Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শিশু-কিশোরদের সামনে প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরতে হবে

বঙ্গবন্ধুর জীবনের ওপর আঁকা একটি স্ক্রল পেইন্টিংয়ের প্রদর্শনী উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০২ এএম

শিশু-কিশোরদের সামনে দেশের বিজয় ও অর্জনের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরার আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এত প্রজন্মের পর প্রজন্ম দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের জন্য কাজ করতে অনুপ্রাণিত হবে। প্রকৃত ইতিহাস জানলে শিশু-কিশোররা যেমন দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে, স্বার্থপরের মত নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত না থেকে দেশের জন্য দেশের মানুষের কল্যাণে কিছু করার আগ্রহের সৃষ্টি হবে।
গতকাল জাতীয় জাদুঘরের নলিনী কান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের ওপর ভিত্তি করে আঁকা একটি স্ক্রল পেইন্টিং এর পক্ষকাল ব্যাপী প্রদর্শনীর উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, সঠিক ইতিহাস জানলে শিশুদের মেধা, জ্ঞান, শৈল্পিক মন ও মনন বিকশিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা অনেক দিবস পালন করলেও সেই দিবসের মাহাত্ম কি, ইতিহাস কি অনেক সময় দেখা যায় আমাদের নতুন প্রজন্ম জানতে পারে না। কাজেই, দেশের সঠিক ইতিহাস প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দেয়ার বিষয়ে আরো নজর দেয়া দরকার। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ’৭৫ এর পর ২১ বছর তরুণ প্রজন্মকে দেশের সঠিক ইতিহাস জানতে দেয়া হয়নি। বরং ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল। এতে অনেকেই আশপাশ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বন্ধুবান্ধব বা আত্মীয় পরিজন থেকে পরিপূর্ণ বা সঠিক ইতিহাস জানতে পারেনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহান ২১ ফেব্রুয়ারি বা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস কেন আমরা উদযাপন করি, জাতির পিতার ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, ’৭৫ এর ১৫ আগস্টের নির্মম নিষ্ঠুর হত্যাকান্ড বা ’৭১ এ যেভাবে এদেশে গণহত্যা হয়েছে বা আমাদের সংগ্রাম সে সময়ে যে সাহস নিয়ে আমাদের নিরস্ত্র বাঙালি অস্ত্র তুলে নিয়ে যুদ্ধ করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে; সেই বিজয়ের সঠিক ইতিহাস-এরকম বহু ঘটনা আমাদের জীবনে রয়েছে, যার সমন্ধে আমাদের শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে প্রজন্মের পর প্রজন্মের জানা উচিত। তিনি বলেন, প্রকৃতি আমাদের এত সুন্দর একটা দেশ দিয়েছে সেখানে প্রাকৃতিকভাবেই আমাদের সকলের মাঝে এই শৈল্পিক চেতনাটা রয়েছে এবং যার বিকাশটা দরকার ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে শিল্পীর তুলির আঁচড়ে আমাদের বাংলাদেশের সংগ্রাম থেকে অর্জনের যে ইতিহাস তা ফুটে উঠেছে। শুধু বর্ণমালা পড়েই নয় শিল্পির তুলিতেও মানুষ সেটা দেখতে এবং উপলদ্ধি করতে পারবে, জানতে ও শিখতে পারবে।
তিনি বলেন, আমাদের কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক যে যেখানে আছেন তারা যে যে কাজ করে যাচ্ছেন আপনারা তা করে যাবেন। অন্তত আমি এটুকু বলতে পারি যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়, জাতির পিতা কন্যা হিসেবে দেশের মানুষের কল্যাণে যা যা কাজ করার সেটা যেমন করে যাব। বাঙালি হিসেবে আমাদের যে শিল্প, সাহিত্য বা সংস্কৃতির চর্চা যেন অব্যাহত থাকে সেজন্য যতটুকু সহযোগিতার দরকার, অবশ্যই আমি তা করবো। হ্যাঁ, প্রধানমন্ত্রী থাকলে সহোযোগিতার সুবিধা বেশি তবে, সবসময় আমার কাছ থেকে এই সহযোগিতা তারা পাবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশের কবি, শিল্পি, সহিত্যিকরা তাদের লেখনীর মধ্যদিয়ে তাঁদের তুলির আঁচড়ে, কবিতার মাধ্যমে, গানের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নামটিকে চিরভাস্বর করে রেখেছেন। সেজন্য ষড়যন্ত্রকারীরা চাইলেও এই নামটি মুছতে পারেনি। এজন্য সকলকে তিনি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
ইতিহাসকে মুছে ফেলার অপচেষ্টা হিসেবে তার সরকারের দায়িত্বে আসার আগে ২১টি বছর কোথাও জাতির পিতার ছবি থাকলে তা তখনকার একমাত্র সরকারি সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভিতে প্রচারের সময় কাগজ বা অভিনব কৌশলে আড়াল করেও প্রচারের অপচেষ্টা হয় বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। কিন্তু, সত্যকে কেউ মুছে ফেলতে পারে না বলেই আজ সত্য উদ্ভাসিত হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, এটা করা খুব কঠিন কাজ নয় কারণ ‘বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’ থেকে ‘সংগ্রাম থেকে স্বাধীনতা’ এই কর্মসূচিটি সারা বাংলাদেশ ব্যাপী আমরা করতাম। করোনার জন্য সেটি অনেক জায়গায় বন্ধ হয়ে গেলেও সেরকম একটি আয়োজন তার সরকারের রয়েছে। সরকারে না থাকলে ট্রাস্টের পক্ষ থেকেও এটি করা সম্ভব বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
২০০৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকায় দেশের অনেক উন্নতি তার সরকার করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সময়ে মানুষের জীবন মান পাল্টেছে, হতদারিদ্র্যতা কমেছে, শিক্ষা-দীক্ষার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে, উন্নতির ছোঁয়া গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছেছে। তবে, আমাদের যে জাতীয় অর্জনগুলো বা এর পেছনে যে ত্যাগ তীতিক্ষা তাও সকলের জানা দরকার।
বঙ্গবন্ধুর বৈচিত্রময় ও বহুমাত্রিক জীবন তুলে ধরে এ স্ক্রল পেইন্টিং এঁকেছেন দেশের খ্যাতনামা চিত্রশিল্পী শাহজাহান আহমেদ বিকাশ। ১৫০ ফুট দীর্ঘ স্ক্রল পেইন্টিংটি বাংলাদেশে সম্পাদিত সর্ববৃহৎ পটভূমিতে জাতির পিতার জীবনভিত্তিক চিত্রকর্ম। চিত্রশিল্পীর ভাষায় মাটি থেকে তৈরী বার্নট অ্যাম্বার রং এর মাধ্যমে মাটি থেকে উঠে আসা ইতিহাসের এই মহানায়ককে চিত্রিত করেছেন তিনি।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। স্ক্রল পেইন্টিংটির শিল্পী শাহজাহান আহমেদ বিকাশ অনুষ্ঠানে নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তৃতা করেন।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, প্রদর্শনীর আয়োজন সহযোগী বিজ্ঞাপনী সংস্থা ‘মাত্রা’র পক্ষ থেকে ম্যানেজিং পার্টনার শিল্পী আফজাল হোসেন, বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদের সভাপতি শিল্পী জামাল আহমেদও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে মুজিববর্ষের থিমসঙ এবং স্ক্রল পেইন্টিংয়ের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি পরিবেশিত হয়।



 

Show all comments
  • jack ali ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৫:১২ পিএম says : 0
    শিশু-কিশোরদের ছোটবেলা থেকেই কোরআন হাদিস শিখাতে হবে নবী ও সাহাবীদের জীবনী পড়তে দিতে হবে তাহলে তারা বড় হয়ে তারা কোরআন দিয়ে দেশ চালাবে তাহলে আমাদের দেশে আর কোন চোর বাটপার থাকবে না আমাদের দেশটা প্রচুর উন্নতি হবে আজকে চোর-বাটপার চালায় বলে আজকে আমাদের দেশ ধ্বংস হয়ে গেছে মানুষের নৈতিকতা বলতে কোন কিছু নাই যারা শাসন করে তারা নরাধম নরপিচাশ তারা মানুষ হত্যা গুম দেশের লক্ষ কোটি টাকা লুটপাট মানুষকে বিনা অপরাধে জেল এর মধ্যে চিরজীবনের মধ্যে আটকে রাখা এই হচ্ছে তাদের ধর্ম
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ