Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাতজনের হাতে দুদকের হাতকড়া

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২১ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০৫ এএম

এমবিবিএস পাসের ভুয়া সনদ ব্যবহার করে ডাক্তার হিসেবে রেজিস্ট্রেশন নেয়া কথিত ৭ ডাক্তারকে গ্রেফতার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বুধবার সংস্থার উপ-পরিচালক সেলিনা আখতার মনির নেতৃত্বে একটি টিম তাদের গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, মো. ইমান আলী, সুদেব সেন, তন্ময় আহমেদ, মোক্তার হোসেন, মো. কাওছার, রহমত আলী এবং মাসুদ পারভেজ। তারা চীনের তাইশান মেডিক্যালের এমবিবিএস পাসের ভুয়া সনদ নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা সেবার নামে প্রতারণা করে আসছিলেন।
এর আগে ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বও ভুয়া ১২ চিকিৎসক ও বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রারসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি আসামিদের মধ্যে মাহমুদুল হক নামে একজন হাইকোর্টে আগাম জামিন চাইতে গেলে, আদালত তাকে জামিন না দিয়ে জেলহাজতে পাঠায়। একইসঙ্গে বাকি আসামিদের দ্রুত গ্রেফতারের নির্দেশ দেয় উচ্চ আদালত। আসামিরা হলেন, বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার মো. জাহিদুল হক বসুনিয়া ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিন।
এছাড়া যে ১২ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী চীনের তাইশান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিবিএস পাসের ভুয়া সনদ দেখিয়েছেন তাদেরও আসামি করা হয়। তারা হলেন, কুমিল্লা জেলার মো. ইমান আলী ও মোহাম্মদ মাসুদ পারভেজ, সাতক্ষীরার সুদেব সেন, টাঙ্গাইলের তন্ময় আহমেদ, ভোলার মো. মাহমুদুল হাসান, চাঁদপুরের মো. মোক্তার হোসাইন, ঢাকার মো. আসাদ উল্লাহ, গাজীপুরের মো. কাউসার, নারায়ণগঞ্জের রহমত আলী, বাগেরহাটের শেখ আতিয়ার রহমান, ফেনীর মো. সাইফুর ইসলাম এবং সিরাজগঞ্জের মো. আসলাম হোসেন।
গ্রেফতারের বিষয়ে দুদক সচিব মো. এাহবুব হোসেন বলেন, রেকর্ডপত্র যাচাইকালে দেখা যায় তাদের এমবিবিএস সার্টিফিকেটগুলো ভুয়া। ১২ জন এমবিবিএস ডিগ্রিধারীর সনদ ভুয়া। এমবিবিএস সনদধারী ওই ব্যক্তিরা কখনও চীনের তাইশান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন নি। ডাক্তারের ভুয়া সনদে চিকিৎসার নামে প্রতারণার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলার প্রেক্ষিতে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
এজাহারে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে জালজালিয়াতি ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভুয়া এমবিবিএস সনদ ব্যবহারের মাধ্যমে চিকিৎসক হিসেবে রেজিস্ট্রেশন সনদ গ্রহণ করে। যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ওই ১২ জন বাংলাদেশি ছাত্র চীনের তাইশান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিবিএস পাস করে বলে জানায়। তারা ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুয়া এমবিবিএস সনদ ব্যবহার করে বিভিন্ন তারিখে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল কর্তৃক গৃহীত রেজিস্ট্রেশন যোগ্যতার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। উত্তীর্ণ হয়েছেন এই বলে চিকিৎসক হিসেবে নিবন্ধন নম্বর গ্রহণ কওে দেশের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে ইন্টার্ন অনুশীলন এবং বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত আছেন। রেকর্ডপত্র যাচাইকালে দেখা যায়, তাদের এমবিবিএস সার্টিফিকেটগুলো ভুয়া।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, এমবিবিএস সনদের সঠিকতা যাচাই করার জন্য সনদপত্রগুলোর অনুলিপি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাইশান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠায় দুদক। এর পরিপ্রেক্ষিতে চীনের বেইজিংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে ওই সনদপত্রগুলো যাচাইপূর্বক বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ইস্ট এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক সেকশনে বিগত ২০১৯ সালের ২১ জানুয়ারি দুদকে রেকর্ডপত্র পাঠায়। প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, স্কুল অফ ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন তাইশান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মতে উল্লিখিত ১২ জন এমবিবিএস ডিগ্রিধারীর এমবিবিএস সনদ ভুয়া। এছাড়া সনদগুলোর স্বাক্ষরের সত্যতা পরীক্ষা করার জন্য হস্তলেখা বিশারদের মতামত গ্রহণ করা হয়। তাতেও দেখা যায় যে, সনদের স্বাক্ষরগুলোতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। ওই ১২ জন ভুয়া এমবিবিএস সনদধারী কখনও চীনের তাইশান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেননি। কেউ কেউ কেবলমাত্র ট্যুরিস্ট ভিসায় চীনে গিয়েছিলেন। সে দেশে থাকার সপক্ষে কোনো প্রমাণ তাদের কাছে নেই। সুতরাং তাদের এমবিবিএস ডিগ্রির সনদগুলো ভুয়া।
এদিকে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সার্টিফিকেট যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার সতর্কতা বা নিয়ম-নীতির প্রতিপালন করেনি। বিএমঅ্যান্ডডিসি কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. বোরহান উদ্দিন কর্তৃক প্রার্থীরা যখন তাদের ওইসব ডকুমেন্টস জমা দেন সেগুলো যাচাই করার কথা, তিনি প্রথমে সঠিকতা যাচাই করে রেজিস্ট্রারের কাছে মূল সনদ ও তার ছায়ালিপি উপস্থাপন করেন। তখন রেজিস্ট্রার মো. জাহিদুল হক বসুনিয়া মূল রেকর্ডপত্র দেখে আবার ছায়ালিপিগুলো সত্যায়িত করেন। সে কারণে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সৃষ্ট ডকুমেন্টসগুলো সম্পর্কে তারা জ্ঞাত ছিলেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।



 

Show all comments
  • এস এম আকবর ২০ জানুয়ারি, ২০২২, ৪:১০ এএম says : 0
    এদেরকে ধরছে ঠিক আছে। বড় বড় রাঘব বোয়ালদের ধরবে কে?
    Total Reply(0) Reply
  • কাওসার ২০ জানুয়ারি, ২০২২, ৬:৩২ এএম says : 0
    এদের ক্রসফায়ার করে মেরে ফেলা উচিত
    Total Reply(0) Reply
  • রুহান ২০ জানুয়ারি, ২০২২, ৬:৩২ এএম says : 0
    এদের হাতে যে কত মানুষের জীবন গেছে তার কোন হিসেব নেই
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ