আওয়ামী সরকার ‘জয়বাংলা-ফ্যাসিবাদ’ প্রতিষ্ঠায় সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, বিশ্বে স্বৈরাচারের অতীতের সমস্ত নজির ভেঙ্গে গোটা দেশকে ‘জয়বাংলা-ফ্যাসিবাদের’ আস্তানা বানাতে তারা গণতন্ত্রের পক্ষে সোচ্চার রাজনৈতিক দল বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্য বিএনপি’র উপর প্রাণঘাতি আক্রমণ চালাচ্ছে। তারই বহি:প্রকাশ দেখা গেলো সোমবার ভাষা দিবসে ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও লক্ষীপুর জেলার রায়পুর শহীদ মিনারে এবং রোববার ঝালকাঠি জেলা সদরে বিএনপি কার্যালয়ে আওয়ামী ক্যাডারদের এই রক্তক্ষয়ি ঘটনা ‘জয়বাংলা-ফ্যাসিবাদের’ আনুষ্ঠানিক অভিব্যক্তি। গতকাল সোমবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন স্থানে হামলার ঘটনা তুলে ধরে রুহুল কবির রিজভী বলেন, মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী সশস্ত্র ক্যাডাররা তাণ্ডব চালিয়ে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মীকে আহত করেছে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদীতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদনের সময় ঢাকা মহানগরীর উত্তর বিএনপি’র অন্তর্র্ভুক্ত বিমানবন্দর, দক্ষিণ খান, শাহআলী, রূপনগর থানার প্রভাতফেরীতে অংশগ্রহণকারী নেতাকর্মীদের উপর পেছনদিক থেকে আওয়ামী ছাত্রলীগ, যুবলীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা আক্রমণ করে এতে রহিম ও আলাউদ্দিনসহ ২০ জনের অধিক নেতাকর্মী আহত হয়। লক্ষীপুর জেলার রায়পুর উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের স্থানীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদনের সময় আওয়ামী যুবলীগের অস্ত্রে-সস্ত্রে সুসজ্জিত একটি গ্রুপ হামলা চালায়। এতে আহত হয়েছেন ছাত্রদলের সভাপতি শাহরিয়ার ফায়সাল, পৌরসভা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুলসহ ১৫ জনের অধিক নেতাকর্মী। আহত নেতাকর্মীদের উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি করলে সেখানেও আওয়ামী ক্যাডাররা হামলা চালায়। তৎক্ষণাৎ তাদের সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এর আগে রোববার বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন এবং সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক নান্নু’র উপস্থিতিতে ঝালকাঠি জেলার সদর উপজেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন চলাকালীন সময়ে পুলিশ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা যৌথভাবে হামলা চালিয়ে স্থানীয় বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের আসবাবপত্র ভাংচুর ও অনুষ্ঠান পণ্ড করে।
রিজভী বলেন, ভাষা শহীদ দিবসেও তাদের নারকীয় তাণ্ডব অব্যাহত আছে। আওয়ামী মন্ত্রী ও নেতাদের আশকারাতেই জাতীয় পর্যায় থেকে জেলা উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে যুবলীগ-ছাত্রলীগ নামধারী রক্তপিপাসু দল সৃষ্টি করা হয়েছে। গোটা জাতিকে নিষ্প্রাণ নিস্তেজ করার জন্যই এই সকল দানবদের তৈরি করা হয়েছে। এই জন্যই হিম-ঠাণ্ডা ত্রাস আর আতঙ্কের চোরা স্রোত বইয়ে দেয়া হচ্ছে জনগণের শিরদাঁড়ায়। পতনের লক্ষণ প্রকট হয়ে উঠার কারণেই ওরা এখন মরণযজ্ঞে মেতে উঠেছে। এরা এক ভিন্ন ধরনের সংস্কৃতি নির্মান করতে চাচ্ছে, এই সত্যটি এখন দেশবাসী মর্মে-মর্মে অনুভব করছে। নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি বিপন্ন করে এরা এক আজ্ঞাবাহী সংস্কৃতির জন্ম দিতে যাচ্ছে। তারই আলামত চারিদিকে ফুটে উঠেছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এই নাৎসী সরকারের উৎখাতই এখন আমাদের প্রধান কর্তব্য। জনগণের শক্তিতে বলিয়ান হয়ে অবিলম্বে এই সরকারের পতন না ঘটাতে পারলে মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা ভয়াবহভাবে বিপন্ন হবে। তিনি দুস্কৃতিকারীদের হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।