর্থনৈতিক অঞ্চল না করার ঘোষণা দিতেও সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে সাতটি দাবি তুলে ধরে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আদিবাসী হত্যা বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত, মানবাধিকার লঙ্ঘণের সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় এনে বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করানো, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোতে ক্ষতিপূরণ ও নিরাপত্তাসহ নিদের জমিতে বসবাসের পূর্ণ নিশ্চয়তা ও সরকারকে আহতদের চিকিৎসার দায়-দায়িত্ব নিতে হবে।
এছাড়া সব মিথ্যা মামলা বাতিল করে আদিবাসীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত, ক্ষতিগ্রস্ত ফুলমনি মুরমু শিশু শিক্ষা ও সংস্কৃতি কেন্দ্র সরকারি খরচে নির্মাণ ও ঘটনার জন্য দায়ী স্থানীয় প্রশাসনকে অবিলম্বে প্রত্যাহারেরও দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজল  দেবনাথ, ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমিন মুরশিদ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের পরিচালক রীনা রায়, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ