Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

জড়িতদের গ্রেফতারে মাঠে একাধিক টিম

নিউমার্কেটে সংঘর্ষ রাজনৈতিকভাবে কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০০ এএম

রাজধানীর নিউমার্কেটে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে কাজ করছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। জড়িতদের বিষয়ে নিশ্চিত হতে অনেককেই আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে রাজনৈতিকভাবে কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, সহিংসতার সময়ের ছবি-ভিডিও, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে চলছে জড়িতদের শনাক্তের কাজ। ইতোমধ্যে ১৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী ও দোকানীকে শনাক্ত করা গেছে, এদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের পরিচয়ও নিশ্চিত হতে পেরেছেন সংশ্লিষ্টরা।
শনাক্তকারীদের টার্গেট করে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ইন্ধনদাতা থাকলে তাদেরও খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। তদন্তের স্বার্থে তথ্য পেতে অনেককেই আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এরমধ্যে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়েও দেওয়া হচ্ছে। বেশ কয়েকজনের পরিচয় নিশ্চিত হলেও কাউকে গ্রেফতারের কথা নিশ্চিত করেনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তবে অনেকেই গোয়েন্দাদের নজরদারীতে রয়েছেন।
সূত্র জানায়, বিষয়টি ছাত্র সম্পর্কিত হওয়ায় তারা সতর্কতার সঙ্গে এগোচ্ছেন। নিরপরাধ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হন সে জন্য আগে নিশ্চিত হতে কাজ করছেন তারা। সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা, যে কোনো সময় জড়িতদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।
নিউমার্কেটে সংঘর্ষে কুরিয়ার কর্মী নাহিদ ও দোকানকর্মী মোরসালিস নিহতের ঘটনায় দুটি হত্যা মামলাসহ প্রায় ১ হাজার ৪০০ জনকে আসামি করে চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে নিউমার্কেট থানা ছাড়াও ডিএমপির নিজস্ব গোয়েন্দা ইউনিট, মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি), র‌্যাব, অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) ও একাধিক সাইবার টিম কাজ করছে।
সূত্র জানায়, গত রোববার বিকেলে ডিবি ও র‌্যাবের গোয়েন্দা দল ঢাকা কলেজের একটি ছাত্রাবাসে অভিযান চালায়। এ সময় কলেজের আন্তর্জাতিক ছাত্রাবাসের ১০১ নম্বর কক্ষে অভিযান চালিয়ে জহির হাসান জুয়েলকে আটক করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে ছেড়ে দিয়েছে ডিবি। জুয়েল কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, সংঘর্ষে নাহিদ নিহত হওয়ার ঘটনায় সম্পৃক্ত হিসেবে শনাক্ত ইমন এই ১০১ নম্বর কক্ষে থাকতেন। তবে অভিযানের সময় ইমন সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।
ডিবি রমনা বিভাগের ডিসি এইচ এম আজিমুল হক জানান, রোববার বিকেলের অভিযানে এক শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছিল, পরবর্তীতে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্যই জুয়েলকে আটক করা হয়েছিল।
তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, দুই দোকান কর্মচারীর মধ্যে ঘটনার সূত্রপাত। এরপর ঢাকা কলেজের কয়েকজন ছাত্র ওই ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন। কিন্তু তাদের কাউকে এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাদেরকে গ্রেফতার করতে পারলে ঘটনার বিষয়ে অনেক তথ্য পাওয়া যাবে।
সূত্র জানায়, প্রথমদিন এক দোকানকর্মীর ডাকে সাড়া দিয়ে ঢাকা কলেজের কিছু শিক্ষার্থী গিয়ে ক্যাপিটাল ফাস্টফুডের কর্মীদের মারধর শুরু করেন। একপর্যায়ে ক্যাপিটাল ফাস্টফুডের কর্মীদের পাল্টা হামলায় আহত হয়ে পালিয়ে যায় তারা। পরে তারা কলেজের আরও ছাত্রদের সঙ্গে নিয়ে এসে নিউ মার্কেটে হামলা চালায়।
রিমান্ডে সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার বিএনপি নেতা মকবুলের নিউমার্কেটে সংঘর্ষে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার এক নম্বর আসামি গ্রেফতার বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন তিন দিনের পুলিশি রিমান্ডে রয়েছেন। অ্যাডভোকেট মকবুল নিউমার্কেট থানার বিএনপির সাবেক সভাপতি। বর্তমানে তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য। যে দুটি দোকানের বাগবিতণ্ডাকে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষ ঘটে, সে দুটিরই মালিক অ্যাডভোকেট মকবুল।
এদিকে, গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর বকশিবাজারে কারা কনভেনশন সেন্টারে ইফতার ও দোয়া মাহফিলে অংশ নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামান বলেন, রাজনৈতিকভাবে কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না কিংবা কাউকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই পদক্ষেপ নিচ্ছে পুলিশ প্রশাসন। রাজনৈতিকভাবে কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না কিংবা কাউকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, নিউমার্কেটে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় দুটো খুনের মামলা হয়েছে। ভাঙচুরের মামলা হয়েছে। এগুলোতে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করা হয় না। তাই প্রমাণের ব্যাপার আছে, তদন্তের ব্যাপার আছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা কোনদিনও ঘটনার সত্যতা না পেলে কাউকে গ্রেফতার করে না।
গত ১৮ এপ্রিল দিবাগত রাত ও মঙ্গলবার দিনভর নিউমার্কেটের দোকানমালিক ও কর্মচারীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সংঘর্ষ হয়। এতে দুজনের প্রাণহানি এবং অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হন। এ সংঘর্ষের ঘটনায় সরকারি কাজে বাধা, পুলিশের ওপর আক্রমণ, ইটপাটকেল নিক্ষেপ, ভাঙচুর ও জখম করার অভিযোগে নিউমার্কেট থানায় একটি মামলা করে পুলিশ। ওই মামলায় প্রধান আসামি করা হয় মকবুল হোসেনকে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ