Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

জমি বিক্রি নয়, ব্যাংক ঋণে বিদেশ যাও : প্রধানমন্ত্রী

মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হার কমেছে ১৯ শতাংশ ব্যক্তিগত গাছ কাটতেও লাগবে অনুমতি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ এএম

নিজের জমিজমা কিংবা ভিটেমাটি বিক্রি বিদেশ যেতে নিরুৎসাহিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিদেশে যেতে জোর অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে বিদেশগামীদের সচেতন করতে ব্যাপকভাবে প্রচার-প্রচারণা চালানোর পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া ভিসার জন্য অতিরিক্ত টাকা না দিতে সতর্ক করেছেন। গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, শ্রমিক নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বিশেষভাবে জোর দেওয়া হয়েছে, কোনোভাবেই যাতে শ্রমিকরা যারা বিদেশে যাবে, আমাদের জনশক্তি, তারা যেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় বা তাদের অধিদফতরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে, কোনোভাবেই যেন তারা এক্সেস না করে অতিরিক্ত টাকা না দেয়। অনেকে না জেনে সরাসরি পেমেন্ট করে দেয়।

খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সেজন্য একটা সাজেশন আছে, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে। তারা প্রমোট করবে, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে যাক। জমি-জমা বিক্রি করে না যেতে, ব্যাংক থেকে লোন নিলে একটা সুবিধা হবে। ব্যাংক কিন্তু তার অ্যাপয়েন্টমেন্ট কনফার্ম না করা পর্যন্ত পেমেন্ট দেবে না। সেক্ষেত্রে সেও কিন্তু একটা সেফটিতে থাকবে। তিনি বলেন, কয়েকজনের স্পেসিফিক আলোচনায় শুনলাম যে মালয়েশিয়াতে গেছে ৩/৪ লাখ টাকা করে দিয়ে, জমি বিক্রি করে; কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে ওই ৪ লাখ টাকা সে ২ বছরেও তুলতে পারেনি। নিঃস্ব হিসেবে ফেরত এসেছে। তাই স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং জমিজমা বিক্রি না করে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার বিষয়ে টেলিভিশন, রেডিও ও সংবাদপত্রে ব্যাপক প্রচার চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

ব্যক্তি মালিকানায় লাগানো বড় গাছ কাটতে সরকারের অনুমতি নেওয়ার বিধান রেখে ‘বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশন আইন, ২০২২-এর খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এছাড়া খুচরা ব্যবসায়ীদের জন্য টেলিগ্রাফিক ট্রান্সফারের (টিটি) মাধ্যমে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির সুযোগ রেখে ‘আমদানি নীতি আদেশ’ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটার মাধ্যমে সব বনাঞ্চলকে প্রটেকশন দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ সব ধরনের বনাঞ্চল রক্ষা করবে এই আইন। সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে লাগানো যে গাছ রয়েছে সেগুলোও এ আইনের আওতায় আসবে। এখানে বুঝতে হবে, স্থায়ী গাছের কথা বলা হয়েছে। লাউ গাছ কাটতে কোনো সমস্যা নেই।

আনোয়ারুল বলেন, মানুষ যারা সাধারণ বাগান করবে বা স্থায়ী যে গাছ লাগাবে, সেগুলোও তারা তাদের ইচ্ছা মতো কাটতে পারবে না। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এরকম নিয়ম আছে। সৌদি আরবে...ইউ ক্যান নট ইমাজিন, আমার বাড়িতে একটি গাছ পড়ে গেছে এটা আমি সিটি করপোরেশন বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কাটতে পারব না। এটা ভারতেও আছে। এটাকে ভালোভাবে ইমপ্লিমেন্ট করতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, আমি যতটুকু জানি, আগেও এরকম একটি প্রভিশন (বিধান) ছিল। এটাকেই একটু সহজ করে কর্তৃপক্ষকে অনুমতি দিতে বলা হয়েছে। কারণ একটা মানুষ বিপদে পড়ল, তার গাছ ভেঙে গেল, এটা যদি ৭ দিন পড়ে থাকে, সময় লাগে অনুমতি নিতে, সেটা হলে তো মুশকিল। তাই এটাকে একটু সহজ করতে বলা হয়েছে, এটা অনলাইনে করা যায় কি-না।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ফরেস্ট ইন্ডাস্ট্রি ডেভেলপমেন্ট অর্ডিন্যান্স ছিল ১৯৫৯-এর। এর আওতায় এটা চলত। সেটাকে হালনাগাদ করে আইন হিসেবে নেওয়া হয়েছিল। অনেকগুলো বিষয় আছে। যেমনÑ এটা একটা করপোরেশন হবে। করপোরেশনের একজন চেয়ারম্যান এবং পরিচালক থাকবেন। তারা এটাকে প্রশাসনিকভাবে দেখবেন। বোর্ড থাকবে সেটা নীতিগত বিষয়গুলো তদারকি করবে। এর কাজ হবে করপোরেশনের অধীনে উৎপাদিত কাঠ বা কাঠের আসবাবপত্র আইনের অধীনে আসবে। করপোরেশনের অধীনে রাবার বাগান থেকে রাবার কীভাবে আহরণ করা যায় এবং উন্নয়ন করা যায় তা এর মধ্যে থাকবে। বনজ সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন কৃত্রিম রাবার পণ্য বন্ধে আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব শিল্প সৃষ্টির বিষয়টি এখানে থাকবে। সংরক্ষিত বনের পাশাপাশি অন্যান্য বনাঞ্চলকেও এই আইনে সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে।

কক্সবাজারে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বিসিএস প্রশিক্ষণ একাডেমির জায়গা বরাদ্দের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিসিএস প্রশিক্ষণ একাডেমির জন্য কক্সবাজারে যে জায়গা দেওয়া হয়েছে সেটা আমি পুরোটা জানি না। এটা জনপ্রশাসন দেখছে। আমি যতটুকু দেখেছি, যে জায়গায় গাছ নেই সেখানে স্থাপনাগুলো হবে।

টিটির মাধ্যমে পণ্য আমদানি : খুচরা ব্যবসায়ীদের জন্য টেলিগ্রাফিক ট্রান্সফারের (টিটি) মাধ্যমে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির সুযোগ রেখে ‘আমদানি নীতি আদেশ, ২০২১-২৪’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। তবে এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করতে পারবেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটা বাণিজ্য নীতিমালা ২০২১-২৪। হয়তো এটা ২০২২-২৫ হয়ে যাবে। এখানে পণ্য আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। কিছু কিছু জিনিস ওপেন করা হয়েছে। টিটির মাধ্যমে পণ্য আমদানি করা সহজ উল্লেখ করে তিনি জানান, এক্ষেত্রে অতো কাগজপত্র লাগে না। আগে টিটির মাধ্যমে ২ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করা যেত। এটাকে বাড়িয়ে এখন ৫ লাখ ডলার করা হয়েছে। আনোয়ারুল বলেন, যারা শিল্পপতি, তারা যেকোনো পরিমাণের জিনিস বা ইকুইপমেন্ট ইনভেস্টমেন্ট করতে পারবেন। কেউ রেফ্রিজারেটরের পার্টসের ব্যবসা করেন, তিনি এলসি করে যেকোনো পরিমাণের পণ্য আনতে পারবেন। কিন্তু টিটির মাধ্যমে ৫ লাখ ডলারের জিনিস আনতে পারবেন। টিটি করে জিনিস আনা খুব সহজ। সেজন্য ৫ লাখ ডলার ছাড় দেওয়া হয়েছে। এটা ব্যক্তিগত ব্যবহার বা ইন্ডাস্ট্রির জন্য না, ব্যবসার জন্য।

এদিকে মন্ত্রিসভার বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার কমেছে প্রায় ১৯ শতাংশ। মহামারির কারণে হার কমেছে উল্লেখ করে এটিকে সন্তোষজনক বলেছে সরকার। ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে ১৯ দশমিক ১ শতাংশ কমেছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। মন্ত্রিসভা বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে ২০২১ সালের চতুর্থ ত্রৈমাসিক অর্থাৎ অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রস্তুত করা প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালে (জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর) মন্ত্রিসভায় ২৫৮টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর মধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে ২৫১টি। বাস্তবায়নের হার ৯৭ দশমিক ২৯ শতাংশ। ২০২০ সালে (জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর) ২৫১টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও ২৩২টি বাস্তবায়ন হয়েছে। বাস্তবায়নের হার ৯২ দশমিক ৪৩ শতাংশ। ২০২১ সালে (জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর) ১৮০টি সিদ্ধান্তের মধ্যে ১৩২টি বাস্তবায়ন হয়েছে। বাস্তবায়নের হার ৭৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে বাস্তবায়ন হার ১৯ দশমিক ১ শতাংশ কমেছে। বাস্তবায়ন কমলেও তাতে সন্তোষ্ট মন্ত্রিসভা। গত বছরের চতুর্থ ত্রৈমাসিকে মন্ত্রিসভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ছিল ৬০ দশমিক ৭১ শতাংশ। যা ২০২০ সালের একই সময়ে ছিল ৫৬ দশমিক ১০ শতাংশ।



 

Show all comments
  • Monir Hood ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ২:৫২ এএম says : 0
    ব্যাংকে লোনের আশায় থাকলে ভিসা আর পাসপোর্টের মেয়াদই শেষ হয়ে যাবে
    Total Reply(0) Reply
  • Mahbub Alam Kazal ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ২:৫২ এএম says : 0
    জমি বিক্রি করতে ঘুষ দেওয়া লাগে না।ব্যাংক ঋণ নিতে হলে ঘুষ দিতে হয়।২/৩ জোড়া জুতা ক্ষয় করতে হয়।তারপর ব্যাংক ঋণ পাওয়া যায়।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Aslam ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ২:৫২ এএম says : 0
    এটা হলে তো ভালো হয়
    Total Reply(0) Reply
  • মিফতাহুল জান্নাত ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ২:৫৩ এএম says : 0
    · কিন্তু কত দিন ঘুরতে হবে।সেই ঋণ পেতে
    Total Reply(0) Reply
  • Saleha Banu ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ২:৫৫ এএম says : 0
    As a result of emphasis on tree planting, the total forest area of the country has increased. The people of Bangladesh are really indebted to the present government.
    Total Reply(0) Reply
  • Sajib GaZi ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ২:৫৬ এএম says : 0
    The "Made in Bangladesh" tag has also brought glory for the country, making it a prestigious brand across the globe.
    Total Reply(0) Reply
  • Takib Jihan ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ২:৫৬ এএম says : 2
    One of the major achievements of the present government is to ensure unprecedented socio-economic development of the country.
    Total Reply(0) Reply
  • Adhora Sana ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ২:৫৬ এএম says : 2
    The present government has always taken a welfare decision for the country and the people of the country.
    Total Reply(1) Reply
    • Harunur Rashid ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৮:৩৭ এএম says : 0
      Welfare for the AL stooges not for the masses. Corruption has increase to a number no one knows. Beating your own drum only fools do.
  • Md Milon ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ২:৫৬ এএম says : 1
    বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর চেহারা প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ