Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

৫০০ ভুক্তভোগীর ৩০ কোটি টাকা হাওয়া

কামরুলের ভ্রমণভিসার ফাঁদ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৭ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০০ এএম

কামরুল আহম্মেদ। তার লেখাপড়া নবম শ্রেণি পর্যন্ত। নির্দিষ্ট কোনো পেশা না থাকলেও প্রতারণা এবং মানবপাচার তার নেশা। ২০১৯ সালে ভ্রমণ ভিসায় দুবাই যান। মানবপাচারের অর্থে দুবাইয়ের রেসিডেন্স ভিসা লাভ করেন। পরে প্রাইভেটকার চালিয়ে অর্থ উপার্জন করতেন। করোনার সংকট শুরু হলে গাড়িটি বিক্রি করে ২০২১ সালে দেশে ফেরেন। পুনরায় জড়িয়ে পড়েন প্রতারণা এবং মানবপাচারে। র‌্যাব বলছে, জনশক্তি রপ্তানির কোনো লাইসেন্স নেই কামরুলের। বিভিন্ন ট্যুর ও ট্রাভেলস এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করে অবৈধভাবে ভ্রমণ ভিসায় বিভিন্ন দেশে লোক পাঠান তিনি। এজন্য জনপ্রতি হাতিয়ে নেন ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা। এভাবে প্রায় পাঁচ শতাধিক লোকের কাছ থেকে প্রায় ৩০ কোটি টাকা হাতিয়েছেন।
সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর রামপুরা ও হাতিরঝিল এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সংঘবদ্ধ মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের মূলহোতা কামরুলসহ চারজনকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে র‌্যাব-৩। চক্রের বাকিরা হলো-খালেদ মাসুদ হেলাল, তোফায়েল আহম্মেদ ও মো. জামাল। গতকাল কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব ৩ অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, প্রতারিত কয়েকজন ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব-৩ জানতে পারে, রামপুরা এলাকায় একটি মানবপাচার ও প্রতারক চক্র মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে ভুয়া ভিসা ও টিকিট সরবরাহ করে। এর মাধ্যমে বিদেশ গমনে ইচ্ছুক বেকার যুবক যুবতীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে তাদের সর্বস্বান্ত করছে। সহজ সরল বিদেশ গমনে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা বিমানবন্দরে প্রদর্শনের পর ভিসা ও টিকিট জাল হওয়ায় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাদের বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দেয়।
এমন কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব-৩ এর একটি দল গোয়েন্দা নজরদারি ও ছায়া তদন্ত শুরু করে। গত ১২ এপ্রিল মৌলভীবাজারের এক নারীকে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে কামরুল রামপুরায় চক্রের সদস্য কামরুলের বাসায় নিয়ে আসেন। ওই বাসায় ভুক্তভোগী নারীকে আটক করা হয়। পরে চক্রের সদস্য তোফায়েল জোরপূর্বক ওই নারীকে ধর্ষণ করে। খবর পেয়ে র‌্যাবের একটি দল ১৩ এপ্রিল রাত পৌনে ৩টার দিকে ওই নারীকে উদ্ধার করে।
উদ্ধার হওয়া নারী জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তোফায়েল গৃহকর্মী হিসেবে তাকে সউদী আরব পাঠানোর প্রলোভন দেখায়। এরপর সউদী আরব যেতে হলে আরবি ভাষার ট্রেনিং করতে হবে, এ কথা বলে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসে ও কামরুলের বাসায় আটক রেখে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।
র‌্যাব-৩ এর সিও বলেন, ঘটনার পর ওই নারী বাদী হয়ে রামপুরা থানায় নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন। ভুক্তভোগী নারীর দেওয়া তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় গত শুক্রবার রাতে রামপুরা ও হাতিরঝিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের মূলহোতা কামরুল, সহযোগী খালেদ মাসুদ হেলাল, তোফায়েল ও জামালকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ২৭টি পাসপোর্ট, ১টি কম্পিউটার, ১০০টি ভিসার কপি, ১২৫টি টিকিট, ৪টি মোবাইল ফোন ও প্রিন্টার উদ্ধার করা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ