পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ডায়াবেটিস বিশ্বের সবচেয়ে বিস্তৃত দুরারোগ্য ব্যাধি। সারা বিশ্বে এর ব্যাপকতা বাড়ছে। বাংলাদেশেও সাম্প্রতিক সময়ে ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলছে। ডায়াবেটিস এড়াতে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
এ লক্ষ্যে সভা-সেমিনারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ডায়াবেটিসের সম্ভাব্য কারণগুলো জানাচ্ছেন। ঠিক এমন সময়ে বাংলাদেশি বিজ্ঞানীরা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার নতুন একটি কারণ আবিষ্কার করেছেন। তাদের গবেষণার ফল ইতোমধ্যে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
বিজ্ঞানীদের মতে, মানুষের শরীরে ইন্টেস্টিনাইল অ্যালকেলাইন ফসফেটাস (আইএপি) কমে গেলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ব্যাপক আকারে বাড়ে। বলা চলে এটিই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম কারণ।
বুধবার (২৩ মার্চ) রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। ‘ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার কারণ আবিষ্কার’ বিষয়ক এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ‘বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি’।
ডায়াবেটিসের নতুন কারণ আবিষ্কারে করা গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. মধু এস মালো। তার সঙ্গে ছিলেন দেশের প্রথিতযশা অ্যান্ডোক্রিনোলজি চিকিৎসক অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ, অধ্যাপক ড. ফারুক পাঠান, অধ্যাপক ড. সালেকুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ভবিষ্যতে আপনার কি ডায়াবেটিস হতে যাচ্ছে? কী ধরনের পরীক্ষা করলে আপনি বুঝতে পারবেন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে যাচ্ছেন? এসব প্রশ্নের উত্তরগুলো আমরা ভালোমতো জানতাম না, দিতেও পারতাম না। এসব প্রশ্ন সামনে রেখে আমরা গবেষণা কাজটি করেছি। প্রথমে আমরা ইঁদুরের ওপর একটি গবেষণা করি। সেখানে দেখা যায়, যেসব ইঁদুরের পেটে আইএপি নামক পাচক রস কম, তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি।
‘পরে আমরা ৫০০ জন মানুষের ওপর কাজ করি। তাদের পাঁচ বছরের কোহোর্ট স্টাডিতে দেখা গেছে, পেটে আইএপি কম থাকাদের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এ গবেষণা প্রতিবেদনটি সুপরিচিত বিএমজে ওপেন ডায়াবেটিস রিসার্চ অ্যান্ড কেয়ার জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। আশা করছি, গবেষণার আলোকে পেটের আইএপি ভবিষ্যতে ডায়াবেটিসের পূর্বাভাস হিসেবে স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে’ বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক মধু এস মালো বলেন, ‘মানবদেহের অন্ত্রে থাকা মৃত ব্যাকটেরিয়ার কোষপ্রাচীরের অংশ টক্সিন (এডোটক্সিন) হিসেবে কাজ করে। এ টক্সিন সাধারণত মলের সঙ্গে বেরিয়ে যায়। তবে উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার, ফ্রুকটোজ বা অ্যালকোহল টক্সিনতে রক্তে ঢুকতে সহায়তা করে। ফলে নিম্ন গ্রেডের সিসটেমিক প্রদাহের সৃষ্টি হয়। ফলে ডায়াবেটিস হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘মানবদেহের অন্ত্রে থাকা আইএপি নামক এনজাইম এ টক্সিনকে ধ্বংস করে দেয়। এ ধরনের এনজাইমের ঘাটতি হলে অন্ত্রে অতিরিক্ত টক্সিন জমা হয়। এ টক্সিন রক্তে ঢুকে সিসটেমিক প্রদাহ সৃষ্টি করে। ফলে একদিকে যেমন ডায়াবেটিস হতে পারে, তেমনি ইশকেমিক হার্ট ডিজিজও হতে পারে। কেননা ইশকেমিক হার্ট ডিজিজেরও অন্যতম কারণ সিসটেমিক প্রদাহ।’
ড. মধু বলেন, ‘বলা হয়ে থাকে যে, মোটা হলেই ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেশি থাকে। মূলত ডায়াবেটিসের সঙ্গে মোটা হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। যাদের আইএপি লেভেল বেশি, তাদের ঝুঁকি কম। আবার যাদের আইএপি কম, তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি। দেহে আইএপি কম হলে হার্ট ডিজিজও হতে পারে। কোলেস্টেরল বেড়ে যায়।’
বাংলাদেশি এ বিজ্ঞানী বলেন, ‘আমরা একটি কিট তৈরি করেছি, যার মাধ্যমে তিন থেকে পাঁচ মিনিটেই বোঝা যাবে আপনার ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু। শরীরে আইএপি এনজাইমের পরিমাণ ১১৫ ইউনিটের কম হলে তা ডায়াবেটিস হওয়ার দিকে নিয়ে যায়। যখন থেকে এটা বোঝা যায়, ঠিক সেসময় যদি পরীক্ষায় ধরা পড়ে, তবে চিকিৎসার মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে।’
ড. মধু এস মালো বলেন, ‘আমরা এ কিট নিয়ে আরও বিস্তর গবেষণা করবো। এ কিটের বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। এটি সফল হলে দেশের জন্য এবং মানুষের জন্য অনেক বড় কল্যাণ বয়ে আনবে।’
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। তার মধ্যে প্রধান কারণই হলো আইএপি লেভেল বেড়ে যাওয়া। দেশে ১৫ শতাংশ রোগীর ডায়াবেটিস হয় জেনেটিক কারণে। যেগুলো রোধে কিছুই করার নেই। বাকি ৮৫ শতাংশই আইএপি সংক্রান্ত কারণে হয়, যা চিকিৎসা করে সারিয়ে তোলা সম্ভব।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গবেষণা কাজে সহায়তা করেছেন বারডেমের অধ্যাপক ফারুক পাঠান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অধ্যাপক সালিমুর রহমান ও অধ্যাপক মুহাম্মদ হাসানাত, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সালেকুল ইসলাম।
আরও সহযোগিতা করেছেন বাডাসের জগন্নাথ মালো, মেহেদী হাসান রকি, জিনোক বর্মণ, শামিমা আক্তার তিন্নি, স্বপন কে. বর্মণ, তাপস সরকার, বারডেমের আব্দুল মোত্তালিব ও নাঈমুল ইসলাম খান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জাহাঙ্গীর আলম এবং ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতাল, হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কনকরাজু কালিয়ান্নান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।