Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

ডলারের বিপরীতে আরো দুর্বল টাকা

রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়ার আশঙ্কা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ মার্চ, ২০২২, ১২:১১ এএম

যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের বিপরীতে আরও দুর্বল হলো টাকার মান। একদিনের ব্যবধানেই ২০ পয়সা দর হারিয়েছে বাংলাদেশের মুদ্রা। গত মঙ্গলবার আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে এক ডলারের জন্য ৮৬ টাকা খরচ করতে হয়েছিল। গতকাল বুধবার এক ডলারের বিপরীতে গুণতে হয়েছে ৮৬ টাকা ২০ পয়সা। ব্যাংকগুলো ডলার বিক্রি করছে এর চেয়ে প্রায় পাঁচ টাকা বেশি দরে। রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ও জনতা ব্যাংক গতকাল ৯১ টাকা দরে ডলার বিক্রি করেছে। অগ্রণী ব্যাংক বিক্রি করেছে ৯০ টাকা ৯০ পয়সায়। ব্যাংকের বাইরে কার্ব মার্কেট বা খোলা বাজারে প্রতি ডলার ৯২ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে।

দেড় মাস ৮৫ টাকা ৮০ পয়সায় স্থির থাকার পর গত ৯ জানুয়ারি টাকার বিপরীতে ডলারের দর ২০ পয়সা বেড়ে ৮৬ টাকায় ওঠে। এরপর আড়াই মাস সেই দরে স্থির থেকে গতকাল ২০ পয়সা বেড়ে ৮৬ টাকা ২০ পয়সায় উঠেছে। মহামারির মধ্যে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় স্থির ছিল ডলারের দর। গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়তে শুরু করে। বাড়তে বাড়তে ৮৫ টাকা ৮০ পয়সায় ওঠার পর নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে ওই একই দর ছিল। এরপর থেকে তা আবার বাড়তে শুরু করে।
আমদানি বাড়ায় ডলারের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় শক্তিশালী হচ্ছে ডলার। বিপরীতে দুর্বল হচ্ছে টাকা। তবে পর্যাপ্ত রিজার্ভ থাকায় এতে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই বলে মনে করছেন অর্থনীতির গবেষকরা। মাঝে এক বছর ছাড়া প্রতি বছরই বাংলাদেশি টাকার মান কমেছে। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য করে থাকে ডলারে। অনেকটা রক্ষণশীল নীতি অবলম্বন করলেও আওয়ামী লীগ সরকারের ১৩ বছরে সেই ডলারের তুলনায় টাকার মান কমেছে প্রায় ২৫ শতাংশ।

অর্থাৎ ১৩ বছর আগে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে যে পণ্য বা সেবা কিনতে ১০০ টাকা লাগত, বর্তমানে তা কিনতে ১২৫ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। এটি সরকারি হিসাবের তথ্য। বেসরকারি হিসাবে এই সময়ে টাকার মূল্যমান আরও বেশি কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত মুদ্রা বিনিময় হারের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে এ তথ্য মিলেছে। তথ্যে দেখা যায়, ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ছিল ৬৯ টাকা।
বাংলাদেশে ডলার ও টাকার বিনিময় হার স্বাধীনতার পর থেকে সরকার নির্ধারণ করে দিত। টাকাকে রূপান্তরযোগ্য ঘোষণা করা হয় ১৯৯৪ সালের ২৪ মার্চ। আর ২০০৩ সালে এই বিনিময় হারকে করা হয় ফ্লোটিং বা ভাসমান। এর পর থেকে আর ঘোষণা দিয়ে টাকার অবমূল্যায়ন বা পুনর্মূল্যায়ন করা হয় না।

তবে বিনিময় হার ভাসমান হলেও পুরোপুরি তা বাজারভিত্তিক থাকেনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সব সময়ই এতে পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ রেখে আসছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যাপারে অনুসরণ করে আসছে ‘ম্যানেজড ফ্লোটিং রেট’ নীতি।
অর্থনীতির বিশ্লেষক গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর বলেন, সত্যিই ডলারের বাজারে চরম অস্থিরতা চলছে। এটা কোথায় গিয়ে শেষ হবে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে প্রচুর ডলার বিক্রি করেও বাজার স্বাভাবিক রাখতে পারছে না। আমার মনে হয়, এভাবে হস্তক্ষেপ করে বাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যাবে না। কেননা, সরবরাহ এবং চাহিদার মধ্যে ব্যাপক তফাত। এখন আমদানি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে; ৫০ শতাংশের মতো। কিন্তু রেমিট্যান্স না বেড়ে উল্টো কমেছে। রফতানি বাড়ছে ঠিকই, কিন্তু তা চাহিদার চেয়ে অনেক কম।

তিনি আরও বলেন, এখন কথা হচ্ছে, কত দিন এই অস্থিরতা চলবে। আমদানি আগামী ছয় মাস-এক বছরের মধ্যে কমবে বলে মনে হয় না। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম কমারও কোনো লক্ষণ নেই। সে পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের ওপর চাপ আরও বাড়বে। মাস ছয়েক আগেও রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এখন ৪৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।

তাহলে সমাধান কী-এ প্রশ্নের উত্তরে দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করা আহসান মনসুর বলেন, আমি মনে করি, রিজার্ভ থেকে বাজারে ডলার ছেড়ে হস্তক্ষেপ করে পার্মানেন্ট কোনো সল্যুশন (স্থায়ী সমাধান) হবে না। বাজারকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হলে এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতটা একটু গুটিয়ে ফেলতে হবে। হস্তক্ষেপ তুলে নিতে হবে। বাজারকে বাজারের মতো চলতে দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে যদি ইন্টারব্যাংক রেট ৮৭ টাকা-৮৮ টাকাও হয়, তাও যেতে দিতে হবে। তাহলে, ব্যাংকগুলো ও কার্ব মার্কেটের সঙ্গে ব্যাংক রেটে ডলারের যে পার্থক্য তা কমে আসবে। ধীরে ধীরে বাজার স্থিতিশীল-স্বাভাবিক হয়ে আসবে। আমি মনে করি, সেটাই হবে একটা স্থায়ী সমাধান।



 

Show all comments
  • Sujana Khan ২৪ মার্চ, ২০২২, ৫:৫৭ এএম says : 0
    মাফিয়ারা ব্যাংকে টাকা ছাপাচ্ছে আর সেই ছাপানো টাকা তাহাদের চেলাদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে দিচ্ছে । মাফিয়াদের চেলারা সেই টাকা নিয়ে মনের সুখে কানাডার বেগম পাড়ায় আয়েশ করছে । এটাই হল ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়ার কারন । এ বছর ব্যাংক গুলোর টাকার ঘাটতি ৩৭ হাজার কোটি টাকা । যা মাফিয়ারা বিভিন্ন ঋন ও ধাপ্পাবাজির মাধ্যমে লুঠ করে নিয়ে গেছে । যার ফলশ্রুতিতে দেশের একমাত্র পুজিবাজারের লেনদেন এখন তলানিতে ঠেকেছে
    Total Reply(0) Reply
  • Abid Tanjim Khan ২৪ মার্চ, ২০২২, ৫:৫৭ এএম says : 0
    দেশীয় মুদ্রায় লেনদেন বাড়াতে পারলে টাকা এতদিনে শক্তিশালী অবস্থানে থাকত।
    Total Reply(0) Reply
  • মো.হাসানুর রহমান ২৪ মার্চ, ২০২২, ৫:৫৮ এএম says : 0
    তাতে কি আমরা সিংগাপুর থেকে উন্নত
    Total Reply(0) Reply
  • Mujibur Rahman ২৪ মার্চ, ২০২২, ৫:৫৮ এএম says : 0
    ভালোইতো প্রবাসীরা বেশি টাকা পাবে! সব দেশে মুদ্রার দাম বাড়ে এই দেশে শুধু দ্রব্য মুল্য বাড়ে!
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডলার

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
৬ জানুয়ারি, ২০২৩
৫ ডিসেম্বর, ২০২২
১৯ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ