পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আল্লাহ তাআলা মানবজাতিকে সম্মানিত করেছেন ওহির জ্ঞান ও জীবন বিধান দিয়ে। সেই ওহির জ্ঞান ও বিধি বিধান মানবজাতির কাছে পৌঁছানোর জন্য তিনি প্রেরণ করেছেন যুগে যুগে অসংখ্য নবী রাসূল। তাদের পর হক্কানি আলেম উলামাদের মাধ্যমে ওহির জ্ঞান ও বিধি বিধান মানুষের ওপর পৌছে দেয়ার দায়িত্ব। জগত্বাসীর হেদায়েতের জন্য আল্লাহ যতদিন চান ততদিন আলেম উলামাদের মাধ্যমে আসমানি সম্পদের বহমান রাখবেন। আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম এসব কথা বলেন।
গুলিস্তানস্থ ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে জামে মসজিদের খতিব আল্লামা মুহিউদ্দীন রাব্বানী জুমার খুৎবায় বলেন,আল্লাহ যতদিন চান ততদিন আলেম উলামাদের মাধ্যমে আসমানি সম্পদের বহমান রাখবেন। আল্লাহ তাআলা ওহির জ্ঞান ও বিধি বিধান মানবজাতির কাছে পৌঁছানোর জন্য তিনি প্রেরণ করেছেন যুগে যুগে অসংখ্য নবী রাসূল। তাঁরা ছিলেন জগত্বাসীর জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে অনেক বড় করুণা ও রহমতস্বরূপ। আল্লাহর রহমতের সেই নবুয়তি ধারা হজরত আদম (আ.) থেকে শুরু হয়ে সমাপ্ত হয়েছে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর মাধ্যমে। তিনি শেষ নবী। তাঁর পর আর কোনো নবী এই দুনিয়ায় আগমন করবেন না। তবে তিনি রেখে গিয়েছেন একদল সোনালি মানুষ। যাঁদের ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ ঘোষণা দিয়েছেন, ‘রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম ওয়ারাদ্বু আনহু’ (তাঁরা আল্লাহর ওপর সন্তুষ্ট আল্লাহ তাঁদের ওপর সন্তুষ্ট)। তাঁদের বলা হয় ‘সাহাবা’। তাঁরা সরাসরি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে কোরআন সুন্নাহর জ্ঞান লাভ করেছেন। তাঁরা রাসূলুল্লাহ (সা.) এর প্রথম উত্তরাধিকারী। সাহাবায়ে কেরামের পর এই আসমানি সম্পদের উত্তরাধিকারী হয়েছেন তাবেইরা। এরপর তাবেতাবেইরা। এরপর হক্কানি আলেমদের মাধ্যমে এভাবেই চলমান রয়েছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে আসমানি আমানত রক্ষার পবিত্র ধারা। আল্লাহ যত দিন চাইবেন এ ধারা পীর মাশায়েখ, হাফেজ ক্বারী এবং আলেম উলামাদের মাধ্যমে বহমান রাখবেন।
যুগে যুগে যাঁরা এই আসমানি আমানত রক্ষা করে আসছেন, তাঁরাই যুগের হক্কানি উলামায়ে কেরাম। যাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আজ আমাদের হাত পর্যন্ত পৌঁছেছে তাফসির, হাদিস, ফিকহ ও অন্যান্য ইসলামী শাস্ত্রগুলোর সুবিন্যস্ত বিশাল বিশাল গ্রন্থাবলি। সাধারণ মানুষজন এসব গ্রন্থাবলির জ্ঞান মসজিদ, মাদরাসা, মাহফিল, খানকাহ ও দাওয়াতে তাবলীগের মাধ্যমে অর্জন করে আসছে। খতিব বলেন, আলেম উলামাদের জাতির সামনে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য ঘাদানিকের সমন্বয়ে গঠিত তথাকথিত গণকমিশন ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও মিথ্যা তথ্যে ভরপুর ১১৬ জন আলেম এবং হাজারখানেক মাদরাসার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনে জমা দিয়েছে। এই নজরদারি ও তালিকাবাজির অধিকার তাদেরকে কে দিল? তারা তো সরকারি কোনো সংস্থা বা বাহিনীর লোক না! হাজারো মাদরাসাকে সন্ত্রাসের সঙ্গে যুক্ত করে তালিকাভুক্ত করার উদ্যোক্তা গণকমিশন নামের এই ধৃষ্টতা কেন্দ্রটির সঙ্গে যারা প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত এবং যারা তাদের সমর্থক ও পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
উবাদা ইবনে সামেত (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘ওই ব্যক্তি আমার আদর্শের ওপর নেই, যে আমাদের বড়দের সম্মান করে না, ছোটদের স্নেহ করে না এবং আমাদের আলেমদের প্রাপ্য মর্যাদা প্রদান করে না।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২২১৪৩)আল্লাহ আমাদের সকলকে এ জাতীয় কাজ থেকে হেফাজত করুন, আমীন।
মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী বাইতুল মামুর জামে মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুর রহীম কাসেমী আজ জুমার বয়ানে বলেন, মানুষ আল্লাহ তাআলার সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ সামাজিক জীব। একজন অন্য জনের সাথে কথাবার্তা, আলাপ আলোচনা, আচার ব্যবহার ও উঠা বসা করা ব্যতিত তার নিজ জীবন পরিচালনা অসস্তিকর ও অসম্ভব। এজন্যে প্রয়োজনের তাগিদে তাকে কথা বলতেই হয়। অন্যের সাথে আলাপ করতেই হয়। তবে এ কথাবার্তা আলাপ আলোচনা হওয়া চাই শালিনতা বজায় সাপেক্ষে উত্তম পদ্ধতিতে। ভদ্রোচিত, শিষ্টাচার সম্পন্ন, নম্র ও কোমল ভাষায়। যা পরস্পরের মাঝে আন্তরিকতা হৃদ্যতা সৃষ্টিতে, শান্তি, সুশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সহায়ক হয়। প্রত্যেকটি কথা, আলাপ, আচারণ, ব্যবহার যেন পরিগণিত হয় আদর্শময়ী ও ইবাদত তুল্য রূপে। সে লক্ষে চাই প্রত্যেকের ব্যবহার. আলাপচারিতা ও কথাবার্তায় সদালাপী, সংযমী ও সদ্ভাবী গুনাবলী। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, তোমরা মানুষের সঙ্গে সদালাপ করবে। (সূরা বাকারার, আয়াত নং ৮৩)। তুমি তোমার কণ্ঠস্বর নিচু করো; নিশ্চয়ই কণ্ঠস্বরের মধ্যে গর্দভের সুরই সবচেয়ে অপ্রীতিকর। (সূরা লোকমান. আয়াত নং ১৯)। তিনি আরও বলেন, ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করো এবং সঠিক কথা বলো; তাহলে তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের কাজ সংশোধন করে দিবেন এবং তোমাদের পাপ ক্ষমা করবেন। (সূরা আহজাব, আয়াত নং ৭০ ও ৭১)। সূরা হা-মিম সাজদাহর ৩৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, আর ভালো ও মন্দ সমান হতে পারে না। উৎকৃষ্টতা (ভালো) দিয়ে মন্দকে প্রতিহত কর। ফলে যার সাথে তোমার শত্রæতা আছে, সে তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে যাবে। এজন্য রাসূল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে। (বুখারি, হাদিস : ৬০১৮)। খতিব বলেন, বাকশক্তি তথা কথা বলার শক্তি আল্লাহ তায়ালার বড় নেয়ামত। এ নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা চাই। বলার শক্তি আছে বলে যা মনে চায় তাই বলা উচিৎ নয়। আল্লাহর বিধানের সীমাবদ্ধতা রক্ষা করা দরকার। অন্যথায় তিনি ইচ্ছা করলে এই মহান নেয়ামত যে কোন সময় তুলে নিতে পারেন। তখন আর হাজারও আফসোসে কোন কাজ হবে না। রাসূল (সা.) বলেন, হে মুয়াজ ! নিজের জবানকে নিয়ন্ত্রন কর। কথাবার্তার হেফাজাত কর। এটাই আমার পুরা শরীয়ত। আর এতেই রয়েছে পূর্নাঙ্গ দ্বীন। তিনি আরও বলের যে ব্যক্তি তার জবান (কথাবার্তা) ও লজ্জাস্থানের জিম্মাদার হতে পারবে আমি তার জান্নাতের জিম্মাদার। (বুখারী শরীফ)। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে তার দেয়া বিধানানুযায়ী কথাবার্তার শালীনতা, আলাপচারিতার মাধুর্যতা ও পরাস্পরের সাথে আচার ব্যবহারের শিষ্টতা বজায় রেখে শান্তি শৃংখলতার সাথে জীবন যাপন করার তৌফিক দান করেন। আমীন।। ঢাকার ডেমরার ঐতিহ্যবাহী দারুননাজাত সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসা মসজিদের খতিব মাওলানা মো. মনিরুল ইসলাম আজ জুমার বয়ানে বলেন,
আল্লাহকে ভয় করলে আল্লাহ মানুষের ইজ্জত বাড়িয়ে দেন। জালিম বাদশাও যদি আল্লাহর ভয়ে কোনো গুনার কাজ ছেড়ে দেয়া তা’হলে ক্ষমা লাভ করা সম্ভব। প্রত্যেককেই মু’ত্তাকি পরহেজগার হতে হবে। তাকওয়া অর্জন করতে হলে মু’ত্তাকি পরহেজগার আলেমদের কাছ থেকে দ্বীনের শিক্ষা লাভ করতে হবে। খতিব বলেন, শুধু বই পুস্তক পড়েই প্রকৃত মানুষ হওয়া যায় না। নেককার মানুষের ছোহবত ছাড়া প্রকৃত মানুষ হওয়া যায় না। বেশি বেশি তওবাহ করার আহবান জানিয়ে খতিব বলেন, মু’ত্তাকি ব্যক্তিদের ছোহবতে চলতে পারলে পথহারা বিপদগামীদের অনুসরণ থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। আল্লাহ সবাইকে কবুল করুন। আমীন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।