Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ফার্মের মুরগির মতো হয়ে যাচ্ছে ফ্ল্যাটের শিশুরা : প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ মে, ২০২২, ১২:০১ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্ট সকলকে বিশেষ করে অভিভাবকদেরকে তাদের শিশুদের বাইরে খেলাধূলা করতে উৎসাহিত করার আহবান জানিয়েছেন। যা তাদের যে কোন ধরনের ভুল পথে যাওয়া বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশে সহায়ক হবে। কারণ জাতি গঠনে এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, আমাদের শিশুরা, এখন তো সব ফ্ল্যাটে বাস করে, ফ্ল্যাটে বাস করে করে তারা ফার্মের মুরগির মতোই হয়ে যাচ্ছে। হাঁটা-চলা... আর এখনতো মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ আর আইপ্যাড এগুলো ব্যবহার করে সারাক্ষণ ওগুলোর মধ্যে পড়ে থাকা। এটা আসলে মানসিক ভাবে, শারীরিক ভাবে সুস্থতার লক্ষণ না।

প্রধানমন্ত্রী শিশুদেরকে কিছু সময়ের জন্য হলেও বাহিরে গিয়ে মাঠে খেলাধূলা করা এবং দৌড়ঝাপ দেয়ার সুযোগদানে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান। এতে শিশুদের সব ধরনের শারিরীক ও মানসিক বিকাশ ঘটবে। সরকার প্রধান আরও বলেন, আমি সকল অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি, আপনারা আপনাদের শিশুদের লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধূলার প্রতিও মনোযোগী হবেন। তাহলে শিশুরা আর ভুল পথে যাবে না।

গতকাল দেশের ক্রীড়াঙ্গনে গৌরবোজ্জল অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ৮৫ ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব ও সংগঠককে ‘জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার’ ‘২০১৩-২০২১’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ সব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

শেখ হাসিনা বলেন, খেলাধূলা শরীরচর্চা এবং সাংস্কৃতিকচর্চা একটি জাতির জন্য অপরিহার্য। এ কথা সবাইকে মনে রাখতে হবে আমাদের একেবারে ছোট শিশু থেকে সকলকে উৎসাহিত করতে হবে এবং সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। তাহলেই আমাদের ছেলে-মেয়েরা মানুষের মত মানুষ হতে পারবে। তাদের মনটাও ভালো থাকবে, তারা ভালভাবে লেখাপড়া শিখবে এবং বিপথে যাবেনা- এটাই আমার বিশ^াস।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, খেলাধুলা এক ধরনের শরীর চর্চা। এতে আমাদের ছেলে-মেয়েরা শারীরিক এবং মানসিকভাবেও যথেষ্ট উপকৃত হয়। সেই সাথে আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে অনেক ধরনের খেলাধূলা ছিল, সেগুলো আবার সচল করতে হবে। এ জন্য আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতা, আন্তঃকলেজ প্রতিযোগিতা এবং আন্তঃবিশ^বিদ্যালয় প্রতিযোগিতাগুলো যেন ব্যাপকভাবে চলে সে ব্যবস্থা নিতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল, সাঁতার, হকিসহ বিভিন্ন খেলার সাথে সাথে দেশিয় খেলাগুলো যেমন: ডাংগুলি, সাত চারা গোল্লাছুট থেকে শুরু করে হাডুডুসহ যে সব খেলাগুলো প্রচলিত ছিল, সেগুলো আবার চালু করতে হবে। আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে হবে। যেটা আমরা ফুটবলের ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায় থেকেই আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতা শুরু করেছি। ফলে আমাদের অনেক নতুন নতুন খেলোয়াড় সৃষ্টি হচ্ছে এবং তারা জাতীয় পর্যায়েও বিশেষ অবদান রাখছে। কাজেই এদিকে সকলে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবেন।

এ ব্যাপারে যে ধরনের সহযোগিতা দরকার সরকার তা করে যাচ্ছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, আমরা চাই এ খেলাধূলার বিষয়ে আমাদের আরো উদ্যোগী হতে হবে।
রাজধানী ঢাকায় খেলাধুলার জায়গা কম উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা কিছুটা উদ্যোগ নিয়েছি প্রত্যেক এলাকাতেই যেন খেলার মাঠ থাকে। যেখানে খালি জায়গা পাচ্ছি খেলার মাঠ করে দিচ্ছি। কারণ প্রত্যেকটা এলাকাতেই খেলার মাঠ থাকা একান্তভাবে প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে সংসদ ভবনের পাশে বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের খেলাধূলার জন্য একটা একাডেমীও নির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে।

’৯৬ সালে তিনি প্রথম সরকার গঠনের পর বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের অলিম্পিকে আমেরিকা থেকে ৭২টি পদক জয় করে আনার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী তাদের আরো পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল পুরস্কার প্রাপ্তদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন এবং অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব উপস্থিত ছিলেন এবং স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মেসবাহ উদ্দিন।

খেলাধূলার মানোন্নয়নে সরকার প্রত্যেক উপজেলা পর্যায়ে যে মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ করে দিচ্ছে সে কাজ আরো দ্রুত সম্পন্ন করার জন্যও প্রধানমন্ত্রী এ সময় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে তাগিদ দেন।
তিনি বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে খেলাধুলার সুবিধাদির উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রথম পর্যায়ে দেশের ১২৫টি উপজেলায় শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ১৮৬টি উপজেলায় শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ে দেশের অবশিষ্ট ১৭১টি উপজেলায় শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের লক্ষে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ চলমান রয়েছে। তবে আমি মনে করি এ ব্যাপারে যাতে আর সময় না নেয়া হয় সেটা দেখতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার পর্যটন জেলা কক্সবাজারের দৃষ্টি নন্দন আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম ও ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণ করে দিচ্ছে উল্লেখ করে, সিলেটেও আন্তর্জাতিক মানের ষ্টেডিয়াম নির্মাণ করা হচ্ছে এবং দু’টি জায়গাতেই পাহাড়ের নৈসর্গিক দৃশ্য এবং সমুদ্রের পাশটি উন্মুক্ত রেখেই তা করা হচ্ছে।

পাশাপাশি সরকার প্রতি জেলায় জেলায় যে স্টেডিয়াম করে দিচ্ছে তা যেন সারাবছর ব্যবহার হয়, সকল খেলার জন্য তা উন্মুক্ত করে দেয়ারও প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেন। সে সব জায়গায় যদি ক্রিকেট পিচ থাকে তাহলে সেগুলো যাতে সংরক্ষণ করা হয় সেদিকেও তিনি দৃষ্টি দেয়ার আহ্বান জানান।

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালকে আর্থিক অনুদান দিলেন প্রধানমন্ত্রী
অসহায় ও দরিদ্র রোগীদের জন্য বিনামূল্যে হার্টের ভাল্ব, স্টেন্ট (রিং), পেসমেকার কিনতে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালকে ৩ কোটি ৭১ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়ার কাছ থেকে অনুদানের চেক গ্রহণ করেন জাতীয় হদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ডা. মীর জামাল উদ্দিন। এসময় উপস্থিত ছিলেন সহযোগি অধ্যাপক ও কার্ডিয়াক সার্জন ডা. আশরাফুল হক সিয়াম। অনুদানের চেক গ্রহণকালে ডা. মীর জামাল উদ্দিন প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এ অনুদান গরিব ও অসহায় রোগীদের চিকিৎসকার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখবে। তিনি জানান, গতবছরের আগষ্ট মাসে প্রধানমন্ত্রী অসহায় হদরোগীদের মধ্যে বিনামূল্যে চিকিৎসকা সামগ্রী বিতারনের জন্য ৩ কোটি ২৯ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছিলেন সেই অনুদানের টাকা দিয়ে ৩০০ স্টেন্ট (রিং), ১৫০টি ভাল্ব, ১০০টি পেসমেকার ক্রয়করে রোগীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। এখন প্রাপ্ত অনুদান দিয়ে চিকিৎসকা সামগ্রি ক্রয়করে অসহায় সেবা তহবিলের মাধ্যম বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। হৃদরোগীদের সরকারি পর্যায়ে চিকিৎসা সেবা নেয়ার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল জাতীয় হদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। অনেক রোগীদের ভাল্ব প্রতিস্থাপন, পেসমেকার স্থাপন এবং রিং বসাতে হয়। তাদের অনেকেই আর্থিক সঙ্কটের কারণে সেই চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ পান না। বিষয়টির জানার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর পর দুইবার এই অনুদান দিলেন।



 

Show all comments
  • Mahmudul Hoque Jalis - মাহমুদুল হক জালীস ১২ মে, ২০২২, ৭:৩০ এএম says : 0
    সত্য এবং সুন্দর বলেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আমাদের এখন উচিত এই সমস্যার সমাধানের জন্য শিশুদের নিয়ে ভাবা। তাদেরকে বেড়ে উঠতে সহযোগিতা করা।
    Total Reply(0) Reply
  • Sonnet Az ১২ মে, ২০২২, ৭:৩১ এএম says : 0
    আমাদেরকে একটা মাঠের ব্যবস্থা করে দেন, আমাদের সন্তানদের জন্য। আমাদের ছোটবেলায় আগে এলাকায় তিনটা মাঠ ছিল, এখন একটিও নেই।
    Total Reply(0) Reply
  • Nazrul Islam ১২ মে, ২০২২, ৭:৩১ এএম says : 0
    প্রতিটি পাড়া মহল্লায় একটি করে বড় মাঠ একান্ত দরকার।
    Total Reply(0) Reply
  • Sabia Islam Santa ১২ মে, ২০২২, ৭:৩১ এএম says : 0
    শুধু বাচ্চারা না মানুষরাও এখন ফার্মের পশু পাখি হয়ে গেছে। সমাজ ,সামাজিকতা,মূল্যবোধ কোন কিছুই এখন নেই ।সব কৃত্রিম।
    Total Reply(0) Reply
  • Dewan Golam Haider Khokon ১২ মে, ২০২২, ৭:৩২ এএম says : 0
    That is our great prime minister. So we believe our p.m
    Total Reply(0) Reply
  • Rihanur Rahoman Shohag ১২ মে, ২০২২, ৭:৩২ এএম says : 0
    খেলার মাঠ না থাকলে আর খেলার পরিবেশ না থাকলে তো এমন হবেই।
    Total Reply(0) Reply
  • Sohel Rana ১২ মে, ২০২২, ৭:৩৩ এএম says : 0
    কথাটা ১০০% সময় উপযোগী এবং অকাট্য সত্য বলেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
    Total Reply(0) Reply
  • Sudip Gupta ১২ মে, ২০২২, ৭:৩৪ এএম says : 0
    Honourable prime Minister I'm agree with you.Please do something for our child. They are growing up physically but for the development of their mental and creative ideas please arrange some play ground & children park in every district of our country.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ