পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের শীর্ষ ১৮ মাদক ব্যবসায়ির বিরুদ্ধে কিছুই করেনি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের অবৈধ সম্পদের হিসাব নেয়ার একটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো ২০১৭ সালে। পাঁচ বছর অতিবাহিত হতে চললেও এ বিষয়ে দেখা যায় নি কার্যকর কোনো পদক্ষেপ। এ কারণে দুদক এবং মাদকের অদৃশ্য কোনো সমঝোতা হয়েছে কি না-এ প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকরা।
দুদক সূত্র জানায়, মাদক ব্যবসায়ীদের ডেরায় হানা দেয়ার একটি উদ্যোগ নিয়েছিলো সংস্থাটি। মাদক ব্যবসার মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়ে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের (নারকোটিকস) কাছে তাদের বিষয়ে রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করে। কমিশন থেকে তখন জানানো হয়, জমাদক ব্যবসায়ীরা তাদের অবৈধ ব্যবসার মাধ্যমে নামে- বেনামে বিপুল অর্থ-সম্পদ অর্জন করেছেন-মর্মে কমিশনের কাছে তথ্য রয়েছে। প্রাথমিক যাচাই-বছাইয়ে অভিযোগের সারবত্ত¡াও মিলেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন তাদের সম্পদ অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেয়।
দুদকের চাহিদা অনুযায়ী নারকোটিকস তালিকা পাঠা দুদকে। যাদের নাম পাঠানো হয়েছে তারা সমাজে প্রতিষ্ঠিত ও প্রভাবশালী। রাজনৈতিক পরিচয়ও রয়েছে কারও কারও। ওই তালিকায় সরকারদলীয় একজন এমপি’র ভাই এবং ঘনিষ্টজনদের নামও ছিলো। দালিলিক কোনো প্রমাণ না থাকায় তাদেরকে প্রচলিত মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে স্পর্শ করা যায়নি। এ পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এর ২৬(১), ২৬(২) এবং ২৭ (১) ধারায় তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার উদ্যোগ নেয় সংস্থাটি।
সূত্রমতে, দুর্নীতির দায়ে যেকোনো ব্যক্তিকেই এ আইনের আওতায় আনা সম্ভব। প্রাথমিকভাবে দুদক যে ১৮ মাদক ব্যবসায়ীর সম্পদ অনুসন্ধান শুরু করে তাদের নাম-ধামও প্রকাশ করে। প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এর মধ্যে রয়েছেন, মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পের ইসতিয়াক হোসেন, মিরপুর রূপনগর চলন্তিকা বস্তি (ঝিলপাড়)ও মো: নজরুল ইসলাম নজু, রামপুরা পলাশবাগের মো: তানিম, বাড্ডা সাতারকুল বড় মসজিদ এলাকার মো: জয়নাল, খিলগাঁওয়ের মো: সাদু, রূপগঞ্জ চনপাড়ার মো: বজলুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ মাসদাইরের শাহীন ওরফে বন্ধন শাহীন, লক্ষèীপুর বাঞ্জানগরের শাহ আলম মিন্টু লক্ষèীপুর কমল নগরের আলী হোসেন, খুলনা খানপাড়া মহিরবাড়ির খোকন শেখ,কক্সবাজার টেকনাফের সাহেদুর রহমান, একই এলাকার চৌধুরি বাড়ির মো: সাদিক, টেকনাফের দক্ষিণ ফুলের ডেইল’র মো: রাশেদ, গুদারবিলের জিয়াউর রহমান, ডেইলপাড়ার মো: আমিন, চৌধুরি পাড়ার মমিং সেন, শিলবনিয়াপাড়ার হাজী সাইফুল করিম এবং একই এলাকার চান্দুলিপাড়ার মো. ইউনুস সিকদার। কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিঘ্রই তাদের বিষয়ে পৃথক অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে বলে জানিয়েছে সূত্রটি।
এদিকে ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা করেন। এ সময় কক্সবাজার ভিত্তিক খুচরা ইয়াবা কারবারী র্যাবের সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়। র্যাবের অনুকরণে তখন দুদকও কক্সবাজার ভিত্তিক ৭৪ মাদক ব্যবসায়ীর তালিকা তৈরি করে তাদের সম্পদ অনুসন্ধানের ঘোষণা দেয়। সংস্থার তৎকালিন পরিচালক কাজী শফিকুল আলম এবং সৈয়দ ইকবালের নেতৃত্বে একটি অনুসন্ধান টিমও গঠন করা হয়। উক্ত টিম কিছু ব্যক্তির তথ্য-উপাত্ত চেয়ে বিভিন্ন দফতরে চিঠি দেয়। এরপর এ উদ্যোগেরও কোনো ফলো-আপ জানা যায়নি।
তবে দুদকের একটি সূত্র জানিয়েছে, মাদক ব্যবসায়ী এবং তাদের আশ্রয় –প্রশ্রয়দাতাদের সঙ্গে বিশেষ সমঝোতা হয়ে যাওয়ায় অনুসন্ধানটি আর এগোয়নি। মাদক ব্যবসায়ীদের অবৈধ অর্থ-সম্পদ অনুসন্ধানের বিষয়ে দুদকের অনিহার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায় এতেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদক কারবারীদের বিষয়ে অনুসন্ধানকারী দলের এক কর্মকর্তা নাম জানিয়ে বলেন, আসলে মাদক কারবারিরা কোনো স্থানে স্থায়ী নয়। তাদেরকে ‘ট্রেস’ করা যায় না। রেকর্ডপত্রে যে ঠিকানা নারকোটিকস উল্লেখ করে দুদককে তথ্য দিয়েছে সে অনুযায়ী তাদের পাওয়া যায় না। বেশির ভাগ মাদক ব্যবসায়ীই ভাসমান। তারা ঘন ঘন অবস্থান পরিবর্তন করে। এ কারণেই তাদের সুনির্দিষ্টি তথ্য পাওয়া কঠিন। তিনি দাবি করেন,এখানে সমঝোতার কিছুই নেই। দুদককে এগোতে হয় রেকর্ডের ভিত্তিতে। রেকর্ড যদি সঠিক না হয় তাহলে কর্মকর্তারা কার্যক্রম কিভাবে এগিয়ে নেবেন ?
তবে এ বিষয়ে ভিন্ন মত পোষণ করে সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, এটি আসলে দুদকের সদিচ্ছার বিষয়। দুদকের আইনটি এমনভাবেই প্রণয়ন করা হয়েছে যে, যে কোনো নাগরিকের সম্পদ অনুসন্ধানের এখতিয়ার প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে। কিন্তু সেটি তারা করবে কি না এটিই এখন প্রশ্ন। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মোজাম্মেল হক বলেন, আমরা ইতিমধ্যেই অনেকের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা করেছি। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীও রয়েছে। আরও কিছু অনুসন্ধান প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অনুসন্ধান বন্ধ রয়েছে-এ কথা ঠিক নয়। কাজতো চলছেই।
ফৌজদারি মামলায় অভিজ্ঞ এই আইনজীবী বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এর ২৬(১), ২৬(২) এবং ২৭ (১) ধারায় মাদক ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারে দুদক। কিন্তু কি কারণে কোনো অনুসন্ধানই যৌক্তিক পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে না-এটি বোধগম্য নয়। মাদক ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী। তাদের হাত অনেক লম্বা। সেই হাত দুদক অবধি পৌঁছেছে কি না-এখন এ প্রশ্নই সামনে চলে আসে। বিষয়টি অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক। সংস্থাটির প্রতি মানুষের আস্থা ধরে রাখার জন্যই এসব সংশয়-সনেন্দেহের অবসান হওয়া দরকার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।