পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহ নেই কোম্পানিগুলো মজুত করছে
মিল গেটে সরেজমিনে গিয়ে সাপ্লাই, ডেলিভারি, আমদানি ইত্যাদি বিষয়ে পাঠানো তথ্য যাচাই করবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের টিমের সঙ্গে অন্যান্য সংস্থার যৌথ টিম। গতকাল বুধবার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সভাকক্ষে মিল মালিকদের সঙ্গে বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক এ এইচ এম. সফিকুজ্জামান। এর দুদিন আগে ঘোষণা দেয়া হয় রশিদ ছাড়া ভোজ্যতেল বিক্রি করা যাবে না। আরও আগে বলা হয় খোলাবাজারে সয়াবিন বিক্রি করা যাবে না। এসবই সরকারের দায়িত্বশীলদের বক্তব্য। বাস্তবে বাজারের চিত্র কি? রাজধানীর বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ নেই বললেই চলে। বাজারে তেল না থাকলে মনিটরিং করে কি হবে?
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২ মার্চ বাণিজ্যমন্ত্রীর ‘সয়াবিনের দাম বাড়বে না’ বক্তব্য দেয়ার পর ৩ মার্চ থেকে বাজারে সয়াবিনের সরবরাহ বন্ধ। রাজধানীর বাজারগুলোতে সয়াবিন হয়ে গেছে সোনার হরিণ। যে দোকানে তেলের ১০০ বোতল থাকতো সে দোকানে দু’একটি তেলের বোতল দেখা যায়। কোনো কোনো খুচরা দোকানদার সয়াবিন বিক্রি বন্ধ সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছে দোকানে। সম্প্রতি এফবিসিসিআইয়ের নেতারা ভোগ্যতেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে তেল বিক্রির ঘোষণা দেন। কিন্তু বাজারে তেল সরবরাহ করা হচ্ছে না। অথচ পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলোর কাছে ভোজ্যতেলের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটির পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই। কয়েক দিন ধরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মৌলভীবাজার, যাত্রাবাড়ী বাজার, ক্যাপ্তানবাজারসহ বড় বাজারগুলোর দোকানে বোতলজাত কিছু তেল পাওয়া গেলেও পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতে তা বিশেষ দেখা যাচ্ছে না। আর খোলা সয়াবিন তেলের সরবরাহ একেবারেই কমে গেছে। অধিকাংশ দোকানে পণ্যটি নেই।
গতকাল বুধবার রাজধানীর আরামবাগ, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, মগবাজার, হাতিরপুল, কারওয়ান বাজার, স্বামীবাগ, ধোলাইপাড়সহ বেশ কয়েকটি দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গেলে ভোজ্যতেলের সরবরাহের নেই। দোকানদাররা জানিয়েছেন, ৩ মার্চ থেকে কোম্পানিগুলো সরবরাহ কমিয়েছে। কোম্পানির গাড়ি আসছে ঠিকই, কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী তেল দিচ্ছে না। ৫০ বোতল চাইলে দিচ্ছে ১০ বোতল। অন্যদিকে পাইকারি বাজারে গিয়েও চাহিদা অনুযায়ী খোলা তেল মানে ড্রাম পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে প্রত্যেক দিন তেল কেনা লাগছে। কয়েকজন দোকানদার জানান, ৫ বোতল সয়াবিন নিতে গেলে অন্যান্য পণ্য নেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অথচ, মিল মালিকরা দাবি করছেন, প্রতিদিন তেল সরবরাহ করা হচ্ছে। ডিলার ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ দু-একটি কোম্পানি তেল সরবরাহ করলেও বাকিরা দিচ্ছে না।
গত সোমবার ভোজ্যতেল পাইকারি ব্যবসায়ীদের নিয়ে সচেতনতামূলক এক সভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ভোজ্যতেল নিয়ে সব স্তরে কারসাজি হচ্ছে।
রাজধানীর কদমতলীর শনিরআখড়ার মসজিদ রোেেডর মনির স্টরের মো. মনির হোসেন জানান, কয়েক দিন ধরে খোলা সয়াবিন তেল নেই। বিভিন্ন কোম্পানির গাড়িগুলো আগে দোকানে এসে বোতলজাত তেল দিয়ে যেত। কিন্তু এখন দিচ্ছে না।
অথচ ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের এক প্রতিবেদেন দেখা গেছে, সমিতির সদস্য ৬ কোম্পানির কাছে বর্তমানে ১ লাখ ৯৫ হাজার ৬৩৬ টন ভোজ্যতেল মজুত রয়েছে। এর মধ্যে পরিশোধিত ভোজ্যতেল ১৯ হাজার ৭৩৭ টন এবং অপরিশোধিত ভোজ্যতেল ১ লাখ ৭৫ হাজার ৮৯৯ টন। আর আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৮০০ টনের। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, মজুত তেলের মধ্যে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত মিলিয়ে সিটি গ্রæপের কাছে রয়েছে ৩৯ হাজার ৯৭৮ টন, মেঘনা গ্রæপের ৫০ হাজার, টি কে গ্রæপের ৩৭ হাজার ৪৫৯ টন, এস আলমের ৫২ হাজার ৮১৮ টন, বাংলাদেশ এডিবল অয়েলের রয়েছে ১৫ হাজার ৩০৯ টন এবং গেøাব এডিবল অয়েলের রয়েছে ৭২ টন। বসুন্ধরা গ্রæপসহ অন্য যেসব ভোজ্যতেল প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের কাছে কত পরিমাণ মজুত রয়েছে সেই বিষয়ে ওই প্রতিবেদনে তথ্য নেই।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশে বছরে মোট ২০ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। এতে মাসে গড়ে দেড় লাখ টনের কিছু বেশি ভোজ্যতেল দরকার পড়ে। কিন্তু কোম্পানিগুলোর কাছে প্রায় ২ লাখ টন মজুত রয়েছে। গত বছর আমদানি হয়েছে ২১ লাখ ৭১ হাজার টন। গত ৭ ফেব্রæয়ারি বাড়তি দাম সমন্বয় করে অভ্যন্তরীণ বাজারের জন্য ৮ টাকা বাড়িয়ে দাম নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এরপর পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলো ২৭ ফেব্রæয়ারি পুনরায় লিটারে ১২ টাকা দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করে। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তাতে সায় দেয়নি।
টিসিবির তথ্যমতে, গত ৭ ফেব্রæয়ারি খোলা সয়াবিনের দর ছিল ১৪৫ থেকে ১৫০, আর পাম তেলের দর ছিল ১৩৪ থেকে ১৩৬ টাকা। এরপর ব্যবসায়ীরা গত ২৭ ফেব্রæয়ারি লিটারে ১২ টাকা দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়ার পরই ১ মার্চ এক লাফে খোলা সয়াবিনের দর ওঠে ১৬০ থেকে ১৭৫ টাকা এবং পাম তেলের দর উঠেছে ১৫৩ থেকে ১৫৮ টাকায়। গতকাল মঙ্গলবার সয়াবিন তেল ১৬০ থেকে ১৭২ টাকা এবং পাম তেল ১৫০ থেকে ১৫৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
বাজারে তেলের সরবরাহ নেই অথচ মনিটরিং করার জন্য দফায় দফায় বৈঠক করছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা। গতকাল জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সভাকক্ষে মিল মালিকদের সঙ্গে সভায় বলা হয় সাপ্লাই অর্ডারের (এসও) মধ্যে তেলের দাম উল্লেখ থাকতে হবে, আগের যে এসও সরবরাহ করা হয়েছে তার ডেলিভারি ২৪ মার্চের মধ্যে দিতে হবে। পাশাপাশি তেল দেশের বাইরে যাচ্ছে কি-না তা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে চিঠি দিয়ে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলবে বলেও সভায় সিদ্ধান্ত হয়।
সভায় অধিদফতরের পরিচালক অর্থ ও প্রশাসন মনজুর মোহাম্মদ শাহ্রিয়ার, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন আহমেদসহ তেল ব্যবসায়ী, মিল মালিকের প্রতিনিধি এবং ডিলাররা উপস্থিত ছিলেন।
ভুক্তভোগীদের প্রস্তাব সিন্ডিকেট করে তেল সরবরাহ বন্ধ রেখে কিসের মনিটরিং করবেন কর্মকর্তারা?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।