Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বাংলাদেশ ইস্যুতে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রতিবেদন : অপরাধের দায়মুক্তি নিয়ে প্রশ্ন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৪ এপ্রিল, ২০২২, ৭:৪৩ পিএম

বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও হত্যা-গুমের মতো অপরাধে সম্পৃক্ত থাকলেও তাদের দায়মুক্তি দেওয়া হয় বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ২০২১ সালে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের এ প্রতিবেদন গত মঙ্গলবার প্রকাশ করা হয়। এতে দেশভিত্তিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৯৮টি দেশ এবং অঞ্চলের ২০২১ সালের প্রতিবেদন রয়েছে।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, নির্যাতন, সরকার কিংবা সরকারের এজেন্টদের মাধ্যমে নাগরিকদের অমানবিক শাস্তি, নির্বিচারে গ্রেফতার, কারাগারে জীবন-সংকটাপন্ন পরিস্থিতি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রতিশোধ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় বাধা, ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপ, সাংবাদিক নির্যাতন, ইন্টারনেট ব্যবহারের স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের ওপর বিধিনিষেধের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্র তুলে ধরা হয়। এ ছাড়া নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্ষমতার অপব্যবহার ও তাদের জবাবদিহিতার বাইরে থাকার কথা বলা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিপীড়ন ও দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও ব্যাপকভাবে দায়মুক্তি ভোগ করে আসছে বলে খবর রয়েছে। তাদের নিপীড়ন, হত্যা ও দুর্নীতির খুব কম সংখ্যক ঘটনাতেই তদন্ত ও বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ ও র‌্যাব ছাড়াও আছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি)। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছে। এ বাহিনীর ওপর বেসামরিক কর্তৃপক্ষ ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নানা ধরনের নিপীড়ন চালিয়ে থাকেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যেসব বিষয়ের গ্রহণযোগ্য খবর রয়েছে সেগুলো হলো : বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ বেআইনি হত্যাকাণ্ড, গুম, সরকারের পক্ষে নাগরিকদের নির্যাতন বা নিষ্ঠুর, অমানবিক ও অপমানজনক আচরণ, কারাগারে জীবনের জন্য হুমকি সৃষ্টিকারী পরিবেশ, নিবর্তনমূলক গ্রেফতার বা আটক, রাজনৈতিক কারণে গ্রেফতার, অন্য দেশে অবস্থানরত ব্যক্তির ওপর রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপ, ব্যক্তিগত গোপনীয়তার ওপর বেআইনি হস্তক্ষেপ, কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ উঠলে তার পরিবারের সদস্যদের শাস্তি দেওয়া, বাকস্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের ওপর গুরুতর বিধিনিষেধ। এর মধ্যে রয়েছে সাংবাদিকদের ওপর সহিংসতা ও হুমকি, অন্যায়ভাবে গ্রেফতার বা বিচারের মুখোমুখি করা। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের স্বাধীনতার ওপর গুরুতর বিধিনিষেধ, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও সমিতির স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ। এর মধ্যে রয়েছে সংগঠন, তহবিল বা বেসরকারি সংস্থা ও সুশীল সমাজ সংগঠনের ওপর বিধিনিষেধমূলক আইন। এছাড়া শরণার্থীদের চলাচলের স্বাধীনতার ওপর বিধিনিষেধ, শরণার্থীদের নিপীড়ন, ব্যক্তির রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার ওপর গুরুতর ও অযৌক্তিক বিধিনিষেধ, সরকারি পর্যায়ে ব্যাপকভাবে দুর্নীতি, দেশীয় মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে হয়রানি বা সেগুলোর ওপর বিধিনিষেধ, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার তদন্ত ও জবাবদিহির ক্ষেত্রে ঘাটতি, এর মধ্যে গৃহনির্যাতন, যৌন নির্যাতন, শিশু নিপীড়ন, বাল্য ও জোরপূর্বক বিয়েসহ অন্যান্য ক্ষতিকর চর্চা রয়েছে। প্রতিবেদনে ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর সদস্যদের ওপর সহিংসতা ও হুমকি এবং শ্রমিকদের সংগঠনের স্বাধীনতার ওপর উল্লেখযোগ্য বিধিনিষেধ এবং শিশুশ্রমের সবচেয়ে খারাপ রূপের অস্তিত্বের কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্র অনুযায়ী অধিকাংশ ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর দফতরে ন্যস্ত উল্লেখ করে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর বলছে, ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে ওই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশের মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) জানিয়েছে, গত বছর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে কমপক্ষে ৮০ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫১ জন ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে ‘ক্রসফায়ারে’ মারা গেছেন। ২০১৮ সালের মে থেকে জুনের মধ্যে আসক মোট ৬০৬টি বিচারবহির্ভূত মৃত্যুর ঘটনার রিপোর্ট করেছে। অপর এক মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের মতে, গত বছরের জানুয়ারি থেকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ৭১টির মধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের হিসাবে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার গুলিতে ৩০ জন নিহত হয়েছেন এবং হেফাজতে থাকা অবস্থায় নির্যাতনের শিকার হয়ে আরও ছয়জন মারা গেছেন। ২০২০ সালে ‘অধিকার’ মোট ২২৫টি বিচারবহির্ভূত মৃত্যুর কথা জানিয়েছে। ২০১৯ সালে এ সংখ্যা ছিল ৩৯১টি।

মানবাধিকার সংগঠন ও সুশীল সমাজ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গ্রেফতারের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে দাবি করেছে, নিহতদের অনেকেই নির্দোষ। প্রতিবেদনে বিভিন্ন গুম-খুন, পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর বিভিন্ন ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়। বাদ যায়নি বছরজুড়ে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ বিভিন্ন নিবর্তনমূলক আইনে গ্রেফতার, হয়রানি, মুক্তমত প্রকাশে বাধা দেওয়ার ঘটনাসমুহ। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, সেপ্টেম্বরে মিডিয়া রিপোর্ট করেছে, কর্তৃপক্ষ সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছে। ২০২০ সালের মার্চে তার সাজা প্রাথমিকভাবে মানবিক কারণে ছয় মাসের জন্য স্থগিত করা হয় বলা হলেও তিনি নিজ বাড়িতে বন্দি ছিলেন। উভয় ক্ষেত্রেই সরকার খালেদা জিয়াকে তার অসুস্থতার জন্য চিকিৎসা নিতে বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেয় এই বলে যে তিনি ঢাকায় চিকিৎসা পাবেন। আগস্টে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া যদি গৃহবন্দিত্ব মওকুফ করেন, কারাগারে যান এবং সেখান থেকে অনুরোধ করেন তাহলে তিনি বিদেশ ভ্রমণের অনুরোধ করতে পারেন। ২০১৮ সালে খালেদা জিয়াকে দুর্নীতি ও আত্মসাতের অভিযোগে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়, যা ২০০৮ সালে প্রথম দায়ের করা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ