Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রস্তাবিত আইনে গণমাধ্যমকর্মীদের চাকরির সুরক্ষা নিশ্চিত হয়নি : টিআইবি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩১ মার্চ, ২০২২, ৮:২২ পিএম

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) মনে করে, প্রস্তাবিত গণমাধ্যমকর্মী আইনে গণমাধ্যমকর্মীদের চাকরির সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিত করা হয়নি। এ জন্য জাতীয় সংসদে উত্থাপিত বিলটি সংশোধনের জন্য এককভাবে মালিক পক্ষের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে, গণমাধ্যমকর্মী ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করারও দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।

বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) টিআইবির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এসব কথা জানানো হয়েছে। খসড়া আইনটি বৈষম্যমূলক বলে মন্তব্য করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দ্বিতীয় ধারায় যে অল্প কয়েকটি সংজ্ঞা সন্নিবেশিত হয়েছে তাতে স্পষ্ট যে, এই খসড়া আইনটির আরও গভীর বিশ্লেষণ ও সংশোধন অপরিহার্য। গণমাধ্যমের ভূমিকা ও কর্তব্য বিবেচনায় নিলে গণমাধ্যমকর্মীদের চাকরি যে বিশেষ বিবেচনার দাবি রাখে, তারও কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি। আপাতদৃষ্টে মনে হচ্ছে, শ্রম আইনে যে ন্যূনতম মানদণ্ড ঠিক করা হয়েছে শুধু সেগুলোকে ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করাকেই যথেষ্ট বলে ধরে নেওয়া হয়েছে। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেখানেও একতরফাভাবে কাটছাঁট করা হয়েছে।

উদাহরণ হিসেবে তিনি সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টা কর্ম ঘণ্টা এবং ১ দিন সাপ্তাহিক ছুটি নির্ধারণের বিষয়গুলো উল্লেখ করেন। সরকার ঘোষিত দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটি, বা দোকান, ব্যবসা বা ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য দেড় দিনের সাপ্তাহিক ছুটি এবং খাওয়া ও বিশ্রামের জন্য এক ঘণ্টার বিরতির বিষয়সমূহ বিবেচনা করা হয়নি, যা অনেক ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক। প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে গণমাধ্যমকর্মীকে বিধি অনুযায়ী অতিরিক্ত ভাতা দিয়ে ৪৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করানো যাবে। কিন্তু শ্রম আইনে মূল বেতনের দ্বিগুণ ভাতা দেওয়া বা সপ্তাহে, মাসে বা বছরে সর্বোচ্চ কতো ঘণ্টা অতিরিক্ত কাজ করানো সংক্রান্ত অংশটি বিবেচনা করা হয়নি।

ড. জামান বলেন, এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমকর্মীদের কাজের ধরন অন্য সব প্রতিষ্ঠানের থেকে আলাদা এই যুক্তি দেওয়া হলে, তারা যে বাড়তি সুবিধা পাওয়ার অধিকার রাখেন- সেটাও স্বীকার করে নিতে হবে। আলোচ্য বিলের ১২ ধারায় গণমাধ্যম মালিকদের অতিরিক্ত কর্মী ছাঁটাই করার অধিকার দেওয়া হয়েছে। করোনা মহামারির মাঝে দেশের প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যম থেকে শুরু করে প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ঢালাও কর্মী ছাঁটাই, বেতন-বোনাস কমিয়ে দেওয়া, বেতন বন্ধ রাখার মতো ঘটনাগুলো উল্লেখ করে ড. জামান বলেন, ‘অতিরিক্ত’ বলতে কোন প্রেক্ষিতে কী বুঝানো হয়েছে, তা নিশ্চিত না করা হলে, গণমাধ্যমকর্মীদের চাকরির সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।

এছাড়া ১৪ ধারায় অসদাচরণের সংজ্ঞা না দিয়েই এই অপরাধে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার বিপজ্জনক বিধান রাখা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, ২৫ ধারায় ন্যূনতম ওয়েজ বোর্ড গঠনের বিষয়টি বাধ্যতামূলক না করে, সরকারের বিবেচনা ও ইচ্ছাধীন করা হয়েছে। অন্য ধারায় ন্যূনতম বেতন না দিলে মালিক পক্ষকে বাধ্য করার জন্য শাস্তির বিধান থাকলেও, এ কথা অস্বীকার করা যাবে না যে, মালিক পক্ষ সরকারের সঙ্গে দেন দরবার করে ওয়েজ বোর্ড গঠনই আটকে দিতে পারে। একইভাবে ভবিষ্যৎ তহবিল গঠনের বিষয়টিও মালিক পক্ষের ইচ্ছাধীন রাখা হয়েছে।

গণমাধ্যমকর্মী কল্যাণ সমিতি নামে সাংবাদিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার বিষয়টি থাকলেও, এ সংক্রান্ত বিধি-বিধান এই বিলে অনুপস্থিত। এ বিষয়ে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিধি প্রণয়নের জন্য রেখে দেওয়াটা কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়, বরং এটাকে ইচ্ছাকৃত বলে মনে করি। অবাক করার মতো বিষয় হলো, এই পুরো বিলের কোথাও সম্পাদক শব্দটির উল্লেখ পর্যন্ত নেই। গণমাধ্যমে যে ভিন্ন ভিন্ন পেশাজীবীরা কাজ করেন, তারও কোনো উল্লেখ নেই। তাই আইনটি শুধুমাত্র করতে হবে বলে করা হচ্ছে- এমনটা ভাবা অবান্তর হবে না।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ