পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনা মহামারির পর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও নানা সঙ্কটের জাঁতাকলে নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা পিষ্ট। এমন সময়েও ব্যাংকে কোটি টাকা রয়েছে-এ ধরনের হিসাবের সংখ্যা হু হু করে বেড়েই চলেছে। গত এক বছরে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা আট হাজারের বেশি বেড়ে এক লাখ এক হাজার ৯৭৬টিতে দাঁড়িয়েছে। আর করোনার ২১ মাসে (মার্চ ২০২০ থেকে ডিসেম্বর ২০২১) এমন হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে ১৯ হাজার ৩৫১টি। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২১ সালের ডিসেম্বর ভিত্তিক হালনাগাদ প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে কোটি টাকার বেশি আমানতের হিসেবের সংখ্যা ছিল ৯৩ হাজার ৮৯০টি। ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে এর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ এক হাজার ৯৭৬টিতে। সে হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে কোটিপতি হিসাব বেড়েছে ৮ হাজার ৮৬টি। ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম তিনজনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। শুরু হয় লকডাউন বিধিনিষেধ। বন্ধ হয়ে যায় বেশিরভাগ ব্যবসা-বাণিজ্য। মহামারির কারণে গোটা বিশ্বের মতো দেশেও অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। অনেকে কাজ হারিয়েছেন, আবার অনেকে কর্মহীন হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েন। এমন পরিস্থিতিতেও আমানতকারীর সঙ্গে কোটি টাকা জমার হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২০ সালের মার্চে দেশে যখন করোনা হানা দেয় তখন ব্যাংক খাতে কোটি টাকার বেশি আমানত রাখার হিসাবের সংখ্যা ছিল ৮২ হাজার ৬২৫টি। মহামারি চলাকালে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরেই কোটিপতি হিসাবের ওই অংক এক লাখ ছাড়ায়। ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে তা দাঁড়ায় এক লাখ এক হাজার ৯৭৬টিতে। এ হিসেবে মহামারির ২১ মাসে দেশে কোটিপতি হিসাব বেড়েছে ১৯ হাজার ৩৫১টি।
সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে কোটি টাকার হিসাব বাড়ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন একটি গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকার কারণে দেশের কোটি টাকার আমানতকারীর সংখ্যা বেড়েছে। কোটি টাকার হিসাব বাড়ার আরেকটি কারণ বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ হচ্ছে না। লোকজনের কাছে যে বাড়তি অর্থ আছে তা বিনিয়োগ করতে না পেরে ব্যাংকে রেখে দিয়েছে। অনেক সময় বাড়তি অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হয়, কিন্তু পুঁজিবাজারের অস্থিরতার করণে ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না। এছাড়া সঞ্চয়পত্রের বিভিন্ন শর্তের কারণে নিরাপদ হিসেবে ব্যাংকে আমানত রাখেন। এসব কারণেই বড় আমানতকারীর সংখ্যা বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১২ কোটি ৪৮ লাখ ৯৬ হাজার ৯৩৪টি। যেখানে জমা ছিল ১৫ লাখ ১২ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। এর মধ্যে কোটি টাকার বেশি হিসাবে জমা ৬ লাখ ৫৩ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা। ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে কোটিপতি ব্যাংক হিসাবগুলোতে জমা ছিল ৫ লাখ ৯৫ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। ওই সময় মোট আমানতের স্থিতি ছিল ১৩ লাখ ৭৯ হাজার ১৫০ কোটি টাকা।
এ প্রসঙ্গে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, সরকার বলছে আয় বাড়ছে। হ্যাঁ... আয় বাড়ছে, তবে সবার আয় বাড়ছে না। একটা শ্রেণির আয় বাড়ছে, তাদের সংখ্যা খুবই সামান্য। সমাজে বহু মানুষ মধ্যবিত্ত থেকে নিম্ন মধ্যবিত্তে নেমে গেছেন। আবার অনেকে নিম্ন মধ্যবিত্ত থেকে নিম্ন আয়ে নেমে গেছেন। একটা শ্রেণি অঢেল টাকার মালিক হয়ে যাচ্ছেন, অন্যদিকে বেশিরভাগ লোকের আয় কমে যাচ্ছে। এতে সমাজে বৈষম্য বাড়ছে। ফলে এক ধরনের সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হচ্ছে।
এই অবস্থার পরিবর্তন আনা জরুরি জানিয়ে ক্যাব নেতা বলেন, অবশ্যই আয়-ব্যয় বৈষম্য কমাতে হবে। এর জন্য কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের সুরক্ষায় সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। করোনার কারণে অনেকে কর্ম হারিয়েছেন, ব্যবসা হারিয়েছেন, আয় কমে গেছে। কিন্তু আমরা যদি দেখি সরকার প্রণোদনা দিয়েছে বড় ব্যবসায়ীদের। বেশিরভাগ ছোট ব্যবসায়ী সরকারের এ সহযোগিতা পায়নি। কিছু যারা পেয়েছেন তাদের পরিমাণ ছিল খুব সামান্য। অর্থাৎ সরকারের নীতিতেই বৈষম্য রয়ে গেছে। এটা কমাতে হবে.... না হলে আগামীতে এ সমস্যা কঠিন রূপ নেবে।
২০২১ সালের ডিসেম্বরের তথ্য অনুযায়ী, এক কোটি এক টাকা থেকে পাঁচ কোটি টাকার আমানতকারীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৭৯ হাজার ৮৮৩টি। যাদের হিসাবে জমার পরিমাণ এক লাখ ৬৬ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা। পাঁচ কোটি থেকে ২০ কোটির মধ্যে রয়েছে ১৭ হাজার ৯টি হিসাব। তাদের হিসাবে জমার পরিমাণ এক লাখ ৫৮ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা। এছাড়া ২০ কোটি থেকে ৫০ কোটির উপরে মোট হিসবাধারীর সংখ্যা ৫ হাজার ৮৪টি। এই হিসাবগুলোতে জমার পরিমাণ তিন লাখ ২৮ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, কোটি টাকার হিসাব মানেই কোটিপতি ব্যক্তির হিসাব নয়। কারণ ব্যাংকে এক কোটি টাকার বেশি অর্থ রাখার তালিকায় ব্যক্তি ছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। আবার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কতটি ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবেন, তার কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই। ফলে এক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির একাধিক হিসাবও রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কোটি টাকার হিসাবও রয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি আমানতকারী ছিলেন ৫ জন, ১৯৭৫ সালে তা ৪৭ জনে উন্নীত হয়। ১৯৮০ সালে কোটিপতিদের হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ৯৮টি। এরপর ১৯৯০ সালে ৯৪৩টি, ১৯৯৬ সালে ২ হাজার ৫৯৪, ২০০১ সালে ৫ হাজার ১৬২, ২০০৬ সালে ৮ হাজার ৮৮৭ ও ২০০৮ সালে ছিল ১৯ হাজার ১৬৩টি। ২০২০ সালে ডিসেম্বর শেষে দাঁড়ায় ৯৩ হাজার ৮৯০টিতে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।