Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৫ জেলায় আমন ধান কাটা শুরু

ভালো ফলনেও দাম নিয়ে কৃষকের দুশ্চিন্তা

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ১৮ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০০ এএম, ১৮ নভেম্বর, ২০১৬

ধানের শীষে সোনালী আভা। আদিগন্ত বিস্তৃত মাঠে পাকা ধান। সবে শুরু হয়েছে ধান কাটা। ক্ষেতের আইল আর কৃষকের উঠানে ধানের ছড়াছড়ি। ফলন ভালো হয়েছে, এতে কৃষক খুশি। এরপরও চিন্তার ভাঁজ কপালে। ধানের ন্যায্য দাম পাবে কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় প্রান্তিক চাষিরা।
চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাঁচ জেলায় শুরু হয়েছে আমন ধান কাটা।
গতকাল পর্যন্ত ১৩ শতাংশ ধান কর্তন হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, এবার এ অঞ্চলে আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। উৎপাদনও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। চট্টগ্রাম ছাড়াও কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরে ধান কাটা শুরু হয়েছে। আমন ঘরে তোলার পাশাপাশি বোরো আবাদের প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসেবে এবার চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাঁচ জেলায় ৫ লাখ ৫৭ হাজার ৪২৩ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ শতাংশ বেশি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৮ হাজার ৭৮৫ হেক্টর বেশি জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলায় ১ লাখ ৭৮ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। কক্সবাজারে ৭৭ হাজার ৯৫০ হেক্টর, নোয়াখালীতে ১ লাখ ৫৬ হাজার ২০৩ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়। এ জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ শতাংশ বেশি জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। কৃষকরা বলছেন, অতিবর্ষণের কারণে যেসব জমিতে আউশ ফসল নষ্ট হয়ে গেছে সেখানেও আমনের আবাদ হওয়ায় আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। ফেনীতে ৬৪ হাজার ৪১০ হেক্টর এবং লক্ষ্মীপুরে ৭৮ হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়। ফেনীতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ শতাংশ আর লক্ষ্মীপুরে ৭ শতাংশ বেশি জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে।
এবার ১২ লাখ ৮৪ হাজার ৫২৫ মেট্রিক টন উৎপাদন (চাল) লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে। আবাদ বেশি হওয়ায় এবং এখনও পর্যন্ত যে চিত্র তাতে ফলনও বেশি হওয়ায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা।
এ অঞ্চলে তিন জাতের আমন আবাদ হয়েছে। হাইব্রিডের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রতি হেক্টরে ৩.৩০ মেট্রিক টন, উফশী ২.৭২ মেট্রিক টন এবং স্থানীয় জাতের ১.৭৬ মেট্রিক টন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত হাইব্রিড পাওয়া যাচ্ছে প্রতি হেক্টরে ৩.৮ মেট্রিক টন, উফশী ২.৯ মেট্রিক টন এবং স্থানীয় ১.৪ মেট্রিক টন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মোঃ বছির উদ্দিন গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, এবার আবহাওয়া আমন আবাদের পুরোপুরি অনুকূলে ছিল। বীজের পাশপাশি সার এবং কীটনাশক সরবরাহও ছিল স্বাভাবিক। ক্ষেতে বড় ধরনের কোন রোগ-বালাই কিংবা পোকা-মাকড়ের আক্রমণ হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, কৃষি বিভাগের কর্মীরা প্রতিটি এলাকায় কৃষকদের সাথে থেকে পরিস্থিতি মনিটর করেছে।
তিনি নিজেও অনেক এলাকায় আলোর ফাঁদ দিয়ে পোকা দমন কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন জানিয়ে বলেন, কীটনাশকের বদলে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে চাষীদের পোকা-মাকড় নিধনে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এতে করে চাষাবাদের খরচ যেমন কমছে তেমনি কীটনাশকমুক্ত খাদ্যও পাওয়া যাচ্ছে। এখনও পর্যন্ত যে ফলন হচ্ছে তাকে পুরোপুরি বাম্পার বলা না গেলেও ফলন খুব ভালো হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে কৃষকের ঘরে ধান উঠতে শুরু করলেও দাম নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে চাষীরা। গত বছরও আমনে ন্যায্য মূল্য পায়নি কৃষক। বোরো ধানেও বড় ধরনের মার খেতে হয়েছে কৃষকদের। সবচেয়ে ব্যয়বহুল ফসল বোরো। অথচ পানির দামে বিক্রি হয়েছে ধান। এ লোকসান পোষাতে হলে আমনের ভালো দাম পেতে হবে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত বাজারে ধানের দাম নিম্নমুখী। মোটা চালের দাম ৪০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে অনেক আগে। অথচ বাজারে ধানের দাম পাচ্ছে না কৃষক।
খাদ্য বিভাগের তথ্যমতে, গতকাল চট্টগ্রামের বাজারে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম ছিল ৩৪.৯৮ টাকা। আর মাঝারি ধরনের চাল প্রতি কেজি ৩৯ টাকা। তাদের হিসেবে নিম্নমানের ধানের দাম ছিল প্রতি কেজি ১৯.৫৮ টাকা, আর ভালোমানের ধানের দাম প্রতি কেজি ২০ টাকা। শহরে এবং গ্রামে চালের দাম অভিন্ন থাকলেও গ্রামে ধানের দাম নিম্নমুখী। নতুন উঠা আমন প্রতি কেজি ১৪ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে খাদ্য বিভাগ প্রতি বছর আমন সংগ্রহ করে। তবে গতকাল পর্যন্ত আমন সংগ্রহের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত পায়নি খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ