পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, এখন থেকে চাইলেই কোনো সরকারি কর্মকর্তা বিদেশে যেতে পারবেন না। বিশেষ প্রয়োজন হলেই কেবল সরকার তাদেরকে এই অনুমতি দেবে। নানা প্রকল্পে সরকারি কর্মকর্তাদের অপ্রয়োজনে বিদেশ সফরের বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশ দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়া কম গুরুত্বপূর্ণ আমদানিনির্ভর প্রকল্পের বাস্তবায়ন পিছিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্তের কথাও জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
গতকাল বুধবার অর্থনৈতিক বিষয়ক ও ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ বেড়ে গেছে বলে অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন একজন সাংবাদিক। জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
মূলতঃ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান মুস্তফা কামাল। এ সময় বিলাসবহুল পণ্যের ব্যবহার কমানোর কথাও বলেন তিনি। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন বিশেষ কোনো প্রয়োজন ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরে অনুমতি দেয়া যাবে না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সরকারি কর্মকর্তাদের এখন থেকে বিদেশ ভ্রমণের অনুমতি দেয়া হবে না। তবে বিশেষ কোনো প্রয়োজন হলে অনুমতি সাপেক্ষে বিদেশ যেতে পারবেন। এখন যারা বিদেশ যাচ্ছেন তাদেরকে আগেই অনুমতি দেয়া হয়েছিল জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, নতুন করে কাউকে অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। এ সময় কম গুরুত্বপূর্ণ আমদানিনির্ভর প্রকল্পের বাস্তবায়ন পিছিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্তের কথাও জানান অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, সময়ে সময়ে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কঠিন সিদ্ধান্তে নিতে হয়। আমরা এতদিন যেভাবে চলছিলাম, সারা বিশ্বের যে অবস্থা, তাতে লাগাম টেনে ধরতে হচ্ছে। বিশ্বের সঙ্গে একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে। বিশ্বের যে সামগ্রিক অবস্থা, তা বিবেচনায় নিয়ে এসব সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। প্রকল্প বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, যেসব প্রকল্প এখন না করে ছয় মাস পর করলে কোনো সমস্যা বা ক্ষতি হবে না, দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি, জিডিপিতে ক্ষতি হবে না- আমরা সেগুলো বাতিল না করে সময় পিছিয়েছি।
সারা বিশ্বে করোনা পরিস্থিতির উন্নতির পর জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতি একটি বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। আগের চেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হওয়ায় দেশে রিজার্ভে টান পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিলাসদ্রব্যের আমদানি কমাতে চাইছে সরকার। চলতি অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার নিয়েও কথা বলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। যারা এই হিসাব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন, তাদের সঙ্গে দ্বিমত করেন তিনি।
তিনি বলেন, আমরা তো ভয় পাই না। আমরা চাই আপনারা পরামর্শ দেবেন। এ পর্যন্ত আমরা যা বলেছি, আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকসহ অন্যান্য কেউ তো আপত্তি করেনি। তারা আমাদের সঙ্গে একমত, সেটা দেখলেই বোঝা যায়। চারদিকে তাকালেই বুঝতে পারবেন দেশের অর্থনীতি কতেটা শক্তিশালী ও বেগবান। অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা হিসাব নিরূপণে পদ্ধতির পরিবর্তন করিনি। আগে নিয়ম অনুযায়ী করা হয়েছে। কাজেই, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো জিডিপির যে হিসাব করেছে তা সঠিক বলে আমি মনে করি। আন্তর্জাতিক মহলে যারা সবচেয়ে বেশি সোচ্চার, আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের জিডিপি হিসাব নিয়ে কোনো আপত্তি করেনি। কাজেই আমাদের হিসাব সঠিক।
গত মঙ্গলবার বিবিএসের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। তবে এই তথ্য নিয়ে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদদের কেউ কেউ। আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, যারা দ্বিমত প্রকাশ করেছেন, তাদের সঙ্গে তিনি বসতে চান। তিনি বলেন, তাদের পরামর্শ শুনব। আমরা সবাই এ দেশের মানুষ।
ব্যয় সংকোচনের পথে হাঁটছে সরকার
আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় চাপের মুখে পড়েছে দেশের অর্থনীতি। রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে। বাণিজ্য ঘাটতি ২৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের (ব্যালান্স অফ পেমেন্ট) ঘাটতি ১৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। আর এর ফলে ডলারের দাম বেড়েই চলেছে। গত মঙ্গলবারও যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের বিপরীতে টাকার মান ২৫ পয়সা কমিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারেই এখন এক ডলারের জন্য ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা খরচ করতে হচ্ছে। ব্যাংকগুলো ডলার বিক্রি করছে এর চেয়ে সাড়ে পাঁচ-ছয় টাকা বেশি দরে; ৯২ টাকা থেকে সাড়ে ৯২ টাকায়। খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৯৩ টাকায়।
মহামারি করোনার প্রভাব আপাতত নেই। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি হয়েছে। এ চাপ সামলাতে নানামুখী পদক্ষেপের মাধ্যমে ব্যয় সংকোচনের পথে হাঁটছে সরকার। এসব পদক্ষেপের অংশ হিসেবেই সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বন্ধ ও কম গুরুত্বপূর্ণ আমদানিনির্ভর প্রকল্পের বাস্তবায়ন পিছিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল। সরকারি ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরতে এই দুটি বিষয়ে খুব শিগগিরই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলে জানান অর্থ মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
ইতিমধ্যে আমদানি ব্যয় কমাতে বিলাস পণ্য আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১১ এপ্রিল জরুরি পণ্য ছাড়া অন্য সকল পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কমপক্ষে ২৫ শতাংশ এলসি মার্জিন রাখার নির্দেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। গত মঙ্গলবার সে নির্দেশনায় পরিবর্তন এনে সব ধরনের গাড়ি, ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী আমদানির এলসি খুলতে ন্যূনতম ৭৫ শতাংশ নগদ মার্জিন রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জরুরি পণ্য ছাড়া অন্য সকল পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ মার্জিন রাখতে বলা হয়েছে।
অর্থাৎ কোনো ব্যবসায়ী বা ব্যক্তি ১ কোটি টাকার একটি গাড়ি আমদানি করতে চাইলে তাকে ৭৫ লাখ টাকা নগদ দিতে হবে। বাকি ২৫ লাখ টাকা ব্যাংক ঋণ দিয়ে এলসি খুলবে। সারা বিশ্বে করোনা পরিস্থিতির উন্নতিতে অর্থনীতির চাকা সচল হওয়ার পর বাংলাদেশের রফতানি যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে কাঁচামাল ও মূলধনি যন্ত্রপাতিসহ বিলাস পণ্যের আমদানি।
রফতানির চেয়ে আমদানি ব্যয় অনেক বেশি বেড়ে যাওয়ায় বাড়ছে বাণিজ্য ঘাটতি। এতে চাপ পড়ছে রিজার্ভে। আর ডলার সংকটে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত এই মুদ্রার দাম যাচ্ছে বেড়ে। এতে আবার খাদ্যপণ্যসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ দেশে আনার ক্ষেত্রে খরচ বাড়ছে। এটিও পণ্যমূল্য বৃদ্ধির একটি কারণ।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির একটি কারণ বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) ৬ হাজার ১৫২ কোটি ৪০ লাখ (৬১.৫২ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য আমদানি করেছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ বেশি। তবে রফতানি বাণিজ্যে বেশ উল্লম্ফন ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। রফতানি আয়ের দশ মাসের তথ্য প্রকাশ করেছে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো-ইপিবি। এই দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) বিভিন্ন পণ্য রফতানি করে ৪৩ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৫ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি। এই পরিস্থিতিতে অর্থনীতিবিদরা আমদানিতে লাগামের পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, এই মুহূর্তে কোভিড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। তবে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাব সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংল৬াদেশেও এর প্রভাব পড়েছে। এই যুদ্ধ কবে থামবে আমরা কেউ জানিনা। সেজন্য খরচের লাগাম টেনে ধরতে আগাম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
বিলাস পণ্য আমদানি উৎসাহিত করা হয়েছে। অবশ্য এটা কিছু সময়ের জন্য। এছাড়া যেসব প্রকল্পে এখন অর্থায়ন না করে ৬ মাস পর করলে চলবে- এমন প্রকল্পগুলোতে অর্থায়ন পিছিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এসব প্রকল্পে অর্থায়নের সময় পিছিয়ে দেয়ার কারণে অর্থনীতিতে কোন ক্ষতি হবে না বলে জানান অর্থমন্ত্রী।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, করোনার কারণে অনেক কর্মকর্তা বিদেশ যেতে পারেনি। তাদের অনুমতি দেয়া হয়েছিল। এজন্য এ খাতে কিছুটা ব্যয় বেড়েছে। কিন্তু বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া নতুন করে আর অনুমতি দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা পুনর্গঠন করে সরকারি খরচের লাগাম টেনে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে।
রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে
আমদানি বাড়ায় বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন (৪ হাজার ২০০কোটি) ডলারের নিচে নেমে এসেছে। আকুর (এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন) রেকর্ড ২২৪ কোটি (২.২৪ বিলিয়ন) ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর মঙ্গলবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪১ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের ২৪ আগস্ট এই রিজার্ভ অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছিল। ##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।