পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের অগ্রগতির অদম্য গতি কেউ থামাতে পারবে না কারণ, এই দেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ হয়ে উঠেছে। এই মর্যাদা বজায় রেখে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে সকলকে একযোগে কাজ করে যাওয়ারও আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। বাংলাদেশের এই অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা আর কখনও কেউ কেউ থামিয়ে দিতে পারবেনা, সেভাবেই বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
গতকাল ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড এন্ড স্টাফ কলেজ (ডিএসসিএসসি) এর ‘ডিএসসিএসসি কোর্স ২০২১-২০২২’ এর গ্রাজুয়েশন প্রদান অনুষ্টানে প্রধান অতিথি’র ভাষণে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মিরপুর সেনানিবাসের শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সের এই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা উন্নত বাংলাদেশ গড়তে চাই, আর ২০৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতার শতবর্ষ আমরা উদযাপন করবো কাজেই আমাদের নবীন ট্রেনিং প্রাপ্ত অফিসারদের কাছে আমার একটাই আবেদন থাকবে, ’৪১ সালের উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার সৈনিক হিসেবে কাজ করতে হবে। সব সময় মাথা উঁচু করে চলতে হবে এবং দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবাসতে হবে এবং দেশের জন্য নিবেদিত প্রাণ হতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, এখন আর বাংলাদেশকে কেউ অবহেলা করতে পারেনা। বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিশ^ দরবারে মর্যাদা পেয়েছে। এই মর্যাদা ধরে রাখতে হবে। ঠিক ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভ করার পর যে সম্মান আমরা আন্তর্জাতিকভাবে পেয়েছিলাম এবং ’৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর যে সম্মান আমরা হারিয়েছিলাম, আজকে আবার আমরা সেই সম্মান পুণরুদ্ধার করতে সমর্থ হয়েছি। সরকার প্রধান আরও বলেন, আমি একটি কথা সকলকে বলতে চাই- এক সময় বাংলাদেশ সম্পর্কে বিদেশে অনেক নেতিবাচক কথা ছিল। তবে, এখনও কিছু কিছু লোক আছে বাংলাদেশ সম্পর্কে বদনাম করতেই বেশি পছন্দ করে। কিন্তু আমাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের ফলে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা এবং দেশের অভ্যন্তরে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে আমরা যে দক্ষতা দেখিয়েছি তার ফলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিশ্বে আজকে উজ্জ্বল হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথাও অনুষ্ঠানে স্মরণ করিয়ে দেন। শেখ হাসনিা বলেন, আমি অনুরোধ জানাচ্ছি করোনার আবার নতুন ভ্যারিয়েন্ট দেখা দিয়েছে। কাজেই সকলে স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলবেন। নিজেকে ও নিজের পরিবারকে সুরক্ষিত রাখবেন।
ডিএসসিএসসি কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল মো. জুবায়ের সালেহীন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।
এবারে প্রতিষ্ঠানটি থেকে ১৮টি দেশের ৪৭ জন বিদেশী কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ পুলিশের ৩ জন কর্মকর্তাসহ মোট ২৫১ জন পিএসসি ডিগ্রী লাভ করেছেন। ‘ডিএসসিএসসি’ এ পর্যন্ত সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর মোট ১২৮টি কোর্স পরিচালনা করেছে এবং ৫ হাজার ৬৮৬ জনকে ডিগ্রি প্রদান করেছে। ৪৩টি দেশের ১ হাজার ২৫৫ জন অফিসার এখান থেকে ডিগ্রি লাভ করেছে।
২০০৮ সাল থেকে পরপর তিনদফা নির্বাচনে জয়লাভের পর প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন যুগোপযোগী সশস্ত্র বাহিনী গঠনের লক্ষ্যে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে বাস্তবায়নের নানাবিধ পদেক্ষেপের উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর আধুনিকায়ন, সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন করছি। ২০১৬ সালে ‘বাংলাদেশ পিস বিল্ডিং সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা করেছি। জাতির পিতা প্রণীত প্রতিরক্ষানীতিকে যুগোপযোগী করে ‘জাতীয় প্রতিরক্ষানীতি, ২০১৮’ প্রণয়ন করেছি। এ্যারোস্পেস ও এভিয়েশন বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি এবং ’৯৬ সালে যখন সরকারে আসি তখনই ‘বিপসট’ প্রতিষ্ঠা করে দেই। পাশাপাশি সিএমএইচগুলোকে অত্যাধুনিক হাসপাতালে রূপান্তরিত করি এবং আরো অনেকগুলো মেডিকেল কলেজ তৈরী করে দেই।
সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ দমনে তাঁর সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণের প্রসঙ্গ টেনে জাতির পিতার রেখে যাওয়া পররাষ্ট্রনীতি- ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়’- এর আলোকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় পুণর্ব্যক্ত করেন তিনি। তিনি বলেন, আমরা আমাদের এই নীতিমালার কারণে সমগ্র বিশ্বে আজ একটা সম্মানজনক অবস্থান সৃষ্টি করতে সমর্থ হয়েছি।
তিনি এ প্রসঙ্গে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশে আশ্রয় প্রদান এবং তাদের মিয়ানমারের নিজ ভূমিতে ফিরে যাবার বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাবার কথাও উল্লেখ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কারো সাথে যুদ্ধ করবো না কিন্তু আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত এলে আমরা চুপ করে থাকবোনা। সেটা নিশ্চয়ই আমরা প্রতিরোধ করবো বা প্রতিবাদ করবো- সেভাবেই আমরা আমাদের সশস্ত্রবাহিনীকে গড়ে তুলেছি।
দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা যে কোন জাতীয় প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ত্যাগ শিকারে প্রস্তুত থাকেন এবং সহযোগিতা করে থাকেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন। আমরা আবারো সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে গৌরবের স্থানটি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের এসডিজি বাস্তবায়নের আলোকে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা এবং ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে নেয়ার প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন । আন্ত:বাহিনী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ডিএসসিএসসি’র উন্নয়নে তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষা-প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে উচ্চমানের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি চাই আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি সদস্য আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন হবে। কেননা আমি সকলের পদবি পরিবর্তন থেকে শুরু করে অনেক কাজ করে দিয়েছি। যাতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমানতালে আমাদের প্রতিটি সদস্য চলতে পারে সে ব্যবস্থাটাই করে দিয়েছি।
নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সঙ্গে ‘সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজ কোর্স ২০২১-২০২২’ সফলভাবে পরিচালনা ও স¤পন্ন করায় প্রধানমন্ত্রী ডিএসসিএসসি কমান্ড্যান্ট এবং সকল অনুষদ সদস্য ও সংশ্লিষ্ট সকলকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
তিনি সকলকে অভিনন্দন জানিয়ে আরো বলেন, সবসময় বিশে^ মাথা উঁচু করে সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে চলার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। কারো কাছে হাত পেতে নয়, আমাদের যা সম্পদ আছে তাই দিয়ে আমরা নিজেদেরকে বিশে^ মর্যাদাশীল করে গড়ে তুলেছি এবং আমরা আরো গড়ে তুলবো, সামনে এগিয়ে যাব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।