Inqilab Logo

সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

দক্ষিণাঞ্চলে ডায়রিয়ার বিস্তৃতি অব্যাহত : জনমনে উদ্বেগ বাড়ছে

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২৩ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০২ এএম

দক্ষিণাঞ্চলে ডায়রিয়া পরিস্থিতির কোন উন্নতি লক্ষণীয় নয়। প্রতিদিনই ৪শ’ থেকে ৫শ’ ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী সরকারী হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার জন্য আসছেন। গত এক সপ্তাহে এ অঞ্চলের ৬টি জেলার ৪২ উপজেলা হাসপাতালগুলোতে আরো প্রায় সাড়ে ৩ হাজার ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসার জন্য এসেছে। এ নিয়ে গত ৩ মাসে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২৫ হাজার অতিক্রম করল। এর মধ্যে গত এক মাসেই ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজারের বেশী। লাগাতার অনাবৃষ্টির সাথে দুঃসহ গরম ও বিশুদ্ধ পানির সংকট পরিস্থিতির উন্নতি ব্যাহত করছে। গত বছরও মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন সরকারী হাসপাতালগুলোতে ৭৫ হাজারের বেশী ডায়রিয়া আক্রান্ত নারী-পুরুষ ও শিশু চিকিৎসার জন্য আসে। মৃত্যু হয়েছিল প্রায় ২৫ জনের।
এবার পটুয়াখালীতে দুজনের মৃত্যুর কথা বলা হলেও স্বাস্থ্য বিভাগের মতে, ‘তারা ডায়রিয়ায় মারা যায়নি’। পিরোজপুর ও ভোলার পরিস্থিতিও গত কয়েকদিন ধরে অবনতিশীল। তবে গত তিন মাসে মোট আক্রান্তের মধ্যে বরিশালই শীর্ষে। এ জেলার প্রায় ৮ হাজার ডায়রিয়া রোগী সরকারী হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার জন্য এসেছে। দ্বীপজেলা ভোলাতেও মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজারের বেশী। পটুয়াখালীতে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ও পিরোজপুরে প্রায় ৩ হাজার ৮শ’ ডায়রিয়া আক্রান্ত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালগুলোতে আসলেও বরগুনাতেও প্রায় আড়াই হাজার ও ঝালকাঠীতে ২ হাজার ডায়রিয়া আক্রান্ত মানুষ চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে এসেছে। তবে গত এক সপ্তাহে ভোলাতে সহশ্রাধিক ও পিরোজপুরে ৮ শতাধিক ডায়রিয়া আক্রান্ত সরকারী হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার জন্য এসেছে।
তবে এ হিসেবের আরো অন্তত দ্বিগুন ডায়রিয়া আক্রান্ত বিভিন্ন বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকসহ চিকিৎসকের তত্বাবধানে নিজ ঘরে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ। গোটা দক্ষিণাঞ্চলেই গত কয়েক বছর ধরে মার্চের শুরু থেকে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। মূলত বিশুদ্ধ পানির সংকটই পানি বাহিত এ রোগের মূল কারণ বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ জানিয়েছেন। এর সাথে বাসি ও পঁচা খাবারসহ রমজানের এ সময়ে অতি মাত্রায় নি¤œ মানের ভাজা পোড়া খাবারও ডায়রিয়া বিস্তৃতির অন্যতম কারণ বলেও জানা গেছে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য দফতরের মতে, এ অঞ্চলের ৪২টি উপজেলার প্রায় সবগুলোতেই ইতোমধ্যে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়লেও ৪১৩টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। তবে ৩-৪টি মেডিকেল টিম একজন চিকিৎসকের তত্বাবধানে কাজ করলেও টিমগুলোতে ১ জন করে মেডিকেল এ্যসিষ্ট্যান্ট রয়েছে বলে বিভাগীয় পরিচালক-স্বাস্থ্য জানিয়েছেন। উপরন্তু বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলাসহ উপজেলাগুলোতে ১ হাজার সিসি’র লক্ষাধিক ব্যাগ ও ৫শ’ সিসি’র আরো প্রায় ৭০ হাজার ব্যাগ আইভি স্যালাইন মজুদের কথা জানিয়েছে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর।
করোনা মহামারী সংকট স্তিমিত হবার মধ্যেই গোটা দক্ষিণাঞ্চল জুড়েই ডায়রিয়া দাপিয়ে বেড়াতে শুরু করায় জনমনে নতুন উদ্বেগ বৃদ্ধি করছে। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ ডায়রিয়া প্রতিরোধে বিশুদ্ধ পানি পান করা ছাড়াও বর্তমানের দুঃসহ গরম ও রোজায় তেলে ভাজা খাবার এড়িয়ে সহজ পাচ্য আহারের পরামর্শ দিয়েছেন। পাশাপাশি ডায়রিয়া দেখা দিলে পানি শূণ্যতা প্রতিরোধে দ্রæত খাবার স্যালাইন পান করাসহ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণেরও তাগিদ দিয়েছেন।
এদিকে, বরিশাল মহানগরীর ১শ’ শয্যার জেনারেল হাসপাতালটিতে ৪ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ডে এখন প্রতিদিনই ২০-২৫ জন রোগী চিকিৎসাধীন থাকছে। কিন্তু ১ হাজার শয্যার শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটিতে কোন ডায়রিয়া ওয়াডর্ই নেই। শুধুমাত্র শিশু বিভাগে ১০ শয্যার একটি আইসোলেশন ওয়ার্ডে ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা মিললেও নারী ও পুরুষদের সেখানে ভর্তি করা হয় না। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ও সিভিল সার্জনের মধ্যে একাধিক বৈঠক হলেও দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ এ হাসপাতালে ডায়রিয়া ওয়ার্ড চালুর কোন সুরাহা হয়নি। গত বছর শের এ বাংলা হাসপাতালে ভর্তি হতে না পেরে জেনারেল হাসপাতালে যাবার পথে এক ডায়রিয়া রোগীর মৃত্যুর পরেও টনক নড়েনি স্বাস্থ্য অধিদফতর ও মন্ত্রণালয়ের।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ