পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মানুষকে সমাজের মূল ধারায় এনে তাদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এরা আমাদের আপনজন। তাদের দেখাশোনা করা, তাদের যত্ন নেয়া সব সুস্থ মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য। কেউ যেন এদের অবহেলা না করে। গতকাল শনিবার ‘১৫তম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস-২০২২’ উদযাপন অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অংশ নেন। তিনি বলেন, অটিজমটা আছে কিনা শুরুতেই তা চিহ্নিত করে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও ব্যবহার করে তাদের অনেকখানি সুস্থ করে তোলা যায়। এ চেষ্টা আমাদের রয়েছে।
অটিজম বৈশিষ্ট্যসহ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের সুপ্ত প্রতিভার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বখ্যাত বেটহোফেন (জার্মান সঙ্গীতজ্ঞ লুডভিগ ফন বেটোফেনের), ইলিয়টের (বিশ্ববিখ্যাত কবি ও লেখক টি.এস.এলিয়ট) কথা বলি অথবা আইনস্টাইনের (বিখ্যাত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন) বা স্টেফেন হকিং (ব্রিটিশ পদার্থবিদ স্টিফেন হকিং) যার কথা আমরা বলি প্রত্যেকের মাঝেই কিন্তু এই ধরনের একটা অটিজমের সমস্যাটা ছিল। তারা কিন্তু সমাজে এমন কিছু দিয়ে গেছেন; কোনো দিন কেউ চিন্তাই করতে পারেনি যে, তাদের ভেতর এ সমস্যা ছিল। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের বিকাশে সঠিক পরিচর্যা করার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, এদের ভেতরে একটা সুপ্ত প্রতিভা লুকায়িত আছে। সেটিকে বের করে নিয়ে এসে কাজে লাগাতে পারলে কিংবা তাদের মেধা বিকাশের সুযোগ দিলে তাদের জীবনটা সুন্দর হবে। সঠিক পরিচর্যা পেলে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিরাও সমাজে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাইকে মনে রাখতে হবে, এটি কোনো রোগ না। এক সময় ছিল শিশু যদি প্রতিবন্ধী হতো বা অটিজম হতো তাহলে মানুষ তাকে লুকিয়ে রাখত, পরিবার লুকিয়ে রাখত, তাদের পরিচয় সামনে বলতে লজ্জা পেত। তাদের সামনে আনলে অনেকে দেখে এটা নিয়ে হয়ত প্রশ্ন করত। এখন সে অবস্থা নেই।
বিশ্বব্যাপী অটিজম সম্পর্কে মানুষের ধারণা বদলাতে সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুলের অবদানের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এইটুকু অন্তত বলব সায়মা ওয়াজেদ যখন শুরু করলো এই অটিজম নিয়ে কার্যক্রম এবং মানুষের মাঝে সচেতনতা শুরু করা; জাতিসংঘে এটির ওপর রেজুলেশন নেওয়া; এই ধরনের কার্যক্রম করার ফলে আজকে শুধু আমাদের দেশে না সারাবিশ্বেই কিন্তু এই বিষয়গুলো মানুষ গ্রহণ করে নিয়েছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বেড়ে ওঠার সুযোগ করে দেয়ার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে সমস্ত শিশুদের মধ্যে অটিজমটা একটু কম আছে বা যারা মিশতে পারে তাদেরকে স্কুলের সাধারণ ছেলে-মেয়ের সঙ্গে মিশতে দিতে হবে। এর মাধ্যমে তারা অনেকখানি সুস্থ হয়ে উঠবে। অন্যদের সঙ্গে মিশতে মিশতে তারা শেয়ারিং করতে শেখে, ঝগড়া করুক, বন্ধুত্ব করুক বা মারামারি করুক; যাই করুক না কেন এর মধ্যে তাদের মনে আত্মবিশ্বাস গড়ে ওঠে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন কেউ পিছিয়ে থাকবে না। সবার জন্যই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কাজেই আমার দৃষ্টিতে সমাজের অনগ্রসর যারা বা অবহেলিত পড়ে আছেন তারাও সমাজের একটি অঙ্গ। তাদেরও যেমন কর্মদক্ষতা আছে, তাদেরও যেমন মেধা আছে। সেই মেধা বিকাশের সুযোগ সবসময় আমরা করে দিচ্ছি। আর বিশেষ করে যারা প্রতিবন্ধী বা অটিজম তাদের দিকে বিশেষ করে দৃষ্টি দিচ্ছি।
অভিভাবক না থাকলেও অটিজম বা প্রতিবন্ধীদের ট্রাস্টের মাধ্যমে হোস্টেল বা ডরমেটরি নির্মাণ করে থাকার বাসস্থান বা থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ট্রাস্টের মাধ্যমে এই ধরনের হোস্টেল ও ডরমেটরি নির্মাণ করে দিতে পারি। যেখানে এরা থাকবে। আর তাদের সুরক্ষা বা দেখাশোনার জন্য লোক থাকবে। আর সমাজে যারা বিত্তশালি আছেন তারা ডোনেশনও দিতে পারবেন। আর সরকারের পক্ষ থেকে আমি যতক্ষণ আছি এইটুকু বলতে পারি সবরকম সহযোগিতা আমরা করব। শুধু ঢাকা শহর না আমাদের প্রত্যেক বিভাগীয় শহরে বা অন্যান্য বড় শহরে এধরনের পদক্ষেপ আমাদের নেওয়া উচিত।
প্রধানমন্ত্রী বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে তার সরকারের পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে বলেন, তারা ইতোমধ্যেই মীরপুরে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষের জন্য একটি কমপ্লেক্স নির্মাণ করে দিয়েছে। ২০১০ সালে মীরপুরে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের ক্যাম্পাসে একটি ‘অটিজম রিসোর্স সেন্টার’ এর কার্যক্রম শুরু হয়। অটিস্টিক শিশু ও ভিন্নভাবে সক্ষম মানুষদের বিনামূল্যে আবাসিক চিকিৎসাসেবা, প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে একটি বহুমুখী কমপ্লেক্স সুবর্ণা ভবন স্থাপন করা হয়েছে। তিনি বলেন, জাতির পিতা স্বাধীনতার পর এতিমখানা অথবা অন্যান্য কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধায়নে ১৯টি জেলায় বিরাট এলাকা বরাদ্দ দিয়েছিলেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী অটিস্টিক শিশুদের জন্য ‘বলতে চাই’ ও ‘স্মার্ট অটিজম বার্তা’ নামক দুটি অ্যাপসের উদ্বোধন করেন
এবারে ওয়ার্ল্ড অটিজম অ্যাওয়ারনেস ডে-২০২২ এর প্রতিপাদ্য ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মক্ষেত্র’। অটিজমে আক্রান্ত শিশু এবং প্রাপ্ত বয়স্কদের জীবন উন্নত করতে সকলের দ্বারা ব্যাপক উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ২ এপ্রিলকে ওয়ার্ল্ড অটিজম অ্যাওয়ারনেস ডে ঘোষণা করে।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সমাজ কল্যাণমন্ত্রী বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্যে চারটি ক্যাটাগরিতে অটিজমে আক্রান্ত তিন শিশু, তিনটি সংস্থা, দু’জন ব্যক্তি এবং একজন মায়ের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। এছাড়া, অটিজমে আক্রান্তদের উন্নয়ন ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে অবদান রাখায় তিন সংস্থা এনআই খান ফাউন্ডেশান, আরটিভি এবং ফাউন্ডেশান ফর উইমেন এন্ড চিলড্রেন এবং দু’জন ব্যক্তি সুবর্ণ চাকমা, প্রফেসর খন্দকার আবদুল্লাহ আল মামুনকে সম্মানজনক মানপত্র প্রদান করা হয়। অটিস্টিক শিশুর সফল মা শারমিন চৌধুরীকে পুরস্কার প্রদান করা হয়।
সমাজ কল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু, মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহফুজা আক্তার বক্তৃতা করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।