Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

বগুড়া পাসপোর্ট অফিসের রাজস্ব আদায় ১২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৯ নভেম্বর, ২০১৬, ১০:৪২ পিএম | আপডেট : ১:৩৪ এএম, ২০ নভেম্বর, ২০১৬

বগুড়া অফিস : বেশ কিছু প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে বর্তমানে বগুড়ার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস চত্বর এখন দালালমুক্ত। ফলে দালালের খপ্পরে পড়ে অসহায় মানুষের আর্তনাদ, হারানোর ভয়, কালক্ষেপণ আর ভোগান্তি কমেছে সেবা প্রত্যাশীদের। তবে এক বছর আগে এই নতুন অফিসের যাত্রা শুরুর পর ৩৪ হাজার পাসপোর্ট প্রদানের বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা বলে সূত্রে জানা গেছে।
সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১২ নভেম্বর বগুড়া জেলা প্রশাসন ভবনের অভ্যন্তর থেকে শহরের কান্দার এলাকায় নির্মিত নিজস্ব অফিসে স্থানান্তর হয়। এখানে আসার পর থেকেই স্থানীয় এক গডফাদারের ব্যবস্থাপনায় পাসপোর্ট অফিস চত্বর ও চত্বরের বাইরে গড়ে ওঠে শক্তিশালী দালাল চক্র। চক্রটির সদস্যরা কর্মকর্তাদের নাম ভাঙিয়ে পাসপোর্টের নির্ধারিত সরকারি ফির বাইরে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে সেবা প্রত্যাশীদের অতিষ্ঠ করে তুলেছিল। কিন্তু সম্প্রতি এই নতুন পরিচালক যোগদান করার পর পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তনের সূচনা হয়।
এ ব্যাপারে বগুড়া পাসপোর্ট অফিসের পরিচালক মো: সালাহ উদ্দিন ইনকিলাবকে বলেন, ‘‘আমি এখানে আসার পর দালালের দৌরাত্ম বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছি। সরকারিভাবে সাধারণ পাসপোর্টের জন্য ৩ হাজার ৪৫০ টাকা যা পাওয়া যাবে ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে, আর জরুরিভাবে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে ৬ হাজার ৯০০ টাকায়। তবে অনেক সময় পাসপোর্ট নির্ধারিত সময়ে না পাওয়ার কারণ হচ্ছে, পুলিশ রিপোর্টের ওপর নির্ভর করতে হয়। গত বছরের ১২ নভেম্বর নতুন ভবন উদ্বোধনের পর এ যাবৎ প্রায় ৩৪ হাজারের অধিক মানুষ পাসপোর্টের সেবা পেয়েছে। এছাড়া রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় ১২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।
কিন্তু কিছু দালাল বিভিন্নভাবে মানুষকে পটিয়ে ৫শ’ থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়ার অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ায় এখন পুরো চিত্র পাল্টে গেছে। উচ্ছেদ হয়েছে দালাল চক্র। তবে জনবল সঙ্কটের কারণে সেবা প্রত্যাশীরা এখনো পুরো সেবা পাচ্ছে না বলে স্বীকার করেণ পরিচালক সালাহউদ্দিন। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, উপ-সহকারী পরিচালক, সুপারিনটেনডেন্ট, উচ্চমান সহকারীর কাজ করছেন মাত্র একজন। অর্থাৎ বর্তমানে ৪ জনের কাজ পরিচালিত হচ্ছে একজন দিয়ে।’
প্রতিষ্ঠানের কর্মরতরা জানান, আমরা এখানে সেবা দেয়ার জন্য এসেছি। সাধারণ জনগণ যেন এখানে এসে কোনো দ্বিধায় না পড়ে, আইন অনুযায়ী সবকিছু সঠিক সময়েই হচ্ছে। তারা আরো জানান, অতীতে কী হয়েছে জানি না, কিন্তু বর্তমানে বগুড়া অফিস ঝামেলা আর দালালমুক্ত। আমরা চেষ্টা করি সময়মতো পাসপোর্ট দিতে। প্রচার করছি অনলাইনের মাধ্যমে কিভাবে আবেদন করতে হয়।
সাধারণ মানুষ নির্ভয়ে দালালমুক্ত পরিবেশে পাসপোর্ট করছে। জনসচেতনতার জন্য বিভিন্ন ব্যানার, নিজের পাসপোর্ট নিজেই করা, অনলাইনে আবেদন, নিজেই ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করা, তথ্য গোপন না করাসহ বিভিন্নভাবে আমরা জনগণকে সচেতন করার চেষ্টা করছি।
সমস্যাও অনেক, সফলও হয়েছি। তবে শতভাগ করতে একটু সময় লাগবে। পাসপোর্ট সেবা নিতে আসা বগুড়ার শেরপুরের আফজাল হোসেন জানান, আমি সউদীতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পাসপোর্ট করছি। বর্তমানে আমি এখানে এসে কর্মকর্তাদের সেবা পেয়ে খুশি।
তারা আন্তরিকভাবেই আমাদের সেবা করছে। তবে কোনো দালাল তার কাছে আসেনি বলে তিনি জানান। জয়পুরহাট মোগলাহার থেকে আসা মোমিন জানান, অত্যন্ত স্বচ্ছভাবে আবেদন জমা, আঙ্গুলের ছাপ, ছবি তোলার কাজ করছে। আমি সরকারিভাবে যে টাকা দেয়ার বিধান রয়েছে সে টাকাই দিয়েছি।
কেউ আমার কাছ থেকে বেশি দাবি করেনি বা এখানে এসে কোনো দালালও দেখিনি। এখানকার সেবা পেয়ে আমি খুশি। সেবা নিতে আসা আরো অনেকে জানান, বর্তমানে পাসপোর্ট অফিসের পরিবেশটা অন্যরকম। যা শুনেছি তার উল্টো। আমরা এমন পরিবেশ চাই। শুনেছি দালালদের দাপট ছিল, কিন্তু কই কোনো দালাল নেই, অফিসের কেউই বেশি টাকা নেয়নি বা হয়রানির শিকার হইনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ