Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জানুয়ারিতে হার কমে ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ

মূল্যস্ফীতির হিসাবে বিস্ময়

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৩ এএম

বিশ্ববাজারের পাশাপাশি দেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার ফলে পরিবহন ভাড়া বেড়েছে। এতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে বাজারে সব জিনিসের দাম। অথচ সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বলছে, গত জানুয়ারি মাসে দেশে মূল্যস্ফীতির হার আগের মাসের চেয়ে বেশ কম। গতকাল বুধবার সংস্থাটি সবশেষ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি) চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
আগের মাস ডিসেম্বরে এই হার ছিল ৬ শতাংশের ওপরে। ৬ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ। অর্থাৎ, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে যে পণ্য বা সেবার জন্য ১০০ টাকা খরচ করতে হতো, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে সেই পণ্য বা সেবার জন্য ১০৫ টাকা ৮৬ পয়সা খরচ করতে হয়েছে। আগের মাসে এই খরচ ছিল ১০৬ টাকা ৫ পয়সা। মূল্যস্ফীতির এই তথ্যকে বিস্ময়কর বলছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, বিবিএসের হিসাবের চেয়ে বাজারের বাস্তব অবস্থার কোনো মিল নেই। অন্যদিকে বিবিএস মহাপরিচালক তাজুল ইসলাম বলেছেন, আমরা মাঠ পর্যায় থেকে যে তথ্য পাই, সেটাই প্রকাশ করি। অর্থনীতির গবেষক বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমি শুধু এইটাই বলব যে, এই কমাটা বিস্ময়কর। এটা দেশের কোনো মানুষই বিশ্বাস করবে না। আন্তর্জাতিক বাজারে সব জিনিসের দাম চড়া। দেশের বাজারেও চাল, ডাল, ভোজ্যতেলসহ সবকিছুর বাড়তি দামে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। তখন আমাদের পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে মূল্যস্ফীতি কমছে। এটা কী করে সম্ভব? কোথা থেকে ডেটা নিয়ে কী তথ্য প্রকাশ করে তারা, কে জানে? বিবিএসের এই তথ্য বাজারের বাস্তব অবস্থার সঙ্গে কোনোভাবেই মেলে না।
তিনি বলেন, বিশ্বের সব দেশের মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। এটি নিয়ে সব দেশের সরকার উদ্বিগ্ন। বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ বলছে, বিশ্ব অর্থনীতির প্রধান সমস্যা এখন মূল্যস্ফীতি। তখন আমাদের দেশে মূল্যস্ফীতির হার কমতে দেখতে পাচ্ছি। সত্যিই বিস্ময়কর মনে হচ্ছে আমার কাছে।
আরেক অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক মঞ্জুর হোসেন বলেন, বিবিএসের মূল্যস্ফীতি কমার তথ্যের সঙ্গে বাজারের বাস্তব অবস্থার কোনো মিল নেই। এই সময়ে বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমেছে বা মানুষের অন্য কোনো খরচ কমেছে-এটা কেউ বিশ্বাস করবে না।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, দেড় বছর পর ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের ঘর অতিক্রম করে। ২০২০ সালের জুনে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৬ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। এরপর থেকে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের নিচেই অবস্থান করছিল। জানুয়ারিতে সেই মূল্যস্ফীতি আবার ৬ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে গড় মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৩ শতাংশে আটকে রাখার লক্ষ্য ধরেছে সরকার। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে এই লক্ষ্য ধরা ছিল ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। কিন্তু অর্থবছর শেষ হয় ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি নিয়ে। অর্থাৎ বাজেটের লক্ষ্যের চেয়ে খানিকটা বেশি ছিল গড় মূল্যস্ফীতি।
করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করার পর থেকেই বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ছে। তার প্রভাব পড়েছে ছোট-বড় সব দেশে। বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ, এডিবিসহ বিভিন্ন আর্থিক সংস্থা পূর্বাভাস দিচ্ছে, বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যে দেখা যায়, জানুয়ারিতে বাংলাদেশে ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশের যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে, তার মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৬০ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভ‚ত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ২৬ শতাংশ। ডিসেম্বরে ৬ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ সার্বিক মূল্যস্ফীতির মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয় ৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভ‚ত মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৭ শতাংশ।
জানুয়ারিতে শহরের চেয়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতি বেশি হয়েছে। জানুয়ারিতে গ্রামাঞ্চলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে হয়েছে ৬ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। ডিসেম্বরে ছিল ৬ দশমিক ২৭ শতাংশ। একই মাসে শহরাঞ্চলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। ডিসেম্বরে এই হার ছিল ৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
বিবিএসের তথ্যে দেখা যায়, জানুয়ারিতে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে গ্রামে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভ‚ত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ৩২ শতাংশ। আগের মাস ডিসেম্বরে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভ‚ত মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৬ দশমিক ৩২ শতাংশ।
জানুয়ারিতে শহর এলাকায় খাদ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভ‚ত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ। ডিসেম্বরে শহর এলাকায় খাদ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৪ দশমিক ৪১ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভ‚ত মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৭ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।
শহরের চেয়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতি বেশি কেন-এ প্রশ্নের উত্তরে আহসান মনসুর বলেন, আমার কাছেও অবাক লাগে, এটা কেন হয়। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের কারণে এখন অনেক পণ্যই দ্রæত গ্রাম থেকে শহরে চলে আসে। সে ক্ষেত্রে গ্রামে পণ্যের সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিতে পারে। সে কারণে দাম বেড়ে যেতে পারে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ