Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইয়াবা পাচারকারী অপবাদে নির্মমভাবে খুনের পর উল্লাস

আলোচিত বালু হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০১ এএম

শেষরাতে পটিয়া আমির ভাণ্ডার মাজার জেয়ারত করে বাড়ি ফিরছিলেন মো. শাহজাহান আলম বালু। কিছুদূর যেতেই তার সাথে দেখা হয় সাইফুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান হিরুর। দুজনেই তার প্রতিবেশী। বালুকে দেখেই প্রথমে মোবাইল চোর হিসেবে পাকড়াও করে তারা। এরপর ইয়াবা পাচারকারী অপবাদ দিয়ে তাকে মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে তাকে অপহরণ করে পাশের পরিত্যক্ত একটি মহিষের খামারে নিয়ে যায়।
ইয়াবা পাচারকারী ধরা পড়েছে এমন খবর দিয়ে মোবাইলে কয়েকজন সহযোগীকে সে খামারে ডেকে আনে তারা। এরপর দলবেধে সবাই বালুকে পেটাতে শুরু করে। ইয়াবা খোঁজার কথা বলে শরীরের সব কাপড় খুলে নেয় তারা। এরপরেও তার কাছে কোন ইয়াবা পাওয়া যায়নি। এরপর পেটের ভেতরে লুকিয়ে ইয়াবা পাচার করছে এমন অভিযোগ করে মারধরের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়া হয়। এরমধ্যে পায়খানা করিয়ে পেটে থাকা কথিত ইয়াবা বের করার জন্য তাকে ওষুধ খাওয়ানো হয়। প্রথম দফা ওষুধ খেয়ে দুইবার পায়খানা করে বালু। তবে কোন ইয়াবা বের হয়নি।
এরপর দ্বিতীয় এবং তৃতীয় দফায় তাকে জোর করে ওষুধ খাইয়ে দেয়া হয়। এরপর টানা পাতলা পায়খানা করতে শুরু করে বালু। একপর্যায়ে পানির পিপাসায় কাতরাতে থাকে বালু। ওই অবস্থায়ও পানি না দিয়ে তাকে জিআই পাইপ দিয়ে পেটাতে থাকে তারা। একপর্যায়ে পানি খাওয়ানোর কথা বলে তাকে চাঁনখালী খালে ছুঁড়ে ফেলে তারা। মুমূর্ষু অবস্থায় পানিতে ডুবে তার মৃত্যু হয়। তখন হামলাকারীরা উল্লাস প্রকাশ করে এলাকা ত্যাগ করে। বিগত ২০২০ সালের ২ অক্টোবর রাতে ঘটে এমন পাশবিক ঘটনা। ছয় দিন পর হতভাগ্য বালুর লাশ ভেসে ওঠে বোয়ালখালীর সারোয়াতলী খিতাপচর প্রসন্ন চৌধুরী ব্রিজের নিচে। সম্পূর্ণ উলঙ্গ অবস্থায় অজ্ঞাতনামা হিসাবে লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায় বোয়ালখালী থানা পুলিশ। পরিচয় শনাক্তে করা হয় ডিএনএ টেস্ট।
একপর্যায়ে জনৈক মো. জাহাঙ্গীর আলম লাশটি তার ভাই বালুর বলে শনাক্ত করেন। মাজার জেয়ারত করতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় তার পরিবারের পক্ষ থেকে পটিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করা হয়। মামলাটি শুরুতে তদন্ত করে বোয়ালখালী থানা পুলিশ। তবে কোন রহস্য উদঘাটন করতে না পেরে পিবিআইকে মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার পরিদর্শক কাজী এনায়েত কবীর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব পান।
দীর্ঘ তদন্তের পর গত শুক্রবার প্রধান দুই আসামি সাইফুল ও হিরুকে পাকড়াও করা হয়। তিন দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তারা বালুকে খুনের দায় স্বীকার করে। একইসাথে এ ঘটনায় জড়িত অপর সহযোগীদেরও নাম প্রকাশ করে। দুই আসামিকে নিয়ে ঘটনাস্থল সেই পরিত্যক্ত মহিষের খামার থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত জিআই পাইপ, বালুর পরনে থাকা পোশাক, ট্যাবলেটের খোসা ও সিরাপের বোতলসহ বেশকিছু আলামত জব্দ করা হয়। আর এর মধ্যদিয়ে ১৭ মাস পর আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটিত হলো। এ ঘটনায় অন্য আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে বলে জানান তদন্তকারী কর্মকর্তা কাজী এনায়েত কবীর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ