পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রমজানের আগে থেকেই তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারিভাবে তোড়জোড় কিছু কম হয়নি। যদিও এসব উদ্যোগের তেমন কোনো সুফল চোখে পড়েনি। জিনিসপত্রের চড়া দাম গুনেই মানুষ কষ্টেসৃষ্টে ঈদ-উৎসবের প্রস্তুতি নিয়েছে এবং উদযাপন করেছে। কিন্তু ভোজ্য তেল কিনতে গিয়ে অনেককেই ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। বেশি দাম দিয়েও অনেকে তেল কিনতে পারেনি। ঈদের আগে দেশের অনেক জায়গায় তেল পাওয়া যায়নি। ঈদের মতো বৃহৎ উৎসবের সামনে রান্নার অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপকরণ তেল-সংকট মানুষকে ক্ষুব্ধ করে তোলে।
ঠিক এমন অবস্থায় ঈদের আগে উধাও হয়ে যাওয়া ভোজ্যতেলের দাম এক লাফে বাড়ানো হলো লিটারে ৩৮ টাকা। নতুন দাম ১৯৮ টাকা। অর্থাৎ এখন থেকে রান্নায় ব্যবহৃত সয়াবিন তেল কিনতে হবে দুইশ টাকা ছুঁইছুঁই দামে। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স ও বনস্পতি ম্যানুফাচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে অপিরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। সেই বিবেচনায় বাংলাদেশে তেলের মূল্য সমন্বয় করা হলো। এখন থেকে খোলা সয়াবিন তেল এক লিটার ১৮০ টাকায় বিক্রি হবে। আর ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হবে ৯৮৫ টাকায়। এক লিটার পাম তেলের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭২ টাকা।
এমনিতেই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম ক্রমাগত বেড়ে চলায় সাধারণ মানুষ বিশেষ করে খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। তেলের দাম মানুষের কাছে রীতিমতো অসহনীয় হয়ে উঠেছে। অথচ এর কোনো প্রতিকার নেই। ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণের জন্য কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) প্রতিষ্ঠিত হলেও বাস্তবে তাদের কার্যক্রম ভোক্তা অধিকার কতটুকু সংরক্ষণ করতে পারছে, তা একটা বড় প্রশ্ন। আর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ভ‚মিকাও সাধারণ মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ।
বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীদের তৎপরতা বৃদ্ধির বিষয়টি উদ্বেগজনক। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, অসাধু ব্যবসায়ীদের তৎপরতায় ভোক্তারা প্রতিনিয়ত কেবল ঠকছেই না; একই সঙ্গে তাদের সিন্ডিকেটবাজির কারণে দাম ক্রমাগত বাড়ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদের চাপে দেশেও একাধিকবার সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। এরপরেও বাজারে এখন সয়াবিন তেল নেই। বাজারে তেলের মজুদ ঠেকাতে খোলা তেল বিক্রির ওপরেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার।
দেশে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সব সময়ই সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। সুযোগ পেলেই তারা জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে ভোক্তার পকেট কাটে। স¤প্রতি দেখা গেছে, ভোজ্যতেলের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এ নিয়ে সরকার অনেক দেনদরবার করে, হুমকি-ধমকি দিয়ে, আমদানি শুল্ক কমিয়েও খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। তেলের দাম কমেনি।
একেক সময় একেক পণ্য বাজার থেকে উধাও হয়ে যায়। কখনও লবণ, কখনো চিনি, কখনো পেঁয়াজ। যেন পালা করে একেক পণ্যের ব্যবসায়ীরা ‘সমঝোতা’ করে নেয় বা তাদের সুযোগ করে দেয়া হয়। একেকবার একেক পণ্যের নামে লুট হয়ে যায়, জনগণের পকেট খালি হয়ে যায়। বর্তমানে কারসাজি চলছে ভোজ্য তেল নিয়ে।
তেল আমদানিকারক গ্রæপগুলোর প্রতিনিধিরা বলছেন, ঠিকঠাক পণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত মূল্যেই পণ্য দেয়া হচ্ছে। সরবরাহে কোথাও কোনো ঝামেলা নেই। বরং তাদের কাছ থেকে পণ্য কিনে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে বলে পাইকারি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন তারা।
অপরদিকে পাইকারি ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, সরবরাহ ঘাটতি না থাকলে আমরা কেন মাল পাই না? তাদের আরও অভিযোগ, সরকার-নির্ধারিত মূল্যেও পণ্য দেয়া হচ্ছে না। এমনকি মিলে ঢুকতে ট্রাকপ্রতি ৫০ হাজার টাকা করেও নেয়া হচ্ছে। তেলের বিক্রয় আদেশ (এসও) কিনে ট্রাক নিয়ে এক কোম্পানির মিল থেকে আরেক কোম্পানির মিলে ঘুরলেও সয়াবিন তেল পাচ্ছেন না তারা।
পারস্পরিক অভিযোগ আর পাল্টা অভিযোগের ফাঁক দিয়ে তেলের দাম বেড়েই চলেছে। আর এতে পকেট কাটা যাচ্ছে সাধারণ মানুষের। সয়াবিন তেলের বাজারের আধিপত্য হাতে গোনা কয়েকটি কোম্পানির হাতে। ফলে এই বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের জন্য কঠিনতর কোনো ব্যাপার নয়। এরপরও সরকার সেটি করতে পারছে না।
ফেব্রæয়ারি-মার্চে যখন ভোজ্য তেলের দাম অনেক বেড়ে যায়, তখন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের থেকে বলা হয়, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাজার থেকে হাজার কোটি টাকা লোপাট করে দেয়া হয়েছে। তাদের হিসাব মতে, দেশে বছরে ভোজ্য তেলের চাহিদা ২০ লাখ মেট্রিক টন। সে অনুযায়ী এক মাসের চাহিদা ১ লাখ ৫০ হাজার টনের মতো। প্রতি লিটারে যদি ১০ টাকা করে দাম বাড়ানো হয়, তাহলে টাকা লোপাটের অঙ্কটা অনেক বড় হয়ে দেখা যায়। বাজার নিয়ন্ত্রণে না আসায় সেই অঙ্ক বাড়ছেই।
পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে ভোজ্যতেলের দাম নিয়ে তোলপাড় সবচেয়ে বেশি। এক বছর আগেও বোতলজাত তেলের লিটার ছিল ১৩৪ টাকা করে। গত ৬ ফেব্রæয়ারি তা নির্ধারণ করা হয় ১৬৮ টাকা। ব্যবসায়ীরা মার্চ থেকে লিটারে আরও ১২ টাকা বাড়িয়ে ১৮০ টাকা করতে চেয়েছিল। কিন্তু সরকার রাজি না হলে সেদিন থেকে বাজারে সরবরাহে দেখা দেয় ঘাটতি।
এরপর সরকার ভোজ্যতেল উৎপাদন ও বিক্রির ওপর থেকে ভ্যাট পুরোপুরি আর আমদানিতে ৫ শতাংশ রেখে বাকি সব ভ্যাট প্রত্যাহার করে নেয়। পরে গত ২০ মার্চ লিটারে আট টাকা কমিয়ে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ঠিক করা হয় ১৬০ টাকা। সেদিন ৫ লিটারের বোতল ৭৯৫ টাকা থেকে কমিয়ে ৭৬০ টাকা এবং খোলা সয়াবিনের দাম ১৪৩ টাকা থেকে কমিয়ে ১৩৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
এরপর বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে এলেও ঈদের আগে আবার অস্থির হয়ে উঠে বাজার। বাজার থেকে উধাও হয়ে যায় সয়াবিন তেল। কিছু কিছু বাইন ব্যান ও সূর্যমুখীর তেল পাওয়া যায়। আর যেসব দোকানে সয়াবিন তেল ছিল, সেগুলোতে বিক্রি হচ্ছিল সরকারের বেঁধে দেয়ার দামের চেয়ে অনেক বেশিতে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সংগতি রেখেই দাম নির্ধারণ করা হয়। গত কয়েকদিন ধরেতো বাজার থেকে তেলই উধাও হয়ে গিয়েছিল। এই যে নতুন নির্ধারিত দামে ব্যবসায়ীদের লাভ হবে সন্দেহ নেই। কারণ নতুন নির্ধারিত দামের তেলতো এখনও আসেনি। ভোক্তাদের ভোজ্যতেলে স্বস্তি দিতে বিকল্প পদ্ধতি অবলম্বন করা দরকার। দেশে উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করা দরকার এবং ভোক্তাদেরও বিকল্প খোঁজা দরকার। এই দাম যে এখানেই থেমে থাকবে তারতো নিশ্চয়তা নেই। তাই আমাদেরকে সাশ্রয়ী হতে হবে এবং বিকল্প খুঁজতে হবে।
ভোজ্যতেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে ক্যাব কি ভূমিকা রাখবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারের হাতে যেটা ছিল ভ্যাট কমানো, সরকারতো তা কমিয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারের উপরেতো কারো কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। সরকারেরও নেই, উৎপাদনকারকদেরও নিয়ন্ত্রণ নেই। আমরা আশা করবো যখন আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য কমে আসবে তখন যেন দ্রæততার সাথে ট্যাক্সটা অ্যাডজাস্ট করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।