Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আগুনে পুড়েছে শত শত ঘর সব হারিয়ে নিঃস্ব অনেকে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ মার্চ, ২০২২, ১২:০৪ এএম

রাজধানীর কল্যাণপুরের নতুনবাজার বেলতলা বস্তিতে আগুন লেগে পুড়েছে শত শত ঘর। নিঃস্ব হয়েছেন অনেকে। কোনোমতে প্রাণে বাঁচলেও ঘরের জিনিসপত্র কিছুই বের করা সুযোগ পাননি বস্তির বাসিন্দারা। গত রোববার রাত ৯টার দিকে বস্তিতে আগুন লাগে। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিট। পরে সেখানে কাজে যোগ দেয় আরও সাতটি ইউনিট। ১৪টি ইউনিটের প্রচেষ্টায় ২০ মিনিটের মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। তবে এ ২০ মিনিটে পুড়ে ছাই হয়েছে সব।
গতকাল সোমবার কল্যাণপুরের বেলতলা এলাকার ৯ নম্বর পোড়া বস্তিতে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বস্তির পোড়া স্তূপের বর্জ্য নিয়ে খেলছিল তিন বছরের মেয়ে হালিমা। আগুনে সব পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ায় মাথার উপরে একটি পাঁচ হাত নীল রংয়ের প্লাস্টিক দিয়ে তিন মেয়েসহ আর্তনাদ করছিলেন মা মনোয়ারা বেগম। মেয়েদের নিজের কোলের মধ্যে নিয়ে নিজেকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছে তিনি। সেই স্তূপের বর্জ্য নিয়ে অবুঝ শিশুটিকে খেলা করতে দেখা যায়।
স্বামী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ বলে নিজেই রাজমিস্ত্রির কাজ করে পরিবার চালান মনোয়ারা। ঘরে তার তিন মেয়ে। বড় মেয়ে গৃহকর্মীর কাজ করলেও অন্য দুই মেয়ে বাসায় থাকে। স্বামী মাঝে মাঝে আসেন। তবে পরিবারের সব ব্যয় ৩০ বছর ধরে মনোয়ারাকে বহন করছিলেন।
মনোয়ারা জানান, গত পাঁচ বছর রাজমিস্ত্রির কাজ করে পরিবার চালান। বস্তিতে গত ১৫ বছর ধরে থাকছেন। প্রতি মাসে দুই হাজার টাকা ঘর ভাড়া দিতেন। শখ করে বড় মেয়ের জন্য সোনার হার, কানের দুল বানিয়ে ঘরে রেখেছিল। তার সঙ্গে ঘরে নগদ ১৮ হাজার টাকা ও ৩০ হাজার টাকার আসবাবপত্র ছিল। কিছুই উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
তিনি আরো বলেন, আমি কাজ থাইকা ঘরে আইসা রান্না করতাছিলাম। এই বাহিরে চিল্লাচিল্লি শুইনা বাহির হইয়া দেখি চারদিকে আগুন। পরে ঘরে থাকা দুই মেয়েকে নিয়া পাশের মাঠে যাইয়া দেখি ঘরের মধ্যে আগুন লাইগা গেছে। চোখের সামনে সব পুইড়া যাইতে দেইখাও কিছু করতে পারি নাই। আমার সব শেষ হইয়া গেছে। আর কিছু নাই। মানসে কিছু খাবার দিছিল সেগুলো মাইয়াগোরে নিয়া খাইছি। দুপুরে কী খামু তা জানি না। একজনের কাছে ছোট একটা প্লাস্টিক আইননা পোড়া ঘরে মাথার উপর বাইন্দা দিছি। হের নিচে মাইয়া তিনটারে নিয়া বইসা আছি। কেউ যদি সাহায্য করে তবে চলতে পারমু না হইলে রাস্তায় বইসা ভিক্ষা করতে হইবো।
বস্তির বাসিন্দা নিজাম বলেন, রাত ৯টার আগেই বস্তিতে আগুন লেগেছে। হঠাৎ চিৎকারে শুনে ঘর থেকে বের হই, দেখি চারদিকে আগুন। দ্রুত মাকে ঘর থেকে বের করে কোনোমতে প্রাণে বেঁচেছি। ঘরের জিনিসপত্র কিছুই বের করতে পারিনি। ঘরের পোড়া জিনিসপত্র হাতে নিয়ে বিলাপ করছেন আরেক নারী। ঘরেই তিনি দোকান চালাতেন। ওই নারী বলেন, ঘর থেকে কিছুই নিয়ে বের হতে পারিনি। হাতের কাছে ব্যবসায়ের ৮০০ টাকা ছিল, তাই নিয়েই শুধু বের হইছি। ঘরেই দোকানদারি করতাম আমি। আমার সব পুড়ে শেষ। গতকাল ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাদ্দাম হোসেন বস্তি পরিদর্শনে যান। এসময় তিনি বলেন, আগুনের সূত্রপাতের বিষয়ে এখনো স্পষ্ট কোনো তথ্য জানা যায়নি। এখানে একটা ঘরের সঙ্গে আরেকটা ঘর লাগানো। চারদিকে দেয়াল থাকায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের কাজ করতে যথেষ্ট বেগ পোহাতে হয়েছে। এরপর পানির সংকট তো আছেই। তিনি বলেন, আমাদের ১৪টি ইউনিটের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে। ক্ষয়ক্ষতি কেমন হয়েছে, সেটা পরে জানানো যাবে।
একই দিনে ঢাকা-১৪ আসনের বিএনপির মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী এস এ সিদ্দিক সাজু এর সার্বিক সহযোগিতায় বস্তিবাসীদের মাঝে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য ও শাহ্আলী থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির রওশন সহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ