Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মার্কেটে আইনের তোয়াক্কা নেই

রাজধানীর দোকান ও বিপণিবিতান দুই সিটিতে অঞ্চলভিক্তিক মার্কেট খোলা- বন্ধ রাখার নিয়ম থাকলেও তদারকি না থাকায় ইচ্ছেমতো খোলা রাখায় ভোগান্তিতে পড়ছে মানুষ আইন প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই কার্যকর

একলাছ হক ও মো. জাহিদুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৭ এএম

গণপরিবহন সেক্টরের মতোই রাজধানীর মার্কেটগুলো চলছে ফ্রি স্টাইলে। সরকারের বেঁধে দেয়া ভাড়া যেমন ঢাকার গণপরিবহনগুলোর মালিকরা মানছেন না; তেমনি সরকারের নিয়মনীতির তোয়াক্কাই করছে না মার্কেট ও বিপণিবিতানগুলোর মালিকরা। ঢাকার মার্কেটগুলো সাপ্তাহিক বন্ধ ও খোলা রাখার বিষয়ে নিয়ম করে দিয়েছে সরকার। কিন্তু সরকারের সে নিয়ম মানছেন না মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। আর তদারকি না থাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনেই বন্ধের দিন দোকান খুলছেন ব্যবসায়ীরা।

অথচ ব্যবসায়ীদের এই আইন ভঙ্গের পরও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নির্বিকার! গত এক সাপ্তাহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কয়েকটি মার্কেটে সরেজমিন এ চিত্র দেখা গেছে। তবে কোথাও কোথাও মার্কেট খোলা ও বন্ধ করা নিয়ে লুকোচুরি খেলা দেখা গেলেও গণপরিবহন মালিকদের মতোই মার্কেটের দোকান মালিকরা আইন অমান্যে বেপরোয়া। মার্কেটগুলোর ব্যবসায়ীদের মধ্যে যেন চলছে নিয়ম ভেঙে ব্যবসা করার প্রতিযোগিতা। ফলে রাজধানীতে নিত্যদিন যানজট লেগেই রয়েছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লানার্সের (বিআইপি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মুহম্মদ খান বলেন, মার্কেটগুলো নিয়ম না মানতে মানতে তা নৈরাজ্যে পরিণত হয়েছে। আধুনিক নগরের মূল বিষয়টা হচ্ছে, নগরের ব্যবস্থাপনা সঠিক থাকা ও আইনের শাসন থাকা। সেটা না থাকায় নিয়মের ব্যতয় ঘটছে। তবে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের মহাপরিদর্শক মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, মার্কেট বন্ধের দিনেও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রেখেছেন- তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। মনিটরিং চালু আছে। আমরা যেখানে এ ধরনের বিষয় দেখি, সেখানেই আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি। এই আইন প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই কার্যকর হবে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দোকান ছাড়া সব ধরনের দোকানপাট ও বিপণিবিতান এলাকাভিত্তিক আলাদা আলাদা দিন বন্ধ থাকার কথা থাকলেও বাস্তবতা ভিন্ন। বিভিন্ন শপিংমলের মূল ফটকের আংশিক খোলা রেখে ভেতরে চলে বেচাকেনা। আবার কোথাও কোথাও সরকার নির্ধারিত দিনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজেদের মতো করে একদিন বন্ধ রাখা হচ্ছে মার্কেটগুলো।

অন্যদিকে রাস্তার দুইপাশে সারিবদ্ধ খোলা দোকানগুলো বুঝিয়ে দিচ্ছে নিয়মের তোয়াক্কা করছেন না কেউই। অথচ রাজধানীতে যানজট কমাতে আর বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে ঢাকাকে সাতটি অঞ্চলে ভাগ করে দোকানপাট, বিপণিবিতান বন্ধের দিন নির্ধারণ করে দেয়া হয়। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পাস হয় ২০১০ সালে। এরপর থেকে রাজধানীর নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দোকান ছাড়া সব ধরনের দোকানপাট ও বিপণিবিতান এলাকাভিত্তিক আলাদা আলাদা দিন বন্ধ থাকছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতি সপ্তাহে একদিন পূর্ণ দিবস ও আরেক দিন অর্ধদিবস (বেলা ২টা পর্যন্ত) দোকানপাট বন্ধ রাখতে হবে। আর বিপণিবিতানগুলো বন্ধ করতে হবে রাত ৮টার মধ্যেই।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের গেজেট সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬-এর ১০৩ এবং ১১৪(১) ও বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা ২০১৫-এর বিধি ১০০ অনুযায়ী দোকান এবং বাণিজ্য ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান সপ্তাহে একদিন পূর্ণ দিবস ও আর একদিনের অর্ধদিবস বন্ধ রাখার বিধান রয়েছে। ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত বিষয়ে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী রাজধানীতে নির্ধারিত দিন বিভিন্ন এলাকায় দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার বিষয়ে সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। তবে শ্রম আইনের ১১৪(৫) ধারা মোতাবেক সবজি, মাছ-গোশতের বাজার, দুগ্ধজাতসামগ্রী, খাবার হোটেল ও ওষুধের ফার্মেসীসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সংশ্লিষ্ট দোকান এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো এর আওতার বাইরে থাকবে।

সরেজমিনে রাজধানীতে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, বন্ধে দিনেও খোলাই থাকছে দোকানপাট। গতকাল বৃহস্পতিবার বিজয়নগর মাহাতাব সেন্টারের সামনে দেখা যায় ব্যাপক ভিড়। নিয়ম অনুযায়ী, গতকাল এই এলাকার দোকানপাট বন্ধ থাকার কথা থাকলেও এলাকার স্থানীয় ব্যক্তি, দোকানের কর্মচারী ও গ্রাহকরা জানান, এই মার্কেট প্রতিদিনই খোলা থাকে। এনিয়ে দোকানের কর্মচারীদের মধ্যেও রয়েছে ক্ষোভ। তারা জানান, আমাদের কোনো সাপ্তাহিক ছুটি নেই। প্রতিদিনই কাজ করতে হয়। চাকরি হারানোর ভয়ে চুপ করেই সব সহ্য করেন বলে জানান তারা।

অন্যদিকে দোকানের মালিকরা করোনার অজুহাত দেখিয়ে বলেন, অনেকদিন লোকসান দিয়ে এসেছি। এখন যদি দোকান বন্ধ রাখি, তাহলে সেই ক্ষতি পোষাতে পারব না। সাপ্তাহিক ছুটি হিসাব করে চললে, ব্যবসা চালাতে পারবেন না বলেও জানান তারা। শুধুমাত্র মাহাতাব সেন্টারই নয়, গতকাল ফকিরেরপুল, পল্টন, মতিঝিল, টিকাটুলি, আরামবাগ, কাকরাইল, বিজয়নগর, ইস্কাটন, মগবাজার, বেইলি রোড, সিদ্ধেশ্বরী, মালিবাগের একাংশ, শাজাহানপুর, শান্তিনগর, শহীদবাগ, শান্তিবাগ, সেগুনবাগিচা এলাকার মার্কেটগুলোর চিত্র একই। এসব এলাকার মৌচাক মার্কেট, আনারকলি মার্কেট, আয়েশা শপিং কমপ্লেক্স, কর্নফুলি গার্ডেন সিটি, কনকর্ড টুইং টাওয়ার, ইস্টার্ন প্লাস ওই দিন পুরোপুরি ছিল বন্ধ। তবে সিটি হার্ট, জোনাকি সুপার মার্কেট, পল্টন চায়না টাউন ছিল খোলা। এ তিন সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানান, তারা বৃহস্পতিবার পূর্ণ ও শুক্রবার অর্ধদিবস বন্ধ থাকার নিয়ম মেনে চলেন না। তাদের মার্কেট সাপ্তাহিক বন্ধ থাকে রোববার। রোববার নির্ধারিত বন্ধের দিন নয়, জানিয়ে এক কাপড় বিক্রেতা বলেন, মালিকদের নির্দেশনা ও কোর্টের অর্ডার নিয়ে তারা ওইদিন মার্কেট খোলা রাখেন। এছাড়াও ফকিরাপুল এলাকার ফজলুল হক শপিং কমপ্লেক্সটি বৃহস্পতিবার বন্ধ থাকার কথা থাকলেও ব্যবসায়ীরা খোলা রেখেছেন। তাদের দাবি মহামারি করোনার কারণে তাদের যে ক্ষতি হয়েছে তার পুষিয়ে নিতেই তারা প্রতিদিনই দোকান খোলা রাখেন।

এর আগে গত বুধবার রাজলক্ষ্মী সংলগ্ন উত্তরা জোন মোবাইল মার্কেটও বন্ধ থাকার কথা ছিল। কিন্তু সেখানে দেখা যায়, মূল ফটক বন্ধ রেখে মার্কেটের পাশে আরেকটি দরজা দিয়ে প্রবেশ করা যাচ্ছে সেখানে। মানি এক্সচেঞ্জ, কম্পিউটার অ্যাসোসরিজসহ বিভিন্ন ধরনের দোকান চলছে চুপিসারে। ক্রেতা সমাগমও একবারে কম নয়। এই ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ডে চলছিল খাজানা বৃহত্তর বঙ্গবাজারে থ্রি-পিস, থান কাপড়, বাচ্চাদের পোশাকের রমরমা ব্যবসা। এই ভবনের ঠিক পেছনে মিলিনিয়াম টাওয়ার। বিশাল বড় ব্যানারে লেখা-শিগগিরই শুভ উদ্বোধন। অথচ নিচতলায় ৭০ শতাংশ ছাড়ে পণ্য বিক্রি করছে বেবি শপ লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এই ভবনগুলোর পাশে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য রাস্তায়ও তৈরি হয়েছিল যানজট। একই দিনে বন্ধ থাকার কথা ছিল বাড্ডার দোকানপাটও। তবে রাস্তার দুইপাশে বিভিন্ন পণ্যের ব্যবসা চলেছে পুরোদমে। উত্তর বাড্ডার একতা ফার্নিচার মার্টের প্রোপাইটর মিজানুর রহমান বলেন, করোনার কারণে সরকারি নির্দেশনা মেনে কতদিনই তো বন্ধ রাখলাম। অনেক ক্ষতি হয়েছে। সেই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে দোকান খোলা রেখেছি। শুধু একতা ফার্নিচারই নয় খোলা ছিল এর পাশে থাকা সব ফার্নিচারের দোকান। এছাড়া হার্ডওয়্যার, জুতাসহ অন্যান্য দোকানও যথারীতি খোলা ছিল।

শুক্রবার পূর্ণ ও শনিবার অর্ধদিবস বন্ধ থাকার কথা পুরান ঢাকার বাংলাবাজার, পাটুয়াটুলী, ফরাশগঞ্জ, জুরাইন, করিম উল্লাহবাগ, পোস্তগোলা, শ্যামপুর, মীরহাজীরবাগ, দোলাইপাড়, টিপু সুলতান রোড, ধুপখোলা, গেন্ডারিয়া, দয়াগঞ্জ, স্বামীবাগ, ধোলাইখাল, জয়কালী মন্দির, যাত্রাবাড়ীর দক্ষিণ-পশ্চিম অংশ, ওয়ারী, লালবাগ, কোতোয়ালী, বংশাল, নবাবপুর, সদরঘাট, তাঁতীবাজার, লক্ষ্মীবাজার, শাঁখারী বাজার, চানখারপুল, গুলিস্থানের দক্ষিণ অংশসহ বেশকিছু এলাকার মার্কেট ও দোকানপাট। কিন্তু এসব এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে বেশির ভাগ দোকানই ওইদিন খোলা ছিল। তবে ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জনা যায় ভিন্ন কথা। কোনো কোনো মার্কেট আবার নির্ধারিত দিনে বন্ধ না রেখে, ব্যবসায়ীদের সুবিধা মতো দিনে বন্ধ রাখেন। এতে করে স্থানীয় ক্রেতাদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এ এলাকার রাজধানী সুপার মার্কেটসহ কয়েটি মার্কেট শুক্রবার বন্ধ থাকার কথা থাকলেও ওইদিন থাকছে পুরোপুরি খোলা। এই মার্কেটের ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাদের মার্কেট সাপ্তাহিক বন্ধ থাকে রোববার। তবে রোববার মার্কেট বন্ধ থাকলেও বাইরের দোকানগুলো থাকে খোলা।

এই মার্কেটের এক বিক্রেতা নাজিম বলেন, শুক্রবারে অন্যদিনের মতো স্বাভাবিকভাবেই সব দোকান খোলা থাকে। আমাদের এই মার্কেট প্রতি রোববার বন্ধ থাকে। বন্ধের দিন কোনো দোকানপাট খোলা হয় না। ওই দিন ক্রেতারা এখানে আসেন না।

নবাবপুর রোড ও নর্থসাউথ রোডের দোকানপাট, ফুলবাড়িয়া মার্কেট, জাকের সুপার মার্কেট, গুলিস্তান হকার্স মার্কেট ও সুন্দরবন স্কোয়ার মার্কেট, গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্স, স্টেডিয়াম মার্কেট সাপ্তাহিক শুক্রবার বন্ধ থাকার নির্ধারিত দিন। তবে সেদিন স্টেডিয়াম মার্কেটের বেশির ভাগ দোকানই খোলা থাকে। স্টেডিয়াম মার্কেটের ব্যবসায়ী কামাল হোসেন বলেন, শুক্রবার বন্ধের জন্য নির্ধারিত দিন থাকলেও কেউ কেউ দোকান খোলা রাখেন। অনেক সময় দেখা যায়, ক্রেতারা মার্কেট কোনদিন বন্ধÑ এই খবর না জেনে পণ্য কিনতে চলে আসেন। অনেকে পণ্য কিনতে না পেরে ফেরত যেতে হয়। তাদের জন্য মার্কেট খোলা থাকলে ভালো হয়। আর ব্যবসায়ীদের জন্যও কিছু টাকার মালামাল বিক্রি করা যায়।

বনশ্রী, খিলগাঁও, গোড়ান, মালিবাগের একাংশ, বাসাবো, ধলপুর, সায়েদাবাদ, মাদারটেক, মুগদা, কমলাপুরের একাংশ, যাত্রাবাড়ী একাংশ, শনিরআখড়া, দনিয়া, রায়েরবাগ, সানারপাড় এসব এলাকার মার্কেটগুলো রোববার পুরোদিন ও সোমবার অর্ধেক দিন বন্ধ থাকে। তবে তালতলা সিটি করপোরেশনের মার্কেট ওই দিন বন্ধ থাকলেও অন্যসব মার্কেট ছিল খোলা। এই রোডে সকল কাপড়ের মার্কেটসহ সব ফ্যাশন হাউজগুলো সপ্তাহের প্রতিদিনই খোলা থাকে। দোকান খোলা থাকার কারণে রাস্তায় যাবাহনের চাপ থাকে বেশি। কোনো কোনো সরু রাস্তায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। আর খিলগাঁও, বাসাবো, মাদারটেক, মুগদা এলাকার ছোট গলির রাস্তাগুলোতে যানজটের কারণে দুর্ভোগে পড়তে হয় পথচারীদের।

মঙ্গলবার পূর্ণ ও বুধবার অর্ধদিবস বন্ধ থাকে কাঁঠালবাগান, নীলক্ষেত, কাঁটাবন, এলিফ্যান্ট রোড, শুক্রাবাদ, সোবহানবাগ, ধানমন্ডি, হাতিরপুল, মানিক মিয়া এভিনিউ, রাজাবাজার, মণিপুরিপাড়া, তেজকুনীপাড়া, ফার্মগেট, কাওরান বাজার, হাজারীবাগ, জিগাতলা, রায়েরবাজার, পিলখানা, লালমাটিয়া। তবে নিউমার্কেট এলাকাসহ বেশকিছু এলাকায় মূল মার্কেটের ফটক বন্ধ থাকলেও বাইরে থাকে খোলা। এতে যানজট ও জনজটের সৃষ্টি হয়।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লানার্সের (বিআইপি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মুহম্মদ খান মনে করেন নিয়ম না মানতে মানতে তা নৈরাজ্যে পরিণত হয়, আইনেরও ব্যতয় ঘটে। তিনি বলেন, আধুনিক নগরের মূল বিষয়টা হচ্ছে- নগরের ব্যবস্থাপনা সঠিক থাকা ও আইনের শাসন থাকা। আমরা যারা ব্যবসায়ী বলেন, নাগরিক বলেন- সবাই কিন্তু নগর কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী চলি, যেন নগরের শৃঙ্খলা ঠিক থাকে। সেই শৃঙ্খলার মধ্যে এলাকাভিত্তিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা আছে, কারেন্টের ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অন্য এলাকার প্রতি যে সকল কিছু সুশৃঙ্খলভাবে চলে- এই যে ব্যবস্থাপনার বিষয়টা এটা সঠিকভাবে থাকলেই নগরটা আধুনিক হয়। আর বিপরীতে যখন নগরে স্বেচ্ছাচারিতা চলে, সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সবাই। এই ক্ষেত্রে যেমন ব্যবসায়ীরা আইন মানছেন না, বা সরকারের নির্দেশনা মানছেন না। এভাবে না মানতে মানতে নৈরাজ্যটা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। কিছুদিন আগেও স্ব স্ব এলাকায় কিন্তু তাদের উপর যে বিধিগুলো ছিল সেগুলো মানত। আইনের ব্যতয় ঘটিয়ে তারা যেইদিনে তাদের মার্কেট বন্ধ করার কথা সেদিন বন্ধ করছে না।

এই নগর পরিকল্পনাবিদ আরও বলেন, এখন এটা যদি ব্যতয় ঘটে তাহলে দেখা যাবে, অন্য যে এলাকাগুলো যেমন আমি ধানমন্ডিতে থাকি এখানে মঙ্গলবার বন্ধ থাকার কথা, তারা খোলা রাখবে। কারণ একটা খারাপ উদাহরণ থেকে অন্যরা শিখবে, যে এভাবে করলে আমাদের তেমন কোনো সমস্যা হয় না, চালিয়ে যেতে পারব। নগর কর্তৃপক্ষের এখানে গাফিলতি আছে। তারা ঠিকমতো মনিটর করতে পারছে না। আবার যারা ব্যবসায়ী তাদের মধ্যে অধিক মুনাফা লাভের প্রবৃত্তি। এগুলো আমাদের কারো জন্যই মঙ্গলজনক না। একইসাথে নির্দিষ্ট দিনে বাধ্যতামূলকভাবে মার্কেট বন্ধ থাকলে সেখানকার কর্মচারীরাও সপ্তাহে একদিন ছুটি পায়। আমরা জোড় দাবি জানাচ্ছি কর্তৃপক্ষের কাছে যাতে তারা মনিটরিং জোড়দার করে এবং এই খারাপ উদাহরণ, যাতে অন্য এলাকাগুলোতে হতে না পারে। এর ব্যতিক্রম হলে আইন অনুযায়ী যেন ব্যবস্থা নেয়।

কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাব আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষগুলোর যদি নজরদারি থাকত তাহলে এসব করতে পারত না। একটা-দুটা দোকান খোলা, আর এলাকার বেশির ভাগ দোকান খোলা- তার মানে বুঝতে হবে এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ উদাসীন। এ উদাসীনতা শুধু যখন চলতে থাকবে, এই বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেমন সে এলাকার ট্রাফিকের মধ্যে পড়বে, আবার সে এলাকার ট্রাফিকের লোড কিছু কম হলে তার ইমপ্যাক্ট অন্য এলাকাতোও পড়ে। তার মানে উদ্দেশ্যটা ছিল আমরা অন্তত রুটিন মাফিক বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন দিন বন্ধ রাখতে পারি, নগরের যে ওভার অল ইমপ্যাক্ট। ট্রাফিক থেকে শুরু করে লোডশেডিংয়ের ইমপ্যাক্ট হোমোবিলিটি ইমপ্যাক্ট কিছুটা কমার কথা ছিল। এজন্য সেটা একটা ভালো সিদ্ধান্ত ছিল।

তবে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির মহাসচিব জহিরুল হক ভূঁইয়া বলেন, বড় বড় মার্কেট ও বিপণিবিতানগুলো নির্ধারিত দিনেই বন্ধ রাখা হচ্ছে। যদি কোথাও এর ব্যতয় ঘটে তাহলে তাৎক্ষণিক আমরা ব্যবস্থা নিব। আর মার্কেটের বাইরের দোকানগুলোকে আমরা ওইভাবে দেখি না। মহামারি করোনার কারণে ব্যবসায়ীদের যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুষিয়ে নিতে হয়তো ছোট ব্যবসায়ীরা বন্ধের দিনেও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখছেন।



 

Show all comments
  • জাকের হোসেন জাফর ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৬:৪৭ এএম says : 0
    বাংলাদেশে আইন যারা প্রণয়ন করেন তারাই বেশি আেইন ভাঙেন, অন্যদের কথা কি বলবেন।
    Total Reply(0) Reply
  • জনিরুল ইসলাম ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৬:৪৮ এএম says : 0
    ঢাকা সিটির যানজট নিরসণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও তার ফল পুরোপুরি পাওয়া যাচ্ছে না।
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ রমিজ ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৬:৪৯ এএম says : 0
    দেশে আইন না মানার কালচার তৈরি করলে যা হয় আরকি।
    Total Reply(0) Reply
  • নিরব হেলাল ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৬:৪৯ এএম says : 0
    মার্কেটগুলোতে নিয়মিত অভিযান খাকতে হবে, তবেই এটা নিয়ণ্ত্রণ করা যাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • মামুন আহাম্মাদ ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৬:৫০ এএম says : 0
    যে দেশে আইন লঙ্গন করে সরকার জোর করে ক্ষমতায় থাকে সেদেশে এমনটাই হবে এটাই স্বাভাবিক।
    Total Reply(0) Reply
  • বাহার বিন মুহিব ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৬:৫২ এএম says : 0
    রাজধানীর মার্কেটগুলোতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনার দাবি জানাচ্ছি।
    Total Reply(0) Reply
  • ন য় ন ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৬:৫৩ এএম says : 0
    ধন্যবা্দ বিষয়টি তুলে ধরার জন্য।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গণপরিবহন

৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২
৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২
১ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ