Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ঈদের আগে গার্মেন্টসে শ্রমিক অসন্তোষের শঙ্কা

বেতন-ভাতা পরিশোধে ৭ সুপারিশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ১১ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০০ এএম

ঢাকা মহানগরী, সাভার-আশুলিয়া, টঙ্গী-গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে সর্বমোট ৪ হাজার ৩৪৭টি গার্মেন্টেসের মধ্যে ৯৩টি ফ্যাক্টরীর শ্রমিকদের ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন-ভাতাদি মার্চের মধ্যেও পরিশোধ করার সম্ভাবনা নেই। ফলে এই ৯৩টি গার্মেন্টসে যে কোন সময় শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। আর্থিক সংকট, কার্যাদেশের অভাব, মালিকপক্ষের গাফিলতি ও দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে সংকটে ভুগছে এসব গার্মেন্টস কারখানা। এদিকে শ্রমিক অসন্তোষ নিরসন ও সময় মতো বেতন-ভাতা পরিশোধে ৭টি সুপারিশ করেছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ। সম্প্রতি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের এক প্রতিবেদন গত ১৬ মার্চ পুলিশ সদর দপ্তর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে প্রতিবেদনটি পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে নানা সমস্যায় জর্জরিত গার্মেন্টসগুলোর বেতন বকেয়ার ফলে শ্রমিক অসন্তোষের শঙ্কার কথা বলা হয়েছে। কারণ এই প্রতিষ্ঠানগুলোর ৫৯ হাজার ৯৭৩ জন শ্রমিক গত ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন-ভাতা মার্চেও পায়নি। এছাড়া ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর অনেক গার্মেন্টসের বিদেশে ব্যাংক লেনদেন বন্ধ থাকাসহ জাহাজ ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় রাশিয়া ও ইউক্রেনসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি কমে গেছে বলে পুলিশের প্রতিবেদনে জানানো হয়। এমন পরিস্থিতিতে বিদেশে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি স্বাভাবিক রাখতে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা না হলে গার্মেন্টস শিল্প খাতে বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। গার্মেন্টস শিল্পখাতে এমন বিপর্যয় ঠেকাতে ৭টি সুপারিশও তুলে ধরা হয়েছে পুলিশের প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনের বলা হয়, ঢাকা মহানগরী, সাভার-আশুলিয়া, টঙ্গী-গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে সর্বমোট ৪ হাজার ৩৪৭টি গার্মেন্টেসের মধ্যে ৯৩টি ফ্যাক্টরীর শ্রমিকদের ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন-ভাতাদি মার্চের মধ্যেও পরিশোধ করার সম্ভাবনা নেই। ফলে এই ৯৩টি গার্মেন্টসে যে কোন সময় শ্রম অসন্তোষ সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় তৈরি পোশাক শিল্পের অবদান অনস্বীকার্য। তবে কিছু কিছু গার্মেন্টস মালিক রপ্তানী হ্রাস, ক্রয়াদেশ বাতিল, কাজের অর্ডার কম বা না পাওয়া, মূলধনের অভাব, ঋণ ও প্রণোদনা না পাওয়াসহ বিভিন্ন অজুহাতে প্রতিমাসে সময়মতো শ্রমিকদের বেতন-ভাতাদি পরিশোধ করে না। অনেক ক্ষেত্রে মালিকপক্ষ পূর্ব নোটিশ ছাড়াই আকস্মিকভাবে ফ্যাক্টরী বন্ধ করে দেয়। এছাড়াও সুনির্দিষ্ট নিয়ম না মেনে বিভিন্ন সময়ে কারণে অকারণে শ্রমিক ছাঁটাই করা, ওভারটাইম ভাতা ও বার্ষিক ছুটির টাকা না দেওয়া, কোন কোন ফ্যাক্টরীতে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী না থাকা, হঠাৎ করে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরী অন্যত্র সরিয়ে ফেলা, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার অভাবসহ বিভিন্ন ইস্যুতে মাঝে মধ্যে গার্মেন্টসে শ্রমিক অসেন্তাষ দেখা দেয়।
বিশ^ব্যাপী গার্মেন্টস ফেব্রিক্সহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি আমদানী সংকট, কাজের অর্ডার কম বা না পাওয়া কিংবা অর্ডার বাতিল হওয়া ইত্যাদি কারণে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও সাব-কন্ট্রাক্টের গার্মেন্টসগুলোর উৎপাদন বিঘ্নিত হওয়ায় কিছু কিছু গার্মেন্টস মালিক সময়মতো শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে থাকে। বিজিএমইএ, বিকেএমইএসহ সরকার, মালিকপক্ষ এবং শ্রমিক সংগঠনের সমন্বয়ে শ্রমিকরা যেন তাদের বেতন-বোনাস ও অন্যান্য ভাতাদি সঠিকভাবে ও সময়মতো পায় সে বিষয়টির প্রতি নজরদারী জরুরি। ফ্যাক্টরী অন্যত্র সরিয়ে নিলে বিষয়টি শ্রমিকদের পূর্বেই অবিহত করা এবং শ্রমিকদের বেতন ভাতা ও অন্যান্য ভাতাদি পরিশোধ পূর্বক ফ্যাক্টরী স্থানান্তর করা জরুরি। মালিকরা যেন ফ্যাক্টরী বন্ধ করলে বা শ্রমিক ছাঁটাই করলে সেটা শ্রম আইন অনুযায়ী হয় তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এসব বিষয়ে পদক্ষেপ না নিলে শ্রমিক অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বেতন দিতে না পারা কয়েকটি গার্মেন্টস :
রাজধানীর দক্ষিণখানের ইন্ট্রাকো ফ্যাশন লিমিটেড ও ইন্ট্রাকো ডিজাইন লিমিটেড, দক্ষিণখানের কালার স্টিচ লিমিটেড, দক্ষিণখানের টুডে ফ্যাশন, উত্তরখানের ডিসেন্সি ফ্যাশন, গাজীপুরের লক্ষ¥ীপুরার স্টাইল ক্রাফট লিমিটেড, গাজীপুরের লক্ষ¥ীপুরার ইয়াং ওয়ান্স ( বিডি) লিমিটেড, ইন্ট্রামেক্স ক্লোথিং লিমিটেড, জয়দেবপুরের জিম এন্ড জেসি কম্পোজিট লিমিটেড, আশুলিয়ার মা স্টিপ লিমিটেড, স্প্রোজেন ড্রেস, সাভারের রাকিব এ্যাপারেলস লিমিটেড, আপডেট আউট ওয়্যার লিমিটেড, অর্কিড গার্মেন্টস লিমিটেড, আশুলিয়ার ক্রিস্টাল কম্পোজিট লিমিটেড, এ্যালাইন এ্যাপারেলস, সিলবার স্টাইল ডিজাইন লিমিটেড, ম্যাগপাই নীট ওয়্যার লিমিটেড,টেক্সটার ডিজাইন লিমিটেড, রাজধানীর দক্ষিণখানের সি এন্ড হি এপারেলস লিমিটেড, পল্লাবীর ক্লামুন গার্মেন্টস লিমিটেড, ওলিরা ফ্যাশন লিমিটেড, অ্যাডামস প্রাইভেট গার্মেন্টস লিমিটেড, রূপনগরের যমুনা ফ্যাশন লিমিটেড, কে টেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, গাজীপুরের এএসআর সোয়েটার লিমিটেড, লাক্সমা ইনার ওয়্যার লিমিটেড, ডেল্টা নিট কম্পোজিট লিমিটেড, টিআরজেড গার্মেন্টস লিমিটেড, ইয়াং ওয়ান্স (বিডি) লিমিটেড, ইস্ট ওয়েস্ট ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক লিমিটেড, চট্টগ্রামের সাদ-মুছা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ব লিমিটেড, রিজেন্ট টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড, নারায়ণগঞ্জের বেকা গার্মেন্টস অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেড ও ময়মনসিংহের সাবাব ফ্যাব্রিকস লিমিটেড, দ্য রোজ গার্মেন্টস ডিজাইনার ইউনিট লিমিটেড, ওরিয়ন নিট টেক্স লিমিটেডের মতো কারখানাগুলো আর্থিক সংকটসহ নানা অব্যবস্থাপনার মুখে শ্রমিকের বেতন-ভাতা ঠিকমতো পরিশোধ করতে পারছে না বলে পুলিশের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। তবে পুলিশের এমন প্রতিবেদন অস্বীকার করে গার্মেন্টস মালিকদের কেউ কেউ নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, তারা সময়মতোই বেতন-ভাতা পরিশোধ করছেন।
বেতন-ভাতা পরিশোধে ৭ সুপারিশ:
শ্রমিক অসন্তোষ নিরসন ও সময়মতো বেতন-ভাতা পরিশোধে ৭টি সুপারিশ করেছে পুলিশ। এগুলো হচ্ছে. গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন-ভাতাদি যাতে প্রতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে নিয়মিত পরিশোধ করা হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করা। বিদেশী অর্ডার পাওয়ার ক্ষেত্রে অসুস্থ প্রতিযোগিতা পরিহারে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও শ্রম মন্ত্রণালয় কর্তৃক নীতিমালা প্রণয়ণ করা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ইউরোপে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি স্বাভাবিক রাখতে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। শ্রমিক ছাঁটাই ও কারখানা বন্ধরোধে রুগ্ন, মাঝারি ও ক্ষুদ্র কারখানাগুলোকে চিহ্নিত করে তাদের আর্থিক ও কারিগরি প্রণোদনাসহ সমস্যা সমাধানে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ,শ্রম মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। বাজার গবেষণা ও স্টাডির মাধ্যমে নতুন নতুন প্রযুক্তির প্রয়োগ ও পণ্যের বহুমুখীকরণসহ নতুন বাজার সৃষ্টিতে উদ্যোগী হওয়া জরুরি। শ্রমিক বিক্ষোভ ও অসন্তোষ বন্ধে হঠাৎ করে শ্রমিক ছাঁটাই ও কারখানা বন্ধ না করে শ্রম আইন অনুযায়ী কারখানা লে-অফ ও শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ব্যবস্থা করা। শ্রমিক অসন্তোষসহ কোনরুপ অপ্রীতিকর ঘটনার আগাম তথ্য পাওয়া গেলে তা পূর্বেই প্রশাসন, মালিক-শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ