Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

মুত্তাকি হতেই রোজার বিধান খুৎবা পূর্ব বয়ান

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ২৫ মার্চ, ২০২২, ৩:০৩ পিএম

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন "হে মুমিনরা, তোমাদের উপর রোজার বিধান দেয়া হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের জন্যও এই বিধান দেয়া হয়েছিল যাতে করে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো"। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীস শরীফে বর্ণনা করেন" নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা মুমিনের জন্য রমজান মাসের রোজা ফরজ করেছেন এবং আমি কিয়ামুল লাইল তথা তারাবীহের নামাজকে সুন্নাহ সাব্যস্ত করেছি। আজ জুমার বয়ানে পেশ ইমাম এসব কথা বলেন। নগরীর মসজিদগুলোতে জুমার নামাজে মুসল্লিদের উপচে পড়া ভিড় পরিলক্ষীত হয়।

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি এহসানুল হক জিলানী আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, আল্লাহ তায়ালা মুমিনের জন্যে পবিত্র রমজান মাসের রোজা রাখা আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারাবীহের নামাজ আদায় করাকে সুন্নাহ সাব্যস্ত করেছেন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন "হে মুমিনরা, তোমাদের উপর রোজার বিধান দেয়া হয়ছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের জন্যও এই বিধান দেয়া হয়েছিল যাতে করে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো"। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীস শরীফে বর্ণনা করেন" নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা মুমিনের জন্য রমজান মাসের রোজা ফরজ করেছেন এবং আমি কিয়ামুল লাইল তথা তারাবীহের নামাজকে সুন্নাহ সাব্যস্ত করেছি। সুতরাং যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে এবং সাওয়াবের আশায় রমজানুল মোবারকের রোজা রাখবে এবং কিয়ামুল লাইল তথা তারাবীহের নামাজ আদায় করবে সে গুনাহ থেকে মুক্ত হয়ে যাবে ঐদিনের মতো যেদিন সে তার মায়ের থেকে ভূমিষ্ট হয়েছিল অর্থাৎ সে নিস্পাপ হিসেবে গণ্য হবে"

পবিত্র রমজান মাস সমস্ত মাসের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম মাস, সবচেয়ে বেশি ফজিলতের মাস,সবচেয়ে বেশি সওয়াব অর্জনের মাস। রমজান মাস মুসলমানদের সাওয়াব অর্জন করার সিজন,ব্যবসায়ীদের যেমন ব্যবসার সিজন থাকে, যখন তাদের ব্যবসা খুব বেশি হয় মুনাফা বেশি হয় তদ্রæপ মুমিনের জন্য রমজান মাস হল সাওয়াব অর্জনের সিজন। যখন একটা নফল ইবাদতের সওয়াব একটা ফরজ সমতুল্য হয়ে যায়, একটা ফরজের সাওয়াব ৭০টা ফরজের সমান হয়ে যায়। এমনিতে নফল এবং ফরজ এর মধ্যে কোন তুলনা হয় না। এজন্যই আমাদেরকে মানসিকভাবে রমজানুল মোবারকের রোজাসহ আরো অন্যান্য ইবাদত বন্দেগি সঠিকভাবে আদায় করার জন্য হিম্মত রাখতে হবে । কেননা কেউ যদি হিম্মত করে আমি রোজা রাখবোই তাহলে সামান্য একটু গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা, একটু সাস্থ্যের দুর্বলতা এইসব সুতানাতা অজুহাত কোন বাধা হতে পারবে না। হাদীস শরীফে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন" প্রকৃত পক্ষে অসুস্থ নয়,শরীয়তে তাকে রোজা ছাড়ার অনুমতিও দেয়নি এই অবস্থায় কেউ যদি রমজানের রোজা ছাড়ে তাহলে সারাজীবন সেই রোজা কাজা করতে থাকলেও ওই ঘাটতি পূরণ হবে না"। এই হাদীসে অনেক কড়া কথা বলা হয়েছে একটা রোজা কাজা করলে সারাজীবন রোজা রাখলেও সেই ক্ষতি পূরণ হবে না। তাই রোজা রাখার হিম্মত করতে হবে। হিম্মত করলে রোজা রাখা সহজ। হিম্মত না রাখলে কঠিন। অতএব আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে রমজানুল মোবারকের রোজাগুলো এবং তারাবীহের নামাজ, কোরআনুল কারিমের তেলাওয়াতসহ আরো অন্যান্য ইবাদত বন্দেগি সঠিকভাবে আদায় করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

গুলিস্তান ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী আজ জুমার বয়ানে বলেন, আসন্ন রমজান মাসেই বিশ্ববাসীর মুক্তির সনদ কোরআন মজীদ একত্রে লাওহে মাহফূয থেকে প্রথম আসমানে বাইতুল ইযযতে অবতীর্ণ হয় এবং রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট সর্বপ্রথম এ মাসেই ওহী অবতীর্ণ হয়। কোরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে ‘রমজান মাসই হল সে মাস যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়াত এবং সত্য পথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ। (সূরা বাকারা ১৮৫)। কোরআন অবতরণের এ মাসে আমাদের অন্যতম প্রধান কর্তব্য হচ্ছে, কোরআন তেলাওয়াতের ব্যাপারে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করা। হাদীস শরীফে এসেছে, ‘হযরত জিবরীল আ. রমজানের শেষ পর্যন্ত প্রত্যেক রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সাক্ষাত করতেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে কোরআন মজীদ শোনাতেন।’ (সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯০২)। অতএব আমাদের প্রত্যেকের উচিত রমজানে অধিক পরিমাণে কোরআন তেলাওয়াত করা। অন্তত একবার হলেও কোরআন মজীদ খতম করা।

কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বর্তমান মুসলিম সমাজের একটি বিরাট অংশ সহীহভাবে কোরআন তেলাওয়াত করতে জানে না। এদের মধ্যে বেনামাজী লোক যেমন আছে তেমনি অনেক দ্বীনদার নামাজী লোকও আছে। সারাজীবন নামাজ পড়ে যাচ্ছে। কিন্তু সহীহভাবে কোরআন তেলাওয়াত শিক্ষার ব্যাপারে তাদের মাঝে চরম উদাসীনতা লক্ষ্ করা যায়। অথচ সূরা ক্বিরাত সহীহ না হলে নামাজও সহীহ হয় না। এ ব্যাপারে তাদের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। তবে যারা সহীহভাবে কোরআন তেলাওয়াতের গুরুত্ব বুঝতে পেরেছে তারা এ ক্ষেত্রে অবহেলা করতে পারে না। অনেকে নামাজের জন্য প্রয়োজনীয় সূরাগুলো উস্তাদের সাহায্য ছাড়া বিভিন্ন বই থেকে বাংলা উচ্চারণ দেখে মুখস্ত করে নেয়। আধুনিক শিক্ষিত শ্রেণির মাঝে এ প্রবণতা একটু বেশি লক্ষ্য করা যায়। অথচ সহীহভাবে কোরআন তেলাওয়াত শিক্ষার জন্য উস্তাদের বিকল্প নেই। অতএব আমাদের যাদের কোরআন তেলাওয়াত সহীহ আছে, আমরা অধিক মাত্রায় কোরআন তেলাওয়াতে মনোনিবেশ করবো। যাদের তেলাওয়াতে অশুদ্ধতা রয়েছে তারা সরাসরি কোনো উস্তাদের তত্বাবধানে থেকে তেলাওয়াত সহীহ করার উদ্যোগ গ্রহণ করবো। আল্লাহ আমাদের সবাইকে কোরআনের জন্য কবুল করুন। আমিন।
সাভার উপজেলা মডেল মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতি মারুফ বিল্লাহ আজ খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য বড় নেয়ামত। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনুল কারীমে বলেছেন, "যখন কষ্ট দৈন্য মানুষকে স্পর্শ করে তখন সে আমাকে ডাকে। যখন আমি তাকে কোন নেয়ামত প্রদান করি তখন সে বলে, আমি তো তা লাভ করেছি নিজের জ্ঞানের মাধ্যমে। বস্তুত এ একটি পরীক্ষা, কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না "। (সূরা যুমার, আয়াত-৪৯)।

"আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, কোন জাতি যতক্ষণ তাদের অবস্থার পরিবর্তন করে না, ততক্ষণ আল্লাহ তাদের অবস্থার পরিবর্তন করেন না " (সূরা রাআদ, আয়াত -১১) এ সম্পর্কে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন "নিজের সম্পদ রক্ষা করতে যেয়ে যে নিহত হয় সে শহীদ, নিজের পরিবার পরিজন রক্ষা করতে যে নিহত হয় সে শহীদ। নিজের প্রাণ বা ধর্ম রক্ষা করতে যে নিহত হয় সে শহীদ "। (তিরমিযী ৪/৩০,আবু দাউদ-৪/২৪৬)। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু বলেন রাসূল সাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন যে ব্যক্তি নিজের অধিকার রক্ষা করতে নিহত হয় সে শহীদ"। (নাসাঈ- ৭/১১৬,১১৭)। সুতরাং কোরআন ও হাদিসের আলোকে আমরা বলতে পারি, আমাদের মহান স্বাধীনতার সময় যারা নিজেদের জীবনকে উৎসর্গ করে লাল-সবুজের পতাকা ছিনিয়ে এনেছেন। আমাদের সকলের উচিত সর্বপ্রথম মহান আল্লাহ তায়ালার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা এবং যেসকল মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র পেয়েছি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। যারা শহীদ হয়েছেন এবং যে সকল মুক্তিযোদ্ধারা এখনো জীবিত আছেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাদের সকলকে দুনিয়া ও আখেরাতে উত্তম প্রতিদান দান করুন। আমিন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ