Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নাহিদ কারো পক্ষে মারামারি করেনি, ওরে কেন মারল?

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২১ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০২ এএম

‘আমার ছেলে কাজের জন্য গেছে, ওতো কারো পক্ষে মারামারি করতে যায়নি। ওরে কেন মারলো? এখন আমি কার নামে মামলা করুম, কার কাছে বিচার চামু। এই দুঃখ কষ্ট কারে বলুম আমি।’ গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে আবেগাপ্লুত হয়ে এসব কথাই বলেন নিহত নাহিদের বাবা নাদিম।

তিনি আরো বলেন, গরীব মানুষ আমরা, ক্লাশ ফাইব পর্যন্ত পড়ছে নাহিদ। ৮-৯ বছর আগে কিছুদিন নিউমার্কেটের নিউ সুপার মার্কেটে কাজ করেছে। এরপর থেকে সে বিভিন্ন দোকানে কাজ করে আসছিল। সবশেষ অ্যালিফেন্ট রোডে কাজ করত সে। প্রেমের সম্পর্ক ছিল নাহিদ ও ডালিয়ার। সম্পর্কটি চিরস্থায়ী করতে ছয় মাস আগে তারা বিয়ে করেন। সুখেই কাটছিল তাদের দিন। মাত্র ছয় মাসের মাথায় বিধবা হলেন ডালিয়া। মঙ্গলবার থেকে স্বামী নাহিদের ছবি দেখে দেখে কান্না করেই যাচ্ছেন স্ত্রী ডালিয়া। ডালিয়া বলেন, কর্মস্থলে গিয়েছিল আমার স্বামী তাহলে কেন তাকে মেরে ফেলা হলো?

এর আগে গত মঙ্গলবার ১০টার দিকে কামরাঙ্গীরচর দেওয়ান বাড়ি এলাকার বাসা থেকে বেরিয়ে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে যান নাহিদ। পরে নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষের সময় তিনি আহত হন। শুভ নামে এক পথচারী তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করান। পরে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নাহিদ মঙ্গলবার রাতে তিনি মারা যান।

এদিকে গতকাল ময়নাতদন্ত শেষে নাহিদের নিথর দেহ নিয়ে যাওয়া গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে। তরে লাশ নিয়ে যাওয়ার আগে নাহিদের বাবা একবার মর্গের সামনে আসেন, অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করতে আবার বাইরে যান। এর ফাঁকে মেডিকেলের কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলতেছিলেন। অনুরোধ করছেন- যেন একটু কম টাকায় সব ব্যবস্থা করে দেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে নাহিদের বাবা বলেন, নাহিদ আমার বড় ছেলে। ওর বয়স ১৮। ছয় মাস আগে বিয়ে করেছে। আমরা গরিব মানুষ। অভাবের সংসারে টানাটানি লেগেই থাকে। পয়সার অভাবে ছেলেটাকে বেশিদূর পড়াতেও পারিনি।

তিনি বলেন, ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পড়েছে নাহিদ। এরপরেই তাকে কাজে দিয়ে দেই। ১০ বছর বয়সে ও নিউ সুপার মার্কেটে কাপড়ের দোকানে কাজ শুরু করে। অল্প বেতন পেতো। তবুও তখন থেকেই আমার হাতে পয়সা দিতো। নাহিদের বাবা নাদিম হোসেন ম্যাটাডোর কলম তৈরির একটি কারখানায় চাকরি করেন। বেতন খুবই স্বল্প। তিন ছেলে, স্ত্রী ও পুত্রবধূকে নিয়ে ছয়জনের সংসার। একার আয়ে সংসার চালানো দায়। এজন্য কুরিয়ারকর্মী কাজ নেন নাহিদ। বাবার সঙ্গে হাল ধরেছিলেন সংসারের।

নাদিম হোসেন বলেন, গত মঙ্গলবার ইফতারের পর বাসায় বসেছিলাম। তখন নাহিদের বন্ধুরা ফেসবুকে একটি ভিডিও দেখে আমার কাছে আসে। জিজ্ঞেস করে- নাহিদ কোথায়? আমি বলি- সে তো কাজে গেছে। তখন ওর বন্ধুরা আমাকে বলে নাহিদ ঢাকা মেডিকেলে। এরপর জানতে পারি আমার ছেলেটা মারা গেছে। নাদিমের গ্রামের বাড়ি নবাবগঞ্জে। তিনি কামরাঙ্গীর চরে বিয়ে করেন। সেখানে বসবাস শুরু করেন। ফলে নানা বাড়িতে বড় হয় নাহিদ। তার আরও দুটি ছোট ভাই রয়েছে। তাদের একজনের বয়স সাত বছর এবং অন্যজনের বয়স তিন বছর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ