পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনে র্যাব গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় কোনো কারণ ছাড়াই এ বাহিনীর কিছু কর্মকর্তার ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপ ‘অত্যন্ত গর্হিত কাজ।’ তারা (যুক্তরাষ্ট্র) অপরাধীদের রক্ষা করে ও তাদের দেশে আশ্রয় দেয় এবং কোনো ধরনের অপরাধ ছাড়াই আমাদের দেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এটাই তাদের চরিত্র। কাজেই তাদের ব্যাপারে এ ছাড়া আমি আর কি বলতে পারি।
প্রধানমন্ত্রী র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন উপলক্ষে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে অনুষ্ঠানে ভাষণ দেয়ার সময় এ কথা বলেন। গতকাল রাজধানীতে র্যাবের সদর দফতরে লে. কর্নেল আজাদ মেমোরিয়াল হলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। র্যাবের ১৫ ব্যাটালিয়নের প্রত্যেকটি ভার্চুয়ালি এ অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়। প্রধানমন্ত্রী একই অনুষ্ঠানে র্যাব ২, ১০, ১৩ ও ১৪-এর ব্যাটালিয়ন সদর দফতর, র্যাব ফোর্সেস ট্রেনিং স্কুল, ‘মুজিব কর্ণার’ সম্বলিত র্যাব হেরিটেজ মিউজিয়াম উদ্বোধন করেন। তিনি র্যাব-৩ ব্যাটালিয়ন সদর দফতরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধাপরাধী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত সাজাপ্রাপ্ত খুনিদের আশ্রয় এবং তাদের নাগরিকত্ব দিয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যারা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে নারী ও শিশুদের নির্মমভাবে হত্যা করে সে সব খুনিদের ফেরত পাঠাতে তার সরকার যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের কাছে বার বার আবেদন জানিয়েছে। তাদের ফেরত পাঠানোর পরিবর্তে তাদের দেশে তারা খুনিদের আশ্রয় দিয়েছে।
সরকারপ্রধান বলেন, সরকার কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে যে কোনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সদস্য, র্যাব বা পুলিশের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কিন্তু এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে তাদের কোনো বাহিনী অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলেও তাদের বাহিনীর বিরুদ্ধে কোন আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করে না। আবার তারাই কোনো কারণ ছাড়াই আমাদের কিছু র্যাব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
যুক্তরাষ্ট্রে গুলি করে এক শিশুকে এবং বুটের পাড়া দিয়ে এক ব্যক্তিকে হত্যা করার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার নামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার যে কোনো সদস্য অপরাধ করলেও তাদের বিরুদ্ধে তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের একমাত্র দেশ যেখানে যে কেউ অপরাধ করলে তার ব্যবস্থা নেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি জানেন না কী কারণে তারা হলি আর্টিসান ক্যাফে হামলাসহ জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনে র্যাবের সফলতায় কেন যুক্তরাষ্ট্র কষ্ট পেল। লজ্জাজনক বিষয় হচ্ছে যে, বাংলাদেশের কিছু মানুষ দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। তিনি বলেন, যারা অপরাধী তারা হয় চাকরি হারিয়েছে অথবা অপরাধ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী র্যাব সদস্যদের আইন অনুযায়ী দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন।
রমজান মাসকে সামনে রেখে কতিপয় কালবাজারীর নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি ঠেকাতে যে কোনো ধরনের মজুতদারীর বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান সত্ত্বেও সজাগ দৃষ্টি রাখতে তিনি র্যাব সদস্যদের নির্দেশ দেন।
র্যাব অবৈধ মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির সাথে সঙ্গতি রেখে এ ব্যাপারে ব্যাপকভাবে সফল হলেও প্রধানমন্ত্রী মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান আরো বৃদ্ধি করতে র্যাব সদস্যদের নির্দেশ দেন। তিনি সমাজ থেকে মাদক সম্পূর্ণভাবে উৎপাটন না হওয়া পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেন।
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা জনস্রোত ও সেখানে ক্রমবর্ধমান অপরাধের ব্যাপারে তিনি বলেন, ওই জেলায় র্যাবের একটি সম্পূর্ণ ব্যাটালিয়ন মোতায়েনের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, র্যাবের ডিজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে র্যাবের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড এবং সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে এ বাহিনীর সফলতার একটি প্রামাণ্য চিত্রপ্রদর্শন করা হয়। সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার লক্ষ্যে ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ র্যাব গঠন করা হয় এবং একই বছরের ২১ জুলাই এই বাহিনী অভিযান শুরু করে।
র্যাব সদস্যরা ২০০৪ সালের আগস্টে ২৩ দুর্ধর্ষ অপরাধীর অন্যতম পিচ্চি হান্নানকে গ্রেফতারের পর লাইমলাইটে আসে। শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে উন্নয়নের পূর্বশর্ত হিসেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশ আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে র্যাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং এভাবে তারা জাতির উন্নয়নে অবদান রাখছে। দেশ ও জাতির উন্নয়নে র্যাবের অবদান অপরিসীম। দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজমান থাকায় আমরা প্রতিটি উন্নয়ন পরিকল্পনা নির্বিঘ্নে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।
দেশব্যাপী ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইনশৃঙ্খলা বজায় থাকা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দেশে বিনিয়োগ আকর্ষণের পূর্বশর্ত। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে প্রচুর দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ অপরিহার্য। সমাজে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য তিনি র্যাব ও অন্যান্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে ধন্যবাদ জানান। সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, মাদক, সুন্দরবনে জলদুস্য ও বনদস্যু এবং দক্ষিণাঞ্চলে চরমপন্থি নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রধানমন্ত্রী র্যাবের প্রশংসা করেন।
জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের আমুল পরিবর্তনের মাধ্যমে মনোভাবের পরিবর্তন ঘটিয়ে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগের জন্য র্যাবের প্রশংসা করেন। শেখ হাসিনা বলেন, সরকার সুন্দরবনের বনদস্যু ও জলদস্যু এবং দক্ষিণাঞ্চলের চরমপন্থিদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছে। আত্মসমর্পণের পর সরকার তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, তারা এখন তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে সুখে-শান্তিতে জীবন কাটাচ্ছে। সরকার র্যাবকে আরো শক্তিশালী ও আধুনিকায়নের জন্য কাজ করছে। দুর্গম এলাকাগুলোতে অভিযান পরিচালনা সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য তারা একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। র্যাব এখন সড়ক, আকাশ ও নৌ- তিন পথেই অভিযান পরিচালনার সক্ষমতা অর্জন করেছে। আমরা প্রতিটি বাহিনীকে উন্নত করতে কাজ করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাস মহামারিকালে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানো ও এই মহৎ কাজে তাদের জীবন উৎসর্গের জন্য একটি বাহিনী হিসেবে র্যাবের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি করোনাভাইরাস মহামারি চলাকালে যে সব র্যাব সদস্যরা পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মারা গেছেন, তাদের রুহের মাগরিফাত কামনা করেন এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণে বাংলাদেশকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে এবং দেশের মানুষকে একটি সুন্দর ও উন্নত জীবন উপহার দেয়ার লক্ষ্যে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার আহ্বান জানান।
এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা উন্নয়নের পূর্বশর্ত। দেশের একমাত্র এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ইতোমধ্যে জননিরাপত্তা রক্ষায় গণমানুষের আস্থার বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। গতকাল সোমবার র্যাব ফোর্সেসের ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কুর্মিটোলায় র্যাব সদর দফতরের শহীদ লে. কর্নেল আজাদ মেমোরিয়াল হলে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের চরমপন্থি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, ধর্মীয় জঙ্গি মতবাদ প্রচার, অবৈধ অস্ত্রের যথেচ্ছ ব্যবহার, অপহরণ, চাঁদাবাজি, অবৈধ মাদকের বিস্তারসহ গুরুতর অপরাধের করাল গ্রাস থেকে দেশকে মুক্ত করার লক্ষ্যে ‘দি আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন অর্ডিন্যান্স ১৯৭৯’ সংশোধন করে এলিট ফোর্স ‘র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)’ গঠিত হয়েছিল। র্যাব চরমপন্থির আগ্রাসন থেকে দেশকে মুক্ত করেছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রক্তাক্ত জনপদে মানুষ পেয়েছে নিরাপদ জীবন। ফলে সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।
বাংলাদেশ আজ জঙ্গি ঝুঁকিমুক্ত : র্যাব ডিজি : র্যাবের ডিজি চৌধুরী আবদুল আল মামুন বলেছেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ নিয়ন্ত্রণ দেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রজ্ঞা, দিক-নির্দেশনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একযোগে কাজ শুরু করে। র্যাব হলি আর্টিজান হামলার মূল পরিকল্পনাকারীর বিরুদ্ধে সফল অভিযান পরিচালনা করে। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত নীতি ও কৌশল বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ আজ জঙ্গি ঝুঁকিমুক্ত। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির আলোকে বাংলাদেশ বিশ্বে আজ জঙ্গি দমনে রোল মডেল।
র্যাব ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কুর্মিটোলা র্যাব সদর দপ্তরের শহীদ লে. কর্নেল আজাদ মেমোরিয়াল হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি আরো বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে র্যাব চরমপন্থি, জঙ্গিবাদ, জলদস্যু ও সন্ত্রাস দমন, অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার এবং চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের আসামি গ্রেফতারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ঈর্ষণীয় ভূমিকা রেখেছে। র্যাব জল, স্থল ও আকাশে অভিযান পরিচালনার সক্ষমতা সম্পন্ন একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে পরিণত হয়েছে।
র্যাব ডিজি বলেন, আমরা সুন্দরবন জলদস্যু মুক্ত করেছি। প্রধানমন্ত্রীর ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির আলোকে দেশকে মাদকমুক্ত করে সেসব মাদকাসক্তদের আলোর মুখ দেখাতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এ অঞ্চলে প্রতিটি মানুষ আজ শান্তিতে বাস করছে, সুন্দরবন অঞ্চলে পর্যটন শিল্প বিকশিত হচ্ছে। আত্মসমর্পণ করা ৩২৮ জন জলদস্যু পুনর্বাসিত হয়েছে। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্ত ছিলেন। এছাড়াও অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন ও আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ। এছাড়াও র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।