পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়ন দ্রুত করতে গতি বৃদ্ধির নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন দেরি হলে ব্যয় যেমন বারে, তেমনি জনগণও সঠিক সেবা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়। তাই বারবার প্রকল্প সংশোধন বন্ধ করতেও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে নির্দেশনার কথা সাংবাদিকদের জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর ধীর গতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী একনেক সভায় বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। বারবার যেন প্রকল্পগুলো সংশোধনে না আসে সে বিষয়েও নির্দেশনা দেন তিনি।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, একনেক সভায় মঙ্গলবার ১০টি প্রকল্প অনুমোদন পায়। এর মধ্যে পাঁচটি প্রকল্প সংশোধিত এবং পাঁচটি প্রকল্প নতুন। তাই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বারবার কেন প্রকল্পগুলোর সংশোধন করতে হয়। এটা যেন বারবার না হয় সেটা দেখতে হবে। সভায় পাঁচটি সংশোধনী প্রকল্পের মধ্যে একটি তৃতীয় দফায় সংশোধন হয়েছে। নতুন প্রকল্প ও সংশোধিত প্রকল্পের বাড়তি অর্থ মিলে ১০টি প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে ৪ হাজার ৬২১ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী আরও কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী। এছাড়া দেশের বাইরে ইউরিয়া কারখানা স্থাপনেও সম্মতি দিয়েছেন সরকারপ্রধান।
পরিকল্পনামন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ হওয়ায় আমাদের ইউরিয়া সারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু সার উৎপাদন করতে গেলে প্রচুর গ্যাসের প্রয়োজন হয়। যার ফলে মাঝে মাঝে গ্যাসের সঙ্কট দেখা দেয়। এজন্য একনেক সভায় অনেকে বিদেশে কারখানা করে সার উৎপাদনের বিষয়ে আলোচনা করেছেন।’ একনেক সভায়, ৭২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘ইউরিয়া ফরমালডিহাইড-৮৫ প্ল্যান্ট স্থাপন’ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিদেশে সার উৎপাদন করতে বেসরকারি খাত বিনিয়োগ করতে পারবে। বিদেশে উৎপাদিত সেই সার বাংলাদেশের চাহিদা মেটাবে। উদ্যোক্তারা চাইলে বাইরের দেশেও ব্যবহার করতে পারেন। এর মাধ্যমে গ্যাসের সংকট কমবে এবং বিদেশে বিনিয়োগও বাড়বে। তবে দেশের স্বার্থ যেন আগে রক্ষা হয় সেই বিষয়টি উদ্যোক্তাদের নিশ্চিত করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, হাওরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, হাওর এলাকায় পিলারের সাহায্য নিয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করতে হবে। এই জন্য সকল ধরনের পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, হাওরে যেখানে ছোট সেতু দরকার, সেখানে তা করতে হবে। যেন ঠিক মতো পানি চলাচল করতে পারে। চলাচলকৃত নৌকার কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা যেন সৃষ্টি না হয়। খুঁটি দিয়ে ছোট ছোট সেতু বানিয়ে ফেলতে হবে। হাওরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করতে হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, গোপালগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, বরিশাল, রংপুর, জামালপুর এবং যশোর জেলায় বিটাকের ৬টি কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এতেই প্রমাণিত হয় সরকার সারাদেশের সুষম উন্নয়নে বিশ্বাসী। এর মাধ্যমে শিল্প খাতে প্রশিক্ষিত জনবল সৃষ্টির মাধ্যমে আত্ম-কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় বাজারের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির মাধ্যমে শিল্প কারখানায় দক্ষ জনবলের চাহিদা পূরণসহ বেকার জনশক্তির আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এছাড়া ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার অ্যান্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট’ প্রজেক্টের (সিএসএডব্লিউএমপি) আওতায় সিলেট অঞ্চলে কৃষি উন্নয়নও করা হবে। সিলেট অঞ্চলে অনেক জমি পতিত। এসব জমির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একমত। সিলেট অঞ্চলে নানা কারণে অনেক জমি পতিত পড়ে আছে, কোনো ব্যবহার হয় না। জমিগুলো যেন ব্যবহার হয় সেজন্য আমি সিলেটবাসীকে প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রায় জানিয়ে দেবো।
একনেকে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার ১০ প্রকল্প অনুমোদন : ১০টি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৬২১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৩ হাজার ৫৫ কোটি ২১ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে ১ হাজার ৫৬৬ কোটি ১৩ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিফ্রিং করে এসব তথ্য জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। এসময় উপস্থিত ছিলেন ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মামুন-আল-রশীদ এবং আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম।
একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে নেত্রকোনা-বিশিউড়া-ঈশ্বরগঞ্জ সড়ক প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২২০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন ভবন নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৯ কোটি ২১ লাখ টাকা। ১৬টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। শেখ হাসিনা সেনানিবাস বরিশাল স্থাপন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩১ কোটি ১০ লাখ টাকা। ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার অ্যান্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১০৬ কোটি ৮ লাখ টাকা। একনেকে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২০০ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, গাজীপুরের এপ্রোচ সড়ক প্রশস্তকরণ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি ২ লাখ টাকা। ফ্লাড অ্যান্ড রিভারব্যাংক ইরিশন রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮০৩ কোটি ৭ লাখ টাকা। ইউরিয়া ফরমালডিহাইড-৮৫ (ইউএফ-৮৫) প্ল্যান্ট স্থাপন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৭২৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এছাড়া গোপালগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, বরিশাল, রংপুর, জামালপুর এবং যশোর জেলায় বিটাকের ৬টি কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ১৩২ কোটি ৬১ লাখ টাকা।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক; স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম; শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। এছাড়া সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা সভার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন।##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।