Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঢাবি শিক্ষার্থীর রহস্যজনক মৃত্যু

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ মার্চ, ২০২২, ১২:১২ এএম

কেউ বলছেন ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু, আবার কেউ বলছে ট্রেনের ভিতরে থেকে বাইরে মাথা বের করায় সেতুর রেলিংয়ের সাথে ধাক্কা লেগে মৃত্যু। মৃত্যুর আগে ফেসবুকের স্ট্যাটাস ‘কঠিন তবুও আনন্দঘন, মাঝপথে জুটেছিল অপিরিচিত সঙ্গি। অফ টু কুষ্টিয়া।’ এমনই রহস্যজনক মৃত্যুতে পৃথিবী ত্যাগ করলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মার্কেটিং বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মাহাবুব আদরের।
গত বুধবার রাতে ঢাকা থেকে কুষ্টিয়া যাওয়ার পথে কুষ্টিয়া জেলার পোড়াদহ থানার অন্তর্গত হার্ডিঞ্জ সেতুতে (পাকশি ব্রিজ) মৃত্যু হয় আদরের। সকালে সেতুর উপর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে মাথায় আঘাত পাওয়ার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে দুর্ঘটনায় না অন্য কোনভাবে মাথায় আঘাত পেয়েছেন সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

জানা যায়, আদরের বাড়ি জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার সদর ইউনিয়নে। থাকতেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের ১০০৬ নাম্বার কক্ষে। তিন সদস্যের পরিবারে সে তার পিতা মাতার একমাত্র সন্তান। তার পিতার নাম মো. হান্নান মিঠু। তিনি একজন রাজনীতিক বলে জানা যায়।
মৃত্যুর বিষয়ে পোড়াদহ রেলওয়ে থানার ওসি মোহাম্মদ মঞ্জের আলি বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে রেলওয়েতে কাজ করা কিছু লোক আমাদের খবর দিলে সেখানে গিয়ে তার মরদেহ উদ্ধার করি। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এবং তার পরিবারের সদস্যদের খবর দেয়। কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে তাদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে। মরদেহের মাথার পেছনে গভীর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। তবে তার সঙ্গে থাকা ব্যক্তিকে পাওয়া যায়নি। মৃত্যুর বিস্তারিত জানতে সে ব্যক্তির ব্যাপারে খোঁজ নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

আদরের চাচা ফরহাদ জানান, আমি প্রথমে শুনেছি আদর বাইক এক্সিডেন্ট করেছে, পরে শুনি বাস এক্সিডেন্ট এবং আরো কিছুক্ষণ পর শুনি ট্রেন এক্সিডেন্টে মারা গেছে সে। তার বাড়ির লোকজনদের কেউ বলেন ট্রেন থেকে মাথা বের করায় সেতুর রেলিংয়ের সাথে ধাক্কা লেগে মৃত্যু হয় আবার কেউ বলেন ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু হয় আদরের। সঠিক তথ্য দিতে পারেননি কেউই।

তার এরকম হঠাৎ চলে যাওয়ায় তার সহপাঠীরা ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। তার হলের কক্ষসঙ্গী মো. রাহাত শিকদার বলেন, মাহাবুব খুবই ভালো একজন ছেলে ছিল। সে সবসময় খুবই মিশুক, হাসিখুশি ও প্রাণবন্ত থাকত।তার এভাবে হঠাৎ চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছি না। স্বপ্নের মতো লাগছে।

মাহমুদ হাসান নামে তার এক সহপাঠী ফেসবুকে লিখেছে এই মৃত্যুটা আমার আমার কাছে রহস্যময় মনে হচ্ছে। আমার মনে হয় তদন্ত করা উচিত। ২ টা দিক আমাকে ভাবাচ্ছে। বিশেষত তার স্ট্যাটাসটি দেখে। ‘কঠিন তবুও আনন্দঘন মাঝপথে জুটেছিলো অপরিচিত সঙ্গি’। এই স্ট্যাটাসের সেই অপরিচিত সঙ্গি কে ছিল, এবং তার পরিচয় কি ছিলো, সে বেঁচে থাকলে মাহবুব কেন মরলো!!! তিনি লিখেন, সেই অপরিচিত লোকটি হয়তো ভালো কেউ নাও হতে পারে, ক্ষতি করে তাকে হত্যা করেছে এমন হতেও পারে। দ্বিতীয়ত পাকশীতে ট্রেনের ছাদে দাড়ালে উপরের ব্রিজে আঘাত লেগে মারা যাওয়াটা স্বাভাবিক তবে তার অপরিচিত সঙ্গীর কি অবস্থা এখন? কোন সুস্থ মানুষ সেখানে দাড়াবে না। আরেকটা বিষয় হচ্ছে তার চাচা বলছে যে, পাকশি ব্রিজে জানালা দিয়ে মুখ বের করতেই আঘাত লেগে সেখানে মারা যায়. এই ঘটনা যদি সত্যি হয় তাহলে ট্রেনের বগির ভিতরের অনেক যাত্রী এটার সাক্ষী থাকার কথা কিন্তু কোন সাক্ষী আছে কিনা জানা যায়নি। স্টোরিতে দেখা যাচ্ছে যে মাহবুব ছাদে ভ্রমন করতেছে, তাহলে সে ভিতরে আসলো কখন? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বের করা জরুরি মনে হচ্ছে আমার কাছে। সুতরাং এটার তদন্ত হওয়া উচিত।

এ বিষয়ে হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. মাসুদুর রহমান বলেন, আমি এই বিষয়ে জেনেছি। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মহোদয় সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে জানানো হয়েছে। আমি ওর বন্ধুদের সাথে এই বিষয়ে যোগাযোগ করছি।

 



 

Show all comments
  • Tarif Hossain ১৮ মার্চ, ২০২২, ১১:৪০ এএম says : 0
    আমি মাহবুব এর একজন রুমমেট ও এতটা কেয়ারলেস ছেলে নয়। ঘটনার সুষ্টু তদন্ত দরকার।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ