পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
কোন পণ্য বা সেবা একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় কয়েকটি ধাপ পেরিয়ে গ্রাহকের কাছে পৌঁছায়। এই প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার জন্য ব্যবহার করা হয় সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট। যেকোন উৎপাদন শিল্পের সাপ্লাই চেইনের সাথে সম্পৃক্ত মুখ্য বিষয় হলো তিনটি; পণ্য (প্রোডাক্ট), সরবরাহ (ডেলিভারী) এবং বিক্রয় (সেলস)। পণ্য উৎপাদনের কাঁচামাল কেনা থেকে শুরু করে পরিকল্পনা, পণ্যের উৎস, মজুদকরণ, প্রস্তুত ও বিপণন কার্যক্রম দক্ষতার সাথে সময়মতো ও স্বল্প খরচে সম্পন্ন করা ইত্যাদি কাজগুলো সাপ্লাই চেইন কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত। তাই সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট’কে ব্যবসার মেরুদ- বলা হয়। সম্প্রতি দেশের অন্যতম বৃহত্তম এফএমসিজি প্রতিষ্ঠান ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেড-এর সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট-এর ডিরেক্টর জাহিদুর রহমান সাপ্লাই চেইনের গুরুত্ব, ব্যবসায় এর প্রভাব এবং অন্যান্য খুঁটিনাটি বিষয়ে কথা বলেন।
তিনি জানান, যেকোন ব্যবসার মূল উদ্দেশ্য হলো গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য বা সেবা পৌঁছে দেওয়া। আর সেই বিষয়টিই নিশ্চিত করে সাপ্লাই চেইন। পণ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে গ্রাহকের নিকট পৌঁছানো পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ এই কাজে জড়িত থাকে। তাই পুরো প্রক্রিয়াটির সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে প্রয়োজন সঠিক ও দক্ষ ব্যবস্থাপনা। কারণ গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী সঠিক সময়ে পণ্য পৌঁছে দেওয়াই হলো সাপ্লাই চেইনের সার্থকতা। আমার প্রধান দায়িত্ব হলো এই পুরো প্রক্রিয়াটি সঠিকভাবে সম্পন্ন হচ্ছে কিনা, কোন প্রকার ঝুঁকির আশঙ্কা আছে কিনা, ঝুঁকি কাঁটিয়ে কাজের ধারা ও সাশ্রয়ী মূল্যে উৎপাদন ব্যবস্থা অব্যাহত থাকছে কিনা, গ্রাহকদের চাহিদা পূরণে পর্যাপ্ত পণ্য মজুত আছে কিনা ইত্যাদি দিকে খেয়াল রাখা ও নিশ্চিত করা।
তার মতে, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় ম্যারিকো’র সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থা যথেষ্ট সাবলীল ও উন্নত। তিনি বলেন, আমরা যথেষ্ট দ্রুততার সাথে সিন্ধান্ত গ্রহণ করি এবং সঠিক সময়ের প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে আমরা কোন আপোষ করি না। এটি আমাদের সাপ্লাই চেইন প্রক্রিয়ার ধারা বজায় রাখতে সাহায্য করেছে। এমনকি গত দুই বছর লকডাউনের মধ্যে যখন অনেক প্রতিষ্ঠান পণ্য সরবরাহে হিমশিম খাচ্ছিলো, আমাদের সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট একটুও থেমে থাকেনি। আমরা সরকারের দেওয়া সকল স্বাস্থ্যবিধি ও নিয়মাবলী পূর্ণমাত্রায় মেনে পণ্য সরবরাহ অব্যাহত রেখেছি। পাশাপাশি সাপ্লাই চেইনের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে আমরা নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছি। কোভিড পরীক্ষা করেছে কিনা, সকলে সুস্থ আছে কিনা, আক্রান্ত হলে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে কিনা ইত্যাদি বিষয়ে খেয়াল রেখেছি। পাশাপাশি স্বল্পতম সময়ের মধ্যে আমাদের শতভাগ কর্মীর টিকা গ্রহণ নিশ্চিত করেছি আমরা।
সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টকে আরও উন্নত করতে ম্যারিকো’র পরিকল্পনা সম্পর্কে জাহিদুর রহমান বলেন, এই মূহুর্তে আমরা সাসটেইনাবিলিটি এজেন্ডার প্রতি বেশি মনোযোগ দিচ্ছি। ওয়েস্টেজ কমিয়ে এনে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধিতে আমরা কাজ করছি। পণ্য সরবরাহে প্লাস্টিক, বিশেষ করে সিঙ্গেল ইউজড প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি। আমাদের ব্যবসায়িক পার্টনারস, সোর্স, ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিটসহ সকল ক্ষেত্রেই আমরা পরিবেশবান্ধব প্রক্রিয়া অনুসরণের তাগিদ দিচ্ছি। পর্যাপ্ত এনার্জি এফিসিয়েন্সি ও ম্যানুফ্যাকচারিং রিসোর্সগুলো সুষ্ঠুভাবে ব্যবহারের দিকে আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি। আমার বিশ্বাস শীঘ্রই আমরা সাপ্লাই চেইনের সাসটেইনাবিলিটি নিশ্চিতে সফল হবো। সেই সাথে সোশ্যাল কমপ্লায়েন্স বা সামাজিক ও আইনি পরিপালন নিশ্চিতকরণে আমাদের সাপ্লাই চেন পার্টনারদের সর্বদা সচেতনতা ও দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি।
বাংলাদেশের অর্থনীতির অগ্রযাত্রায় ম্যারিকো বিগত ২০ বছর যাবত অবদান রেখে আসছে। আগামী দিনে এই ধারা অব্যাহত রাখতে এবং ম্যারিকো’র ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমাদের ভূমিকার বিষয়ে আমরা খুবই সচেতন। অনেকেই অবগত আছেন যে, বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরীতে আমাদের তৃতীয় ও দেশের অন্যতম বৃহত্তম ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট নির্মিত হচ্ছে, যার চলতি বছরের শেষ নাগাদ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ম্যারিকো একটি গ্রোয়িং কোম্পানি এবং ভোক্তার পরিবর্তনশীল চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে সর্বদা নুতুন পণ্য সমাহার/প্রোডাক্ট ক্যাটাগরি নিয়ে কাজ করছি ।
তিনি জানান, আমাদের সাপ্লাইয়ার, থার্ড-পার্টি, ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিটগুলোয় আমরা ক্রমাগত বিনিয়োগ করছি, যা দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি তৃতীয় ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিটে কর্মসংস্থানের বিশাল সুযোগ রয়েছে, যা অবশ্যই বেকারত্ব দূর করে দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে ভূমিকা রাখবে।
ভবিষ্যতে সাপ্লাই চেইন নিয়ে ক্যারিয়ার গড়তে ইচ্ছুকদের প্রতি শুভকামনা জানিয়ে জাহিদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের সাপ্লাই চেইনের ভবিষ্যত সম্ভাবনাময় এবং খুবই ভালো। সামগ্রিকভাবে সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট বুঝতে হলে প্ল্যানিং, ম্যানুফ্যাকচারিং, লজিস্টিকস, ক্রস-ফাংশনাল ডিপেন্ডেন্সি, মার্কেটিং রিক্যুয়ারমেন্ট ইত্যাদি বিষয়গুলোর ওপর দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।