পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমেরিকায় ৯/১১ এর ঘটনার পর তারা সন্ত্রাস দমনে বিভিন্ন দেশকে পরামর্শ দিয়েছিল, আর সেই পরামর্শেই বিএনপি সরকার র্যাব সৃষ্টি করেছিল। আর র্যাবের বিরুদ্ধে বদনাম এ দেশের মানুষই করেছে। জাতীয় সংসদ অধিবেশনে গতকাল প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশে কিছু লোক আছে, তারা একটু বুদ্ধিজীবী, তারা নানা ধরনের সংগঠন করে। আর এই সংগঠনের মাধ্যমে তাদের পয়সা জোগাড় হয়, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারলেই তারা পয়সা জোগাতে পারে। আমাদের র্যাবের বিরুদ্ধে বদনাম এ দেশের মানুষই করেছে। অন্যদের দোষ দিয়ে কী হবে?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, র্যাব সৃষ্টি হয়েছিল আমেরিকায় যখন ৯/১১ হলো, তারপরে তারা সন্ত্রাস দমনে বিভিন্ন দেশকে পরামর্শ দিয়েছিল। আর সেই পরামর্শে তখন বাংলাদেশে বিএনপি ক্ষমতায়, তখন তারা এই র্যাব সৃষ্টি করেছিল। অবশ্য র্যাব সৃষ্টি করে তারা র্যাবকে যথেচ্ছ ব্যবহার করেছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রকৃতপক্ষে এ দেশে জঙ্গিবাদ দমন, সন্ত্রাস দমন অথবা নারী নির্যাতন বা যেকোনো একটা হত্যাকাণ্ড হলে তদন্ত করা এ ধরনের মানবিক কাজই করেছে র্যাব। মানবাধিকার লঙ্ঘন না, মানবাধিকার সংরক্ষণে তারা কাজ করেছে। কিন্তু আমাদের দেশের কিছু মানুষ আছে, এটা দুঃখজনক। এদের কাজটাই হচ্ছে বাংলাদেশ যখন কোনো একটা অস্বাভাবিক সরকার থাকে অর্থাৎ অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী কেউ ক্ষমতায় থাকলে তখন তারা খুব ভালো থাকে। কারণ তাদের খুব গুরুত্ব থাকে। কিন্তু যখন একটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চলমান থাকে তখন বোধ হয় তারা ভালো থাকে না, তাই সবসময় তারা গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে লেগেই থাকে। যত ভালো কাজ আপনি করেন তারা কোনো কিছু ভালো দেখতে জানে না।
শেখ হাসিনা বলেন, একটি মহল দেশে অস্বাভাবিক সরকার চায়। এরা সবসময় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানারকম অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে এবং নানা ধরনের চিঠি ইত্যাদি, র্যাব সম্পর্কেও তারা অনেক অভিযোগ করেছে। এই নানা ধরনের অপপ্রচার তারাই বিদেশে বেশি বলেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার নানা কার্যক্রম গ্রহণের ফলে বাজারে দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। আশাকরি পবিত্র রমজান মাসেও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। দ্রব্যমূল্য নিয়ে সংসদ গরম করা হলো, সেজন্যই আমি যখন প্রশ্নগুলো (তারকা চিহ্নিত প্রশ্ন) পেলাম, এটা এক নম্বরে নিয়ে আসলাম। ভাবলাম যে আজ উত্তর দেবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী সব জিনিসের দাম বেড়েছে। তার প্রভাব আমাদের ওপর পড়েছে, এটা স্বাভাবিক। কিছু লোক তো আছে যারা সুযোগটা নেওয়ার চেষ্টা করে। সেটা যাতে নিতে না পারে, তার জন্য আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি। দেশের নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীসহ সবধরনের পণ্যসামগ্রীর মূল্যের সাম্প্রতিক ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণপূর্বক তা সহনীয় পর্যায়ে রাখার লক্ষ্যে সরকার কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। গৃহীত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- আসন্ন পবিত্র রমজান উপলক্ষে দেশের সব সিটি করপোরেশন, জেলা, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে নিম্ন আয়ের এক কোটি পরিবারের কাছে রমজান শুরুর আগে ও রমজানের মাঝামাঝি মোট দুইবার টিসিবির পণ্যসামগ্রী ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে নির্ধারিত মানদণ্ডের ভিত্তিতে টিসিবির পণ্যসামগ্রী বিক্রি করা হবে। তবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় আগের মতো ট্রাক সেলের মাধ্যমে পণ্যসামগ্রী ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের সভাপতিত্বে নিয়মিত সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও সে অনুযায়ী প্রতিবেদন উপস্থাপনের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের গঠিত ‘দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেল’ প্রতিদিন বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন, টিসিবি ও কৃষিবিপণন অধিদফতর থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি ও সরবরাহ অবস্থা পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের এলসির তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার লক্ষ্য পূরণ করাই একমাত্র কাজ। আমার লক্ষ্য মানুষকে উন্নত জীবন দেওয়া। ১৯৯৬ সালে সরকারে আসার পর থেকে ভূমিহীন মানুষদের ঘর তৈরি করে দিচ্ছি এবং পুনর্বাসন করে যাচ্ছি। আমরা শুধু ঘর দিয়ে বসে থাকছি না, ঘর দেওয়ার পরে তাদের অর্থ দিচ্ছি, প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। আয়ের পথও করে দিচ্ছি। ১৫ আগস্টের পরে যে দুঃখ, কষ্ট, যতনা ভোগ করতে হয়েছে আমার জীবনে, সেই দুঃখের মধ্য দিয়ে, বোঝা নিয়ে বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলাম বাবার স্বপ্ন পূরণে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এ স্বপ্ন পূরণের কথা বলতে বলতে সংসদে আবেগতাড়িত হয়ে কেঁদে ফেলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসব ঘর উপহার দেওয়াকে জীবনে সব থেকে আনন্দের দিন বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, আমার জীবনে সব থেকে বড় আনন্দের দিন। একজন মানুষ, যার কিছু ছিল না, তাকে একটা ঘর দিয়ে তার মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছি। এর থেকে বড় আনন্দের কিছু হতে পারে না। সেদিন আনন্দে চোখের পানি রাখতে পারিনি। আমি অঝোরে কেঁদেছিলাম। কারণ এটাই তো আমার বাবার স্বপ্ন ছিল।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নুর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে একক দেশ হিসেবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে জাতিসংঘ থেকে প্রস্তাব তোলায় বাংলাদেশ তাতে ভোট দেয়নি, তবে দ্বিতীয় প্রস্তাবটি ইউক্রেনের মানবাধিকার বিষয়ে হওয়ায় ভোট দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বাংলাদেশের পক্ষে রাশিয়ার অবদানের কথা স্বীকার করে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
বিমসটেক নেতাদের একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমসটেক নেতৃবৃন্দকে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, কভিড-১৯ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ এবং পশ্চিমের রাজনৈতিক সংকটের প্রভাব মোকাবেলায় সদস্য দেশগুলোর পারস্পরিক স্বার্থে এই ফোরামটি হতে পারে একটি কার্যকর হাতিয়ার। তিনি বলেন, এই সম্মেলন আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত করার এবং একাধিক চ্যালেঞ্জের অভিন্ন সমাধান খুঁজে বের করার সুযোগ দেবে।
গতকাল গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোতে অনুষ্ঠিত পঞ্চম বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে এ সব কথা বলেন তিনি। বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্ট্রি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন (বিমসটেক) ফোরামের ২৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে শেখ হাসিনা এ অঞ্চলের পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে একটি টেকসই এবং প্রতিকূলতা সহিষ্ণু বঙ্গোপসাগর অঞ্চল পূনর্গঠনের জন্য অভিন্ন কৌশল খোঁজার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বিমসটেক সদস্যভুক্ত ৭টি দেশে ১৫৪ কোটির বেশি লোকের বসবাস, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক পঞ্চমাংশের বেশি এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বিশাল জনসংখ্যা কেবল একটি চ্যালেঞ্জ নয়, এটি একটি বড় সুযোগও।
শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী তিন দফা প্রস্তাব রাখেন এবং সকল নেতাদের সহযোগিতায় ১৪টি সেক্টরকে সক্রিয় করে প্রক্রিয়াটিকে সম্পূর্ণরূপে কার্যকর করার আহ্বান জানান। প্রথম দফায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জনগণের স্বার্থে অবিলম্বে বাস্তব সুবিধা নিশ্চিত করতে বিমসটেক এফটিএ, বিমসটেক সেন্টারসমূহ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র, এনার্জি সেন্টার, কালচারাল কমিশন ইত্যাদি, সংযোগ প্রকল্প, বিদ্যুতের গ্রিড লাইন সংযোগে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাস্তবায়ন ও কার্যকর করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।
দ্বিতীয় দফায় তিনি বলেন, অন্যান্য সব আইনি উপকরণ এবং নীতি সংক্রান্ত চলমান প্রক্রিয়া যা এখনো সম্পন্ন হয়নি, সে গুলো দ্রুত সম্পন্ন করার তাগিদ দেন।
পরিশেষে তৃতীয় দফায় তিনি উদীয়মান হুমকি মোকাবেলা এবং নতুন সুযোগ গ্রহণের লক্ষে বিমসটেকের বাইরে প্রাসঙ্গিক সংস্থাগুলোর সাথে অংশীদারিত্ব সম্প্রসারণ করে সৃজনশীল এবং উদ্ভাবনী প্রক্রিয়ায় জড়িত হওয়ার জন্য সংস্থাটিকে ক্ষমতায়নের পরামর্শ দেন।
শ্রীলঙ্কা ভার্চুয়ালি এই ৫ম বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করেছে। এই সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘বিমসটেক-টুওয়ার্ডস এ রেসিলেন্ট রিজিয়ন, প্রোসপারাস ইকোনমিকস অ্যান্ড হেলদি পিপলস।’ শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোটাবায়ে রাজাপাকসের সভাপতিত্বে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।