পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ফুলবাড়িয়া জাকির সুপার মার্কেট-২-এর স্বঘোষিত সাবেক সভাপতি দেলোয়ার হোসেন ওরফে ক্যাসিনো দেলু’র বিরুদ্ধে ফুলবাড়িয়ার ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা বেশ কয়েকদিন বিক্ষোভ করলেও সরানো যায়নি সেই দেলোয়ার হোসেন ক্যাসিনো দেলুকে। দেলু প্রভাব খাটিয়ে মার্কেটের উচ্ছেদ করা দোকানগুলো ফের ব্যবসায়ীদের কাছে ভাড়া দেওয়ার পাঁয়তারা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। শত অভিযোগের পর ও খুঁটির জোরে এখন ও অবৈধ সিন্ডিকেট পরিচালনা করছে দেলু।
দেলুর সহযোগী জামাল হোসেন শেখ পরিবারে এক প্রভাবশালী নেতার নাম ভাঙ্গিয়ে মার্কেটের উন্নয়নের নামে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন অর্ধশত কোটি টাকা। যার জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করছে দেলোয়ার অন্য সহযোগী, মেট্রো মাসুম, জুবায়ের, ওয়ালীউল্লাহ, নাসির উদ্দিন, সোহেল, সাঈদ, আবু জাফর, রাকিব, তারেকসহ সিন্ডিকেটের আরো অনেক সদস্য। উক্ত টাকা ভাগ ভাটোয়ারা করা হয় দেলুর পল্টনের অফিসে। পবিত্র রমজান মাসকে সামনে রেখে নতুন করে চাঁদা আদায়ে ফন্দি ফিকির করছেন দেলুর সিন্ডিকেটের সদস্যরা।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দেলুর একদল সন্ত্রাসী বাহিনী মার্কেটে প্রবেশ করে উচ্ছেদ হওয়া স্থানগুলো ফের দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে। এসময় মার্কেট সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ আহমেদের নেতৃত্বে ব্যবসায়ীরা বাধা দেন। এর আগেও দেলুর লোকজন এসে ব্যবসায়ীদের কাছে প্রস্তাব দেন, সিটি করপোরেশনের ভেঙে দেওয়া দোকানগুলো তারা আবার নির্মাণ করে ব্যবসায়ীদের কাছে ভাড়া দেবেন। এ জন্য তারা মেয়রের অনুমোদন নিয়ে আসবেন বলেও ব্যবসায়ীদের আশ্বাস দেন।
ব্যবসায়ীরা বলেন, দেলুর অনুসারীদের এমন প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন মার্কেটের অন্যান্য বৈধ ও উচ্ছেদ হওয়া ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, এই মার্কেট নিয়ে অনেক হয়েছে। তারা আর বদনাম নিতে চান না। ভেঙে দেওয়া দোকান দখল বা পুনঃনির্মাণ করতে দেওয়া হবে না। এসময় ব্যবসায়ীরা দেলুর বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন।
যার নেই কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা। এরপরও যখন যে দল ক্ষমতায় আসে সে দলের প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় গড়ে তুলেছেন অপরাধ সিন্ডিকেট। রাজধানীর ফুলবাড়িয়া এলাকায় জাকির সুপার মার্কেটসহ তিনটি মার্কেট নিয়ন্ত্রণে রেখে আয় করেছেন কয়েকশ কোটি টাকা। দেশে অনলাইন ক্যাসিনোর সূত্রপাতও তার হাত ধরেই। তার নাম দেলোয়ার হোসেন হলেও তাকে আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবাই চেনে ক্যাসিনো দেলু নামে।
আর গুলিস্তান-ফুলবাড়িয়া এলাকা ও দক্ষিণ সিটির নগর ভবনে তার পরিচিতি ‘মার্কেট খেকো দেলু’ নামে। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকে তার খবর নেই। সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় দেশের টাকা পাচার করে গড়ে তুলেছেন নানা ব্যবসা-বাণিজ্য। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের করা মামলায় দীর্ঘসময়ে পালিয়ে থাকা দেলু সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া জাকির সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী ব্যবসায়ীদের সামান্য বিবাদের ঘটনাকে অন্য দিকে রুপ দিতে আবির্ভাব হয়েছে দেলোয়ার হোসেন দেলুর। উক্ত ঘটনা নিয়ে পায়তারা শুরু করছে বলে অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে ।
সাম্প্রতিক সময়ে, রাকিব হোসেন নামের এক ব্যবসায়ীর ২য় তলা থেকে নিচে পড়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবারও মার্কেটে উত্তেজনা সৃষ্টি করে ছিলেন একটি চক্র। ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে পুনরায় প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের ছক আঁকছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ প্রকাশে একটি পক্ষ বলেছেন রাকিব নামে ব্যবসায়ীকে পেলে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে এমনটাই করেছেন উক্ত মার্কেটের সাবেক সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দেলু। যদিও পুলিশ তদন্তের রিপোর্ট বলছে ভিন্ন কথা, রাকিব নামে ব্যবসাীর সাথে দুইজন ব্যবসায়ীক তুমুল হট্টগোল এক পর্যায়ে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, বাঁচতে গিয়ে রাকিব নিজেই ২য় তলা থেকে লাফ দিয়েছেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা যায়। পরবর্তিতে ঘটনার মোড় ঘুরানো হয় অন্য দিকে অপরপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য পুরো ছক এঁকেছেন উক্ত মার্কেটের সাবেক সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দেলু। এমনটাই জানিয়েছেন ভূক্তভোগী ব্যবসায়ী ফিরোজ আহমেদ।
২০১৭ সালে দেলোয়ার হোসেন দেলুর হাত ধরে দেশে অনলাইন ক্যাসিনোর যাত্রা। বিদেশ থেকে অনলাইন ক্যাসিনোর সরঞ্জাম আমদানি করে ব্যবসা শুরু করেন রাজধানীর পল্টন এলাকার প্রিতম-জামান টাওয়ারের ১৩ ও ১৪ তলায়। এ ক্যাসিনো পরিচালনার জন্য লোকও আনা হয় নেপাল থেকে। সম্প্রতি শুদ্ধি অভিযানে কারাগারে যাওয়া অনেকেই দেলুর ছত্রছায়ায় থেকে প্রভাব খাটিয়েছেন। সূত্র জানায়, প্রিতম-জামান টাওয়ারে অনলাইন ক্যাসিনো চালুর পরে এটি জনপ্রিয় করতে নানা উদ্যোগ নেন দেলু। খাদ্য ও পানীয় ফ্রি সরবরাহ করা হতো এখানে। এছাড়া ছিল নানা লোভনীয় অফার। এভাবে কেবল অনলাইন ক্যাসিনোর মাধ্যমেই দেলু আয় করেন কয়েকশ কোটি টাকার ওপরে।
দেলুর কয়েক ঘনিষ্ঠজন জানান, মালয়শিয়ায় সেকেন্ড হোম রয়েছে দেলুর। সেখানকার কেপাং শহরে রয়েছে তার নিজস্ব অফিস রয়েছে নানা রকম ব্যবসাও। তিনি প্রায় প্রতিমাসেই সিঙ্গাপুর ও মালয়শিয়ায় হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার করেন। জানা যায়, দেলোয়ার হোসেন দেলু নিজেকে একজন ঠিকাদার ও ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিতেন। রাজধানীর ফুলবাড়িয়া এলাকার নগর প্লাজা, সিটি প্লাজা ও জাকের মার্কেটের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ থাকায় তার সব অপরাধ নিয়ন্ত্রিত হতো এ স্থান থেকেই। দীর্ঘদিন ধরে তিনি মার্কেটে না থাকলেও তার নিয়ন্ত্রণ একটুও কমেনি। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরেই তিনি এ নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছেন।
নগর ভবন সূত্র জানায়, ২০১২ সালে ফুলবাড়িয়া এলাকার নগর প্লাজা, সিটি প্লাজা ও জাকের প্লাজা এই তিন মার্কেটের প্রতিবর্গফুট ২০ টাকা দামে ১ লাখ ৩৬ হাজার বর্গফুট জায়গা বরাদ্দ দেয় দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। সম্পত্তি বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে হাত করে অবৈধভাবে এসব বরাদ্দ নেন দেলু। এই তিন মার্কেট বরাদ্দের নামে পুরোটাই দখল করেন তিনি। তার পছন্দসই লোকজন দিয়ে মার্কেট তিনটিতে সমিতিও করেন। তারাই এখন এগুলো নিয়ন্ত্রণ করছেন।
দেলু দক্ষিণ সিটির কাছ থেকে লিজ নিয়ে বরাদ্দকৃত দোকান ছাড়াও আরও দোকান নির্মাণ করেন। এসব মার্কেটে নকশার বাইরে গিয়ে অবৈধভাবে গড়ে তোলেন বারোশ' দোকান। বাথরুম, বাথরুমের সামনের খোলা জায়গা, লিফটের জায়গা, ফ্লোর স্পেস, বারান্দা, বেজমেন্ট, ক্রেতাদের হাঁটাচলার জন্য রাখা খোলা জায়গা দখল করে এসব দোকান বানানো হয়। তিনটি মার্কেটে বারোশ' দোকান তৈরি করে প্রতিটি দোকান থেকে ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নেন দেলু। এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে তৎকালীন শাহবাগ থানায় একটি জিডিও করা হয়। কিন্তু জিডি করেই দায় সারেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
কেবল দোকান বিক্রিই নয়, বিভিন্ন সময় এসব দোকান মালিকদের কাছ থেকে নানা ছুতোয় আদায় করেন লাখ লাখ টাকা। চার মাস আগে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে দিতে হবে এমন দাবি করে প্রতিটি দোকান থেকে আকারভেদে ৫ লাখ থেকে দশ লাখ টাকা আদায় করেন দেলোয়ার হোসেন। দেলু বেশ কিছুদিন বিদেশে থাকলেও তার নিয়ন্ত্রণ একটুও কমেনি। তার লোকজন এখনো প্রভাব বিস্তার করে আছেন। অবাক হলেও সত্য এই তিনটি মার্কেটে আলাদা আলাদা সাধারণ সম্পাদক থাকলেও সভাপতি একজনই দেলোয়ার হোসেন দেলু। এই বিষয়ে বংশাল থানায় এ সংক্রান্ত একটি মামলাও করা হয়।
মার্কেটের দোকান বিক্রি করে দিলেও অদ্ভুত এক নিয়ম করে সব দোকানের কর্তৃত্ব রাখা হয়েছে দেলুর হাতে। সিটি করপোরেশন মালিক হলেও এসব দোকান বিক্রি, ব্যাংক লোনসহ সব কার্যক্রমে স্বাক্ষর নিতে হয় দেলুর। এসব কাজের জন্যও দিতে হয় আলাদা আলাদা অর্থ।
,
জানা যায়, দেলুর উত্থান হয় ওয়ার্ড কমিশনার সাহাবুদ্দিন হত্যার মধ্য দিয়ে। এরপর শুরু হয় দখল ও চাঁদাবাজি। গড়ে তোলেন বিশাল ক্যাডার বাহিনী। মার্কেটের সর্বত্র গড়ে তোলা হয়েছে অপরাধের আখড়া। মাদক আর ক্যাসিনো বাণিজ্যের কেন্দ্রও গড়ে তুলেছিলেন মার্কেটে। আর এসবের মাধ্যমে বিদেশে গড়ে তোলেন ব্যবসা। এর বাইরে দেলুর নারায়ণগঞ্জে পাঁচটি বহুতল ভবন, সেগুনবাগিচায় ১৫টি ফ্ল্যাট, পল্টনের আজাদ প্রোডাক্টস বিল্ডিংয়ে নিজস্ব বাণিজ্যিক অফিস রয়েছে,মুগদা থানার পাশে অমিত ডিজাইন এন্ড আর্কিটেক্ট লিমিটেড নামের এক বিলাস বহুল ভবনে রয়েছে তার নিজস্ব ২৮ টি ফ্ল্যাট। ভুক্তভোগি ব্যবসায়ীরা বলেন, এই দেলোয়ার হোসেন দেলু আমাদের এই মার্কেট অনেক দুর্নাম ছড়িয়েছে। আমরা আর এই দুর্নাম চাই না। আমরা চাই ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন করা হোক। নতুন করে কোনো দখলদারকে যেন আর সুযোগ দেওয়া না হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।